সব হারানো মীমের পাশে দাঁড়ালেন সাংবাদিক এনায়েত ফেরদৌস

চারদিন আগেও আদরের দুলালী ছিল নয় বছর বয়সী মীম; আজ তার পৃথিবী অন্ধকারময়। গত সোমবার মাদারীপুরের শিবচরে (পদ্মায়) নৌ-দুর্ঘটনায় পিতা-মাতা ও দুই বোনকে হারিয়ে আজ নিঃস্ব, রিক্ত। অবুঝ শিশু মীমের অনিশ্চিত জীবনের অন্ধকার ঘোঁচাতে আলোকবর্তিকা হয়ে এগিয়ে এসেছেন তেরখাদার কৃতিসন্তান সাংবাদিক এনায়েত ফেরদৌস।

পরিবার হারানো মীমের সব দায়িত্ব নিতে ইতোমধ্যে কয়েকধাপ এগিয়ে গেছেন তিনি। গতকাল বুধবারও শিশু মীমের স্বাস্থ্য পরীক্ষাসহ বিশেষ চিকিৎসককে দেখিয়েছেন তিনি। কিনে দিয়েছেন ঈদবস্ত্র। শিশুটি বর্তমানে রয়েছেন তার নানা-নানীর কাছে- সেখানে নগদ অর্থ দিয়েছেন সাংবাদিক এনায়েত ফেরদৌস। এভাবে এগিয়ে আসাকে মানবিকতার উজ্জল দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখছেন এলাকাবাসী। গত মঙ্গলবার শিশু মীমের পিতা মনির শিকদার (৩৮), মা হেনা বেগম (৩৬) ও ছোট বোন সুমি খাতুন (৭) ও রুমি খাতুন (৪) কে দাদী লাইলা বেগমের পাশেই দাফন করা হয়। এ পরিবারে জীবিত একমাত্র মীম-ই। শোকাহত স্তব্ধ মীমের পাশে স্নেহের পরশ নিয়ে দাড়িয়েছেন সাংবাদিক এনায়েত ফেরদৌস। ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত এ সাংবাদিকের জন্মস্থান খুলনার তেরখাদার ছাগলাদহ ইউনিয়নের ইছামতি গ্রাম। বাংলাদেশের ইলেকট্রনিক্স জায়ান্ট ওয়ালটন গ্র“পের মিডিয়া উপদেষ্টার দায়িত্বে আছেন তিনি। মীমের বাড়ি তেরখাদা উপজেলার সদর ইউনিয়নের পারখালী গ্রামে। সাংবাদিক এনায়েত ফেরদৌস বলেছেন, এটা মানবিকতার বিষয়।

শুধু মীমকে নয়, আমার এলাকার গরীব, এতিম, অসুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করি। আমি চাই, আমার এলাকার একজন মানুষও যেন অভুক্ত না থাকে। কারও বাচ্চা যেন দুধের জন‌্য কষ্ট না পায়। বিনাচিকিৎসায় কেউ যেন মারা না যান। কিংবা কারও ঘরে যেন বর্ষার পানি না যায়। আর মীম তো আমার এলাকায় মেয়ে। নৌ দুর্ঘটনায় সে সব হারিয়েছে। এমন অসহায় একটা মেয়ের দায়িত্ব আমি কাঁধে তুলে নিয়েছি। তাকে আমি আমার সন্তানের মতো মানুষ করতে চাই। তিনি আরও বলেন, আমি চেয়েছিলাম মীমকে আমার বাসায় রেখে আমার একমাত্র ছেলে যেভাবে মানুষ হচ্ছে, তাকেও সেভাবে মানুষ করতে। কিন্তু তার স্বজনরা চেয়েছেন তাদের কাছে রাখতে। মীম যেখানে স্বাচ্ছন্দ্যে থাকতে পারবে সেখানে থাকবে। তার প্রতিদিনের খাবার থেকে শুরু করে তার পোশাক, পড়ালেখার খরচ যা যা লাগে সব আমি দেবো। তার বিয়ে দেয়ার দায়িত্বও আমার। তাকে মানুষের মতো মানুষ করতে চাই। তার যে মা-বাবা নেই সেই অভাব যেন বুঝতে না পারে, আমি সেই চেষ্টা করবো। কোনো বাচ্চাকে দত্তক নিতে হলে আইনি প্রক্রিয়া মানতে হয়। কিন্তু আমার জানা মতে, এখানে সাহায্য করার জন্য কোনো আইনি প্রক্রিয়া মানতে হবে না। আর যেহেতু মীম তার স্বজনদের কাছেই থাকছে।

প্রসঙ্গত্ব, গত ১ মে রাতে খুলনায় মীমের দাদী লাইলী বেগম ইন্তেকাল করেন। সেই খবর পেয়ে পরিবারের সবাই ঢাকার মিরাপুর সাড়ে ১১নং এলাকা থেকে খুলনায় যাচ্ছিলেন। কিন্তু পদ্মা নদীতে স্পিডবোট দুর্ঘটনায় দাদীর লাশ দাফনের আগে পরিবারের সবাইকে হারায় মীম। এই দুর্ঘটনায় নিহত হন মীমের বাবা মনির মিয়া (৩৮), মা হেনা বেগম (৩৬), বোন সুমী আক্তার (৫) ও রুমি আক্তার (৩)। বেঁচে আছে শুধু মীম। গত ৩ মে সকালে শিবচর উপজেলায় বাংলাবাজার ফেরিঘাটে বালুবাহী বাল্কহেডের সাথে স্পিডবোটের সংঘর্ষ হয়। এতে প্রাণ হারান ২৬ জন; অল্পের জন্যে প্রাণে বেঁচে যান ৫জন।

সূত্র: নতুন সকাল

Print Friendly

Related Posts