বিদেশের মাটিতে প্রথম দেশের পতাকা উত্তোলন

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ বিদেশের মাটিতে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের পতাকা ওড়ানোর দিন আজ।

১৯৭১ সালের ১৮ এপ্রিল দুপুর সাড়ে বারোটায় কলকাতার ৯ নম্বর পার্ক সার্কাস অ্যাভিনিউতে তৎকালীন পাকিস্তান হাইকমিশন দূতাবাসের ডেপুটি হাই কমিশনার হোসেন আলীর নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা প্রথম উত্তোলন করা হয়।

১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল কুষ্টিয়ার বৈদ্যনাথ তলায় (বর্তমান মুজিবনগর) বাংলাদেশের প্রথম সরকার শপথ নেওয়ার পরদিনই কলকাতায় পাকিস্তানের মিশন আত্মপ্রকাশ করে বাংলাদেশ মিশন হিসেবে।

১৮ এপ্রিল কলকাতায় পাকিস্তানের উপ-দূতাবাসে কর্মরত ৭০জন বাঙালি কর্মকর্তা-কর্মচারী বাংলাদেশের আনুগত্য ঘোষণা করেন এবং পাকিস্তানের পতাকা নামিয়ে মিশনের ছাদে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন। এ পতাকা উত্তোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তৎকালীন মিশন প্রধান এম হোসেন আলী। পতাকা উত্তোলনের পর দূতাবাসে কর্মরত পাঁচজন পাকিস্তানী কর্মকর্তা ও তাদের অনুগত ১৫জন কর্মচারী ছাড়া ৭০জন বাঙালি কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়ে এম হোসেন আলী মুজিবনগর সরকারের নির্দেশনায় মিশন পরিচালনা করেন।

পতাকা উত্তোলনের এ ঘটনার পর বিশ্ববাসীর দৃষ্টি পড়েছিল মুক্তিযুদ্ধের ওপর। কলকাতা মিশনের পতাকা উত্তোলন বহির্বিশ্বে আরো কয়েকটি মিশন অনুসরণ করে। এ বিষয়ে ১৯৭১ সালের ১৯ এপ্রিল কলকাতার সব পত্রিকায় সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় যা সারাবিশ্বে সাড়া ফেলে।

হোসেন আলী রোজ নামচায় উল্লেখ করেন, ১৮ এপ্রিল সকাল সাতটায় হাইকমিশনের সব বাঙালি কর্মকর্তা–কর্মচারী মিশনের মধ্যে একত্র হন। এ পর্যন্ত আনুগত্য পরিবর্তনের পরিকল্পনা কর্মকর্তাদের মধ্যেই সীমিত ছিল। হোসেন আলীর কাছ থেকে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলনের ঘোষণা শুনে কর্মচারীদের অনেকেই দ্বিধান্বিত হয়ে পড়েন। পরিস্থিতি সামাল দিতে হোসেন আলী দুই দফা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য সচিবের সঙ্গে দেখা করেন। এদিকে সকাল থেকে বিএসএফের মহাপরিচালক কে এফ রুস্তমজী, ডেপুটি ডিরেক্টর গোলাক মজুমদার ও রাজ গোপাল, মেজর জেনারেল নরেন্দর সিং দলবলসহ মিশনের আশপাশে গোপনে অবস্থান নিয়ে চারদিকে সতর্ক নজর রাখছিলেন। মিশনের মধ্যে সিদ্ধান্তহীনতা দেখে তারাও অস্থির হয়ে পড়েন। এভাবেই দুপুর প্রায় ১২টা বেজে যায়।

এরই মধ্যে শুরু হয় প্রচণ্ড ঝড়-বৃষ্টি। ঝড়ের দাপটে মিশনের ছাদে টাঙানো পাকিস্তানের পতাকা ছিঁড়ে ঝুলে পড়ে। এ ঘটনা হোসেন আলীর জন্য শাপে বর হয়ে দেখা দেয়। তিনি সব দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাটিয়ে দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে পাকিস্তানের পতাকা নামিয়ে বাংলাদেশের পতাকা মিশনের ছাদে টাঙিয়ে দেন।

পতাকা ওড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বিএসএফের সদস্যরা মিশনের নেমপ্লেট সরিয়ে বাংলাদেশের নেমপ্লেট লাগিয়ে ফেলেন। হোসেন আলী তার অফিস কক্ষ থেকে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ও কবি ইকবালের ছবি নামিয়ে শেখ মুজিবুর রহমান ও কবি নজরুল ইসলামের ছবি টাঙান।

বেলা একটার সময় হোসেন আলী সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, ‘এখন থেকে আমি আর পাকিস্তানের ডেপুটি হাইকমিশনার নই। আমি এখন বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি। আমার বাংলাদেশ সরকার যে নির্দেশ দেবে, আমি সেইমতো কাজ করব।’

দলে দলে মানুষ মিশনে আসতে শুরু করেন এবং হোসেন আলী, বেগম হোসেন আলী ও মিশনের কর্মকর্তাদের অভিনন্দন জানাতে থাকেন।

সূত্র: শাহ মতিন টিপু

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts