২৬ এপ্রিল, ইতিহাসের এই দিনে

ওস্তাদ আয়েত আলী খাঁর জন্মদিন

 

উচ্চাঙ্গসংগীতের এক অবিস্মরণীয় নাম ওস্তাদ আয়েত আলী খাঁ। তিনি বারিষ, হেমন্তিকা, আওল-বসন্ত, ওমর-সোহাগ, শিব-বেহাগ, বসন্ত ভৈরো প্রভৃতি রাগের স্রষ্টা। বিশুদ্ধ রাগসংগীতের প্রসারে তিনি কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ‘আলাউদ্দিন মিউজিক কলেজ’ নামে দুটি সংগীত প্রতিষ্ঠান স্থাপন করে গেছেন।

বিশুদ্ধ সংগীতের ধারক ওস্তাদ আয়েত আলী খাঁর জন্মদিন আজ। ১৮৮৪ সালের ২৬ এপ্রিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার শিবপুর গ্রামের বিখ্যাত সংগীত পরিবারে তার জন্ম।

ছোটকালেই তার সংগীতে হাতেখড়ি। ১০ বছর বয়সে আয়েত আলী অগ্রজ ফকির আফতাবউদ্দিন খাঁর কাছে তালিম গ্রহণ শুরু করেন। টানা সাত বছর চলে এ সাধনা। এরপর তিনি ভারতের মাইহারে গিয়ে অন্য অগ্রজ আলাউদ্দিন খাঁর কাছে তালিম নেন। প্রথমে তিনি সেতার, এরপর সুরবাহার শেখেন। আয়েত আলীর বাদনে মুগ্ধ হয়ে মাইহারের মহারাজ অগ্রজ আলাউদ্দিন খাঁর পাশেই তার আসন নির্দিষ্ট করেন।

পরে ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ রামপুরে নিজ গুরু ওস্তাদ ওয়াজির খাঁর কাছে পাঠান আয়েত আলী খাঁকে। অনেক ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার পরীক্ষা দিয়ে তিনি ওস্তাদ ওয়াজিরের শিষ্যত্ব লাভ করেন। গুরুর আদেশে কর্মজীবন শুরু করেন মাইহার রাজ্যে সভাবাদক হিসেবে। সেখানে দুই ভাই ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর তত্ত্বাবধানে প্রাচ্য দেশীয় বাদ্যযন্ত্র দিয়ে একটি অর্কেস্ট্রা দল গঠন করেন। তারা প্রমাণ করেন, ভারতীয় কনসার্ট পশ্চিমা অর্কেস্ট্রার চেয়ে কম নয়।

১৯৩৫ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আমন্ত্রণে তিনি শান্তিনিকেতনে যান এবং বিশ্বভারতীর যন্ত্রসংগীত বিভাগের প্রধান পদে যোগ দেন। দুই ভাই মিলে একটি বাদ্যযন্ত্রের কারখানা করেন ‘আলম ব্রাদার্স’ নামে। তারা সরোদ যন্ত্রের আধুনিক রূপ প্রদানের পাশাপাশি ‘চন্দ্র সারৎ’, ‘মন্ত্রণাদ’ ও ‘মনোহরা’ নামে বাদ্যযন্ত্রের উদ্ভাবক।

জীবনে তিনি বহু পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। এরমধ্যে রয়েছে- গভর্নর পদক, পাকিস্তান সরকারের ‘তমঘা-ই-ইমতিয়াজ’ খেতাব, রাষ্ট্রীয় পুরস্কার ‘প্রাইড অব পারফরম্যান্স’, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি (মরণোত্তর) ও স্বাধীনতা দিবস পুরস্কারে (মরণোত্তর) তিনি ভূষিত হয়েছেন। ১৯৬৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর তিনি ইন্তেকাল করেন।

তার স্ত্রী উমার উন-নেসা। সম্প্রতি প্রয়াত হওয়া সংগীত ব্যক্তিত্ব মোবারক হোসেন খান তারই সন্তান। ছয় ভাইবোনের মধ্যে মোবারক হোসেন খান সবার ছোট। তাঁর বড় তিন বোন আম্বিয়া, কোহিনূর ও রাজিয়া এবং বড় দুই ভাই প্রখ্যাত সংগীতজ্ঞ আবেদ হোসেন খান ও বাহাদুর হোসেন খান।

মোবারক হোসেন খানও ১৯৮০ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি থেকে প্রকাশ করেন তার প্রথম সংগীতবিষয়ক বই ‘সংগীত প্রসঙ্গ’। পরবর্তীতে সংগীত ও শিশুবিষয়ক ৫০টি গ্রন্থ রচনা করেন। ১৯৯২-১৯৯৬ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনিও সংগীত ব্যক্তিত্ব হিসেবে একুশে পদক (১৯৮৬), স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার (১৯৯৪) ও বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন ।

ঢাকা/শাহ মতিন টিপু

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts