নভেম্বরে এসএসসি, ডিসেম্বরে এইচএসসি পরীক্ষা

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ করোনাভাইরাস মহামারী পরিস্থিতির উন্নতি হবে ধরে নিয়ে মাধ্যমিক (এসএসসি) ও উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) পর্যায়ের পরীক্ষা যথাক্রমে নভেম্বরে ও ডিসেম্বরে নেওয়ার পরিকল্পনা করছে সরকার।

শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের উদ্বেগের মধ্যে বৃহস্পতিবার (১৫ জুলাই) ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এসে সরকারের এই পরিকল্পনার কথা জানান শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।

তিনি বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের মাধ্যমে নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে এসএসসি পরীক্ষা ও ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়া হবে।

পরীক্ষা নেওয়ার এই পরিকল্পনার পেছনের বিবেচনা তুলে ধরে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “গত বছর নভেম্বর, ডিসেম্বর, জানুয়ারিতে আমাদের সংক্রমণের হার অনেক কমে এসেছিল। এ বছর টিকা প্রদান আবার শুরু হয়ে গেছে, দেশব্যাপী টিকা প্রদান চলবে এবং ব্যাপক হারে রেজিস্ট্রেশনও চলছে।

“আমাদের টিকারও এখন কোন ঘাটতি থাকছে না। আশা করি, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ব্যাপক সংখ্যক জনগোষ্ঠীর মধ্যে টিকা প্রদান সম্ভব হবে। আমরা আশা করছি, নভেম্বর-ডিসেম্বরে সংক্রমণ হার হয়তবা গত বছরের মত বা তারও চেয়ে কম হবে।”

দীপু মনি বলেন, “কোভিড-১৯ পরিস্থিতি অনুকূল হলে সীমিত পরিসরে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের আলোকে গ্রুপভিত্তিক শুধুমাত্র ৩টি নৈর্বাচনিক বিষয়ের ওপর পরীক্ষার সময় ও নম্বর দুটিই হ্রাস করে পরীক্ষা গ্রহণ করতে আমরা পারব বলে আশা করছি।

“সে অনুযায়ি এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার জন্য নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ এবং এইচএসসি ও সমমানের জন্য ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।”

করোনাভাইরাসের কারণে গত বছরের মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় কয়েক দফা উদ্যোগ নিয়েও এই সময়ে শিক্ষার্থীদের শ্রেণীকক্ষে ফেরানো যায়নি।

ফলে মহামারীকালে কোন পাবলিক পরীক্ষায়ও বসতে পারেনি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা।

গত বছর মহামারীর আগে এসএসসি পরীক্ষা হয়ে গেলেও এইচএসসি পরীক্ষার আয়োজন করতে পারেনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

পরে জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ‘অটোপাস’ দেওয়া হয়।

এবার শুরু থেকেই ‘অটোপাস’ না দেওয়ার কথা বলে আসছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

যেভাবে পরীক্ষা নেওয়া হবে:

এর আগে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা নিতে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য যথাক্রমে ৬০ ও ৮৪ দিনে শ্রেণিকক্ষে ক্লাস নেওয়ার পরিকল্পনা জানিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

তবে বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় শিক্ষার্থীদের গ্রুপভিত্তিক তিনটি নৈর্বাচনিক বিষয়ের ওপর অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে শিখন ফল অর্জনের বিষয়ে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্যই অ্যাসাইনমেন্টগুলো দেওয়া হবে বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী।

তিনি জানান, এসএসসি বা সমমানের অ্যাসাইনমেন্ট ১৮ জুলাই থেকে দেওয়া শুরু হবে। প্রতি সপ্তাহে দুটি করে ১২ সপ্তাহে মোট ২৪টি অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হবে। প্রতিটি নৈর্ব্যচনিক বিষয়ের ওপর ৮টি করে অ্যাসাইনমেন্ট করতে হবে শিক্ষার্থীদের।

২৬ জুলাই থেকে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া শুরু হবে। সপ্তাহে দুটি করে ১৫ সপ্তাহে মোট ৩০টি অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হবে।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “এইচএসসির ৩টি নৈর্বাচনিক বিষয় এবং যেহেতু দুটি করে পত্র আছে, সেজন্য মোট ছয়টি পত্রে তারা ৩০টি অ্যাসাইনমেন্ট করবেন। অর্থাৎ প্রতিটি পত্রে ৫টি করে অ্যাসাইনমেন্ট করবেন।”

মূল্যায়নের ক্ষেত্রে আবশ্যিক বিষয়গুলো বাদ দেওয়ার যুক্তিও তুলে ধরেন দীপু মনি।

সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “যেগুলো আবশ্যিক বিষয় এসএসসির ক্ষেত্রে যেমন- বাংলা, ইংরেজি, গণিত, আইসিটি, ধর্ম; এইচএসসির ক্ষেত্রেও বাংলা, ইংরেজি- সেই আবশ্যিক বিষয়গুলো বা চতুর্থ যে বিষয় সেই বিষয়গুলোর কোনো অ্যাসাইনমেন্ট আমরা দেব না।

“এসএসসি, এইচএসসির শিক্ষার্থীরা তাদের জেএসসি, এসএসসি বা সমমান পরীক্ষায় আবশ্যিক বিষয়গুলো পড়ে এসেছে। এই বিষয়গুলো পূর্ববর্তী পরীক্ষায় মূল্যায়নও হয়েছে। কিন্তু নৈর্ব্যচনিক বিষয়গুলোর মূল্যায়ন বোর্ডগুলো করেনি, তাই এই বিষয়গুলোর মূল্যায়ন আবশ্যক।”

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “আবশ্যিক বিষয়গুলোর নম্বর জেএসসি বা সমমান পরীক্ষার সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমেও এসএসসি বা সমমান পরীক্ষার নম্বর প্রদান করা সম্ভব। মূল্যায়ন হয়ে গেছে, তাই এই বিষয়গুলোর মূল্যায়ন আমরা এ বছর করব না। আমরা শুধুমাত্র নৈব্যচনিক বিষয়গুলো- যেগুলোর মূল্যায়ন আগে হয়নি, সে বিষয়গুলোর মূল্যায়ন করব।

“গতবছর এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল দিতে গিয়ে আমরা যেভাবে সাবজেক্ট ম্যাপিং করেছি, সেই একই পদ্ধতি অনুসরণ করে এই আবশ্যিক বিষয়গুলোর মূল্যায়ন করা হবে। এছাড়াও উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে যেহেতু গ্রুপভিত্তিক বিষয়গুলোর মূল্যায়নের প্রয়োজন রয়েছে, সে কারণেও এই গ্রুপভিত্তিক বিষয়ের মূল্যায়ন করা জরুরি। যেমন- বিজ্ঞান গ্রুপের ক্ষেত্রে পদার্থ, রসায়ন, জীববিজ্ঞান।”

অ্যাসাইনমেন্টগুলোর মূল্যায়ন কতটা সঠিক হচ্ছে সেটিরও মূল্যায়নের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী।

সেজন্য সারাদেশে দৈবচয়ন পদ্ধতিতে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মূল্যায়নের কপি এনে সেগুলো পুনঃমূল্যায়ন করা হবে।

“আমরা যদি দেখি যথেষ্ট ভালভাবে এগুলোর মূল্যায়ন হচ্ছে, তাহলে অ্যাসাইনমেন্টের ফলাফল থেকেও ফলাফলে কিছুটা অংশ যাবে। আর যদি সেই মূল্যায়ন যথাযথ না হয়- তাহলে আমরা শুধুমাত্র সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে করব” বলেন শিক্ষামন্ত্রী।

ঈদুল আজহার পর অনলাইনে পরীক্ষার ফরম পূরণ শুরু হবে। পরীক্ষার ফিও নেওয়া হবে অনলাইনে। আবশ্যিক বিষয়গুলো মূল্যায়নের বাইরে থাকায় ফিও কমিয়ে দেয়া হবে। এসব বিষয়ে শিক্ষাবোর্ডগুলো দ্রুত নির্দেশনা জানাবে।

এবার পরীক্ষার সময় থাকবে তিন ঘণ্টার পরিবর্তে দেড় ঘণ্টা। এছাড়া ১০০ নম্বর পরীক্ষা কমিয়ে ৫০ নম্বরের করা হবে।

প্রশ্ন তৈরিতেও শিক্ষার্থীদের বেশি বিকল্প রাখা হবে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “আগে যেখানে ১০টি প্রশ্ন থেকে ৮টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হত, এবার সেখানে হয়ত ৩/৪টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।”

এছাড়া কারিগরির ক্ষেত্রে নবম ও একাদশ শ্রেণির পাবলিক পরীক্ষাগুলো সম্পন্ন হবে। অনিয়মিত পরীক্ষার্থীরা নিয়মিত পরীক্ষার্থীদের মত এসব পরীক্ষায় অংশ নিবেন।

“আবশ্যিক বিষয়ের ক্ষেত্রে পরীক্ষার্থী হলে ফলাফল সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে হয়ে থাকবে। আর নৈব্যচনিক বিষয়ের ওপর হলে তারাও এই পরীক্ষায় অংশ নিবেন। মানোন্নয়নের পরীক্ষার্থীরা নৈব্যচনিক বিষয়ের ওপর অংশ নিতে পারেবেন।”

কোভিড-১৯ পরিস্থিতির অবনতি হলে পরীক্ষা গ্রহণ করা সম্ভব না হলে বিকল্প মূল্যায়ন করার পরিকল্পনাও জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী।

দীপু মনি বলেন, “সার্বিক বিবেচনায় যদি তখন পরীক্ষা গ্রহণ সম্ভব না হয়, সেক্ষেত্রে জেএসসি বা সমমানের ভিত্তিতে তাদের সাবজেক্ট ম্যাপিং করে বা অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে অথবা শুধুমাত্র সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে এসএসসি, এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হবে।”

Print Friendly

Related Posts