খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র.)’র জীবন ও কর্মনিয়ে আন্তর্জাতিক সেমিনার

তাঁর জীবনাদর্শ সাধারণ মানুষের কাছে অনুকরণীয় ও অনুসরণীয়

 

খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা’র চাকরী জীবন, সাহিত্য সাধনা ও ব্যক্তিজীবন সাধারণ মানুষের কাছে অনুকরণীয় ও অনুসরণীয়।

উপমহাদেশের প্রখ্যাত সুফীসাধক, দার্শনিক, শিক্ষাবিদ ও সমাজ সংস্কারক হজরত খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র.)-এর জীবন ও কর্ম নিয়ে ৪ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টায় আয়োজিত এক আন্তর্জাতিক সেমিনারে বক্তারা একথা বলেন।

তারা আরও বলেন, তিনি তাঁর দর্শনকে প্রায়োগিক রূপ দিতে ১৯৩৫ সালে নলতা কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশন প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে দেশ ও দেশের বাইরে এর শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়।

খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লার বক্তব্য উল্লেখ করে বলেন, “আমার (খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা) জীবনের মূখ্য উদ্দেশ্য, সকল শ্রেণি ধর্ম ও জাতি নির্বিশেষে প্রেমসূত্রে আবদ্ধ করিয়া মহাপ্রভূর উদ্দেশ্য সাধন।

ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন ও নলতা কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশনের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এ সেমিনারের সভাপতিত্ব করেন ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের প্রেসিডেন্ট কাজী রফিকুল আলম।

স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন নলতা কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশনের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ এনামুল হক।

প্যানেল আলোচক হিসেবে ঢাকা ওয়াসার সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. ইঞ্জি. কাজী আলী আজম বলেন, হজরত খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা বলেছেন, ডাক্তারের ছেলেকে ডাক্তার হতে গেলে তাকে যেমন ডাক্তারি পাস করে ডাক্তার হতে হয়, তেমনি আল্লাহর ও রাসুলের দিদার লাভ করে কেবল মুর্শিদের মাধ্যমে বেলায়েতি অর্জন করতে পারে। মুরিদ আর মোর্শেদ হলো আশেক আর মাসুকের ঘনিষ্ঠতম সম্পর্ক।

তিনি আরও বলেন, ইসলামের জন্য কোরআন, খ্রিস্টানদের জন্য বাইবেল, হিন্দুদের জন্য গীতা, ইহুদীদের জন্য তাওরীত, বৈদ্ধদের জন্য ত্রিপিটক ও শিকদের জন্য গুরুসাহেব। এই সর্বধর্মের সারমর্ম, নির্যাশ ও মূলবক্তব্য নিয়ে খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা তাঁর সেবার মূল দর্শন নির্ধারণ করেন। এবং সেটা হলো স্রষ্টার এবাদত ও সৃষ্টের সেবা।

বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য্য এমিরেটার্স প্রফেসর ড. এম. শমসের আলী খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লার উদ্ধৃতি উল্লেখ করে বলেন, পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ট সুফী ছিলেন হযরত মোহাম্মদ (স.) এবং আর তাছাওফের সর্বশেষ্ঠ মূল গ্রন্থ হলো আল কোরআন।

আত্মা একটা স্বচ্ছ দর্পণস্বরূপ। পাপ করিলে আত্মা স্বাভাবিক নির্মলতা দুরীভূত হয়। উহাতে কালিমা জন্মে তখন উহাতে ঐশী রশ্মি প্রতিফলিত হয়না। এর উপায় অনুতাপ, লজ্জা ও তওবা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণী বিজ্ঞান বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আবু তৈয়ব আবু আহমেদ বলেন, খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র.) তরিকতকে খোদা প্রাপ্তির পথ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র.) উদ্ধৃতি উল্লেখ করে বলেন, সকল ইবাদতের মূখ্য উদ্দেশ্য আল্লাহ তালার সন্তুষ্টি অর্জন করা। শরীয়ত ও তরীকত হলো ইসলামের দুটি বড় অঙ্গ। শরীয়ত হলো বহিরঙ্গ এবং তরীকত হলো অন্তরঙ্গ। তরীকতই ইসলামের নির্যাস।

ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে আয়োজিত এই সেমিনারে অস্ট্রেলিয়া, জাপান, মধ্যপ্রাচ্য, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ভারত ও পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লার অনুসারীরা সংযুক্ত হন। এবং উন্মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।

এছাড়াও নলতা কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশনের সভাপতি ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ.ফ.ম রুহুল হক এমপি, ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের সাধারণ সম্পাদক ড. এস.এম খলিলুর রহমান, আহ্ছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ফাজলী ইলাহী ও ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধান এবং প্রতিনিধিগণ অংশগ্রহণ করেন।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ঢাক আহ্ছানিয়া মিশনের নির্বাহী পরিচালক ড. এম. এহ্ছানুর রহমান।

উল্লেখ্য, খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা’র দর্শন ও কর্মসম্পর্কে আলোচনা ধারণ করা এবং বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যেই এই সেমিনারের আয়োজন।

সূত্র: মো. সাইফুল ইসলাম, জনসংযোগ কর্মকর্তা, ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন

Print Friendly

Related Posts