খান মাইনউদ্দিন, বরিশাল: মহামারি করোনা কেড়ে নিয়েছে মানুষের রুজি রোজগার করার উপায়টুকুও।
বরিশালের পত্রিকার হকার মো. ফুলমিয়া হাওলাদার (৭০) প্রায় ২০ বছর ধরে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে কোন মতে ভাড়া থাকেন বরিশালের রসুলপুর। ৪ সদস্যের পরিবারের তিনিই একমাত্র উপার্জনক্ষম। বাড়ি ভাড়া দেন ১৫০০ টাকা। গত ৩-৪ মাসের ভাড়া এখন পর্যন্ত দিতে পারেননি।
একেতো বৃদ্ধ বয়স, আবার ওদিকে করোনায় শেষ করে দিয়েছে পত্রিকায় হকারি করে খাওয়ার উপায়টুকুও।
করোনায় জীবন কিভাবে চলছে জানতে চাইলে কেঁদে ফেলেন।
বলেন, বাবা করোনার আগে মোটামুটি দুইটা ডাল ভাত খেয়ে ভালোই ছিলাম। আগে দৈনিক ২০০-২৫০ টাকা কামাই করতে পারতাম। আর এখন কোন মতে ১০০-১৫০ টাকার পেপার বিক্রি করি। তাতে ২০-৩০ টাকা থাকে। এক কেজি চাউলের পয়সা পর্যন্ত কামাই করতে পারিনা। আর করোনার কারণে পেপারও অনেকে কিনতে চায়না। তাহলে কিভাবে সংসার চলে। যেদিন একটু পেপার বেশি বেচতে পারি সেদিন দুই বেলা খাই। এছাড়া একবেলা কোন মতে খাইয়া না খাইয়া আছি।
নিজের গ্রামের বাড়ি আছে কিনা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আমার কোন গ্রামের বাড়ি নাই। তবে রসুলপুরে একটু সরকারি জায়গায় একটা ঘর উঠাইছিলাম। তাও ভূমিদস্যুরা দখল করে নিয়ে গেছে।
আপনি বয়স্ক ভাতা পাননা? বললেন, আগে পাইতাম এখন আর পাইনা।এইবার ঈদে সরকার যে ২৫০০ করে টাকা দিছে, তাও পাই নাই।
আক্ষেপ করে তিনি বললেন, আমি যে আগে রসুলপুরে সরকারি জমিতে থাকতাম ওই জমিটুকু যদি ভূমিদস্যুদের কাছ থেকে এনে বরিশালের মেয়র মহোদয় ও জেলা প্রশাসক আমাকে দিত তাহলে শেষ বৃদ্ধ বয়সে আমি পরিবার, পরিজন নিয়ে দুইটা মোটা চাউলের ভাত খেয়ে থাকতে পারতাম। অন্তত আমার ঘর ভাড়াটা দেয়া লাগতো না।
এই বিষয়ে আলাপকালে বরিশাল শহীদ আ. রব সেরনিয়াবাত প্রেসক্লাবের সভাপতি, এ্যাড. ইসমাইল হোসেন নেগাবান (মন্টু) বলেন, করোনার কারণে বরিশালের পত্রিকার হকারেরা খুবই দুর্বিষহ জীবন যাপন করতেছে। শুধু তাইনা, এরা পত্রিকার মালিকদের কাছ থেকে এবং গ্রাহকদের কাছ থেকেও ভালো ব্যাবহার পায়না এবং সঠিক পারিশ্রমিক ও পায়না।