যার স্নেহ অবারিত শুধুই সন্তানের জন্য, বিশ্ব বাবা দিবস আজ

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ যার স্নেহ অবারিত শুধুই সন্তানের জন্য। বাবা সন্তানের মাথার ওপর বটবৃক্ষের মতো। বাবা মানে নির্ভরতা। বাবা নিখাদ আশ্রয়। উত্তপ্ত সূর্যের তলে সন্তানের শীতল ছায়া। বাবা মানে ভরসা। আবার বাবা শাশ্বত, বাবা চির আপন।

বিশ্ব বাবা দিবস আজ। প্রতিবছর জুন মাসের তৃতীয় রোববার বিশ্ব বাবা দিবস পালন করা হয়। সে হিসেবে এ বছর ২০ জুন বিশ্ব বাবা দিবস।

বাবার প্রতি সন্তানের চিরন্তন ভালোবাসার প্রকাশ প্রতিদিনই ঘটে। তারপরও বাবার জন্য বিশেষ দিন হিসেবে প্রতি বছর দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।

হাদীসে আছে- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহর সন্তুষ্টি পিতার সন্তুষ্টিতে এবং আল্লাহর অসন্তুষ্টি পিতার অসন্তুষ্টিতে নিহিত।’ (তিরমিযি-১৮৯৯)।

সনাতন ধর্মমতে, ‘পিতা স্বর্গ, পিতা ধর্ম, পিতাহী পরমং তপঃ, পিতরী প্রিতিমাপন্নে প্রিয়ন্তে সর্বদেবতা’ এর অর্থ হচ্ছে- পিতা স্বর্গ, পিতাই ধর্ম, পিতাই পরম তপস্যা। পিতাকে খুশি করলে সকল দেবতা খুশি হন।

মায়েদের পাশাপাশি বাবারাও যে তাদের সন্তানের প্রতি দায়িত্বশীল- এটা বোঝানোর জন্যই এই দিবসটির প্রচলন। পৃথিবীর সব বাবার প্রতি শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা প্রকাশের ইচ্ছা থেকে যার শুরু।

এই নিয়ে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়- মা দিবস কয়েকশো বছর ধরে পালন করা হচ্ছে, কিন্তু সেই তুলনায় বাবা দিবসটি অনেক নতুন। দিবসটি সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম চালু হয়েছে এবং এর শুরু নিয়ে বেশ কয়েকটি গল্প আছে।

সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং সম্ভবত গ্রহণযোগ্য গল্পটি হলো, ওয়াশিংটনের সোনোরা লুইস স্মার্ট নামের একজন নারী এই দিন উদযাপন শুরু করেন। ষষ্ঠ সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে তার মা মারা গেলে তার বাবা পরিবারটিকে বড় করে তোলেন।

১৯০৯ সালে সোনোরা গির্জার একটি বক্তব্যে মা দিবসের কথা জানতে পারেন। তখন তার মনে হলো, বাবার জন্যেও এরকম একটি দিবস থাকা উচিত।

স্থানীয় বেশ কয়েকজন ধর্মযাজক তার এই আইডিয়াটি গ্রহণ করেন। ধারণা করা হয়, ১৯১০ সালের ১৯ জুন প্রথমবারের মতো বাবা দিবসটি পালন করা হয়, যদিও তা আনুষ্ঠানিক ছিল না।

১৯৬৬ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি. জনসন সিদ্ধান্ত নেন যে, প্রতি বছর জুনের তৃতীয় রবিবার বাবা দিবস হিসাবে পালন করা হবে। ছয় বছর পর এটিকে আইনে পরিণত করেন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন।

যার বাবা নেই একমাত্র সে-ই জানে বাবা না থাকার বেদনা। ‘বাবা’ শব্দটি পৃথিবীর সর্বত্র নিখাঁদ ভালবাসার সাথে উচ্চারিত হয়। নানাদেশে ভাষা অনুযায়ী বাবাকে একান্ত নিজস্ব ভাষায় ডেকে থাকে সন্তানেরা।

বাংলাদেশেও আমরা চারপাশে তাকালেই দেখতে পাবো বাবাকে নিয়ে মধুর মধুর সম্বোধন। কেউ ডাকে আব্বা, কেউ আব্বু, কেউ বাবা, কেউ বাবু, কেউ পাপা- এভাবে নানা নিজস্ব সম্বোধনে ডাকে তার প্রিয় পিতাকে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও তেমনি বাবাকে ডাকার নিজস্ব ভাষা রয়েছে। যেমন- জার্মান ভাষায় বাবা শব্দটি হচ্ছে ‘ফ্যাট্যা’ আবার ড্যানিশ ভাষায় হচ্ছে ‘ফার’। আফ্রিকান ভাষায় ‘ভাদের’, চীনে ভাষায় চীনারা ‘বাবা’ কেটে ‘বা’ বানিয়ে নিয়েছে।

ক্রী (কানাডিয়ান) ভাষায় বাবা হচ্ছেন ‘পাপা’, ক্রোয়েশিয়ান এ ‘ওটেক’, ব্রাজিলিয়ান পর্তুগিজ ভাষায় বাবা ডাক হচ্ছে ‘পাই’। ডাচ ভাষায় পাপা, ভাডের আর পাপাই এই তিনটি হচ্ছে বাবা ডাক।

সবচাইতে বেশী প্রতিশব্দ বোধহয় ইংরেজি ভাষাতেই! ইংরেজরা বাবাকে ডাকেন, ফাদার, ড্যাড, ড্যাডি, পপ, পপা বা পাপা। ফিলিপিনো ভাষায় বাবা হচ্ছেন তাতেই, ইতেই, তেয় আর আমা। হিব্রু ভাষায় বাবা হচ্ছে ’আব্বাহ্’।

হিন্দি ভাষায় পিতাজী, ইন্দোনেশিয়ান ভাষায় বাপা কিংবা আইয়্যাহ, জাপানি ভাষায়- ওতোসান, পাপা। পুর্ব আফ্রিকায় অবশ্য বাবাকে ‘বাবা’ বলেই ডাকা হয়। হাঙ্গেরিয়ান ভাষায় পাপা ছাড়াও বাবা শব্দের অনেকগুলো প্রতিশব্দ আছে, যেমন- আপা, আপু, এদেসাপা।

‘কাটে না সময় যখন আর কিছুতে/বন্ধুর টেলিফোনে মন বসে না/জানলার গ্রিলটাতে ঠেকাই মাথা/মনে হয় বাবার মতো কেউ বলে না/ আয় খুকু আয়, আয় খুকু আয়…।’ হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ও শ্রাবন্তী মজুমদারের গাওয়া এই গানটি সন্তানদের এক অসীম নস্টালজিয়ায় ডুবিয়ে দেয়।

পৃথিবীর সকল বাবাদের জন্য শুভেচ্ছা।

 

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts