করোনার প্রথম বছর আত্মহত্যা বেড়েছে

করোনাকালে মানসিক স্বাস্থ্য বিপর্যয় আর এক মহামারিতে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মতে, করোনার প্রথম বছর আত্মহত্যা বেড়েছে ১৭ দশমিক ৩৬ শতাংশ।

বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস আজ। প্রতি বছর ১০ই সেপ্টেম্বর আত্মহত্যা প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে বিশ্বের অনেক দেশে ২০০৩ সাল থেকে দিবসটি পালন করা হয়। দিবসটি পালন করতে আন্তর্জাতিক আত্মহত্যা প্রতিরোধ সংস্থার সঙ্গে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বৈশ্বিক মানসিক স্বাস্থ্য ফেডারেশন একসঙ্গে কাজ করে। ২০১১ সালে অনুমনিক ৪০টি দেশ এই দিবসটি উদযাপন করে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘কর্মের মাধ্যমে আশা তৈরি করা’।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মতে, ২০২০ সালে ১১ হাজার ২৫৯ জন আত্মহত্যা করে। ব্যুরোর এর আগের বছরের হিসাবে অর্থাৎ ২০১৯ সালে ৯ হাজার ৩১০ জন আত্মহত্যা করে। সরকারের হিসাবে করোনাকালে ১৭ দশমিক ৩১ শতাংশ আত্মহত্যার ঘটনা বেড়েছে ।

তরুণদের সংগঠন আঁচল ফাউন্ডেশনের এক গবেষণায় দেখা যায়, করোনাকালে এক বছরে দেশে ১৪ হাজার ৪৩৬ জন নারী-পুরুষ আত্মহত্যা করেছেন। ২০১৯ সালের বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যের সঙ্গে তুলনা করে সংগঠনটি জানায়, করোনাকালে ৪৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ আত্মহত্যার ঘটনা বেড়েছে।

চিন্তা রিসার্চ বাংলাদেশ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের গবেষণায় দেখা যায়, করোনা ভীতি এবং সামাজিক অবস্থা—এই দুই কারণে বেশি মানুষ আত্মহত্যা করে। এই যৌথ গবেষণা কাজের অন্যতম গবেষক মোহাম্মদ এ মামুন বলেন, তাদের গবেষণায় দেখা যায় করোনার শুরুর সময় করোনাজনিত আত্মহত্যার ঝুঁকি বাড়ে ৫ শতাংশ। এপ্রিল মাসে অর্থাৎ একমাস পরে এই ঝুঁকি বাড়ে ৬ দশমিক ১ শতাংশ। এপ্রিল-মে মাসে ঝুঁকি বাড়ে ১২ দশমিক ৮ শতাংশ এবং জুলাইয়ে গিয়ে আত্মহত্যার ঝুঁকি বাড়ে ১৯ শতাংশ। তবে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ-এ আত্মহত্যার প্রবণতা কিছুটা কমে আসে।

ব্রাইটার টুমরো ফাউন্ডেশন (বিটিএফ) জানায়, বিশ্বে ও আমাদের দেশে আত্মহত্যা ও আত্মহত্যা প্রবণতা ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলেছে। বিশ্বে প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একজন মানুষের মৃত্যু হচ্ছে আত্মহত্যায়। ১৪ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের মৃত্যুর দ্বিতীয় বৃহত্তম কারণ আত্মহত্যা। কিন্তু প্রতিরোধে তেমন কোনো সচেতনতামূলক পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি।

বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে ব্রাইটার টুমরো ফাউন্ডেশন (বিটিএফ)-আগস্ট মাসব্যাপি আত্মহত্যা প্রতিরোধমূলক ছোটগল্প, প্রবন্ধ ও পোস্টার ডিজাইনিং প্রতিযোগিতা-২০২১-এর আয়োজন করে। আজ ১০ সেপ্টেম্বর, শুক্রবার সকাল ৯টায় ইকোনোমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) হলে (পল্টন টাওয়ার, তৃতীয় তলা, কালভার্ট রোড, পুরানা পল্টন) বিটিএফ এক আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। এছাড়া দূরের বন্ধুদের অংশগ্রহণের সুবিধার্থে অনুষ্ঠানটি ভার্চুয়ালিও পরিচালিত হবে।

১০ সেপ্টেম্বর ভার্চুয়াল ও অফলাইনের এই আলোচনা সভা ও পুরস্কার ঘোষণার অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য ও বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)-এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ও বিশেষ অতিথি থাকবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সৈয়দ আজিজুল হক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ডা. অরূপ রতন চৌধুরী।

অনুষ্ঠানে মুখ্য আলোচক থাকবেন বিশিষ্ট মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ।

এ ছাড়া দিবসটি উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃহস্পতিবার মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-নির্দেশনা ও পরামর্শদান দপ্তর এবং অ্যাডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের যৌথ উদ্যোগে বৃহস্পতিবার ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র চত্বরে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান, জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মিহির লাল সাহা, ছাত্র-নির্দেশনা ও পরামর্শদান দপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. মেহ্‌জাবীন হক।

Print Friendly

Related Posts