আরিফুল ইসলাম, টাঙ্গাইল প্রতিনিধি: টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার বিলপাড়ার চমচম। যার নাম শুনলেই জিভে পানি আসে। অতুলনীয় স্বাদ আর গন্ধের কারণে দেশে ব্যাপক সুনাম রয়েছে টাঙ্গাইলের বাসাইলের বিলপাড়ার চমচমের।
বাসাইল উপজেলা সদর থেকে চার কিলোমিটার দক্ষিণে বিলপাড়া বাজার। বাজারের পূর্ব পাশে একটি দু’চালা টিনের ঘরেই তৈরি হয় নেওয়াজ আলীর এই সুস্বাদু মিষ্টি। পেছনে মিষ্টি তৈরির কারখানা। প্রতিদিন আট থেকে দশ মণ দুধ কিনেন মিষ্টির জন্য। দুধ, চিনি, পানি, এলাচ, দারুচিনিসহ বেশ কয়েক ধরণের মসলা দিয়ে তৈরি করেন মিষ্টি। তবে এর বাইরে গোপন কোন রহস্য আছে কিনা সে ব্যাপারে তিনি কিছু বলেননি।
বাঙালির যেকোনো শুভকাজ বা সংবাদে মিষ্টির ব্যাবহার অনেক পুরনো ঐতিহ্য। বিয়ে-শাদী, পরীক্ষা পাসের খবর, সন্তান জন্মগ্রহণ, কোনো কিছুর শুভ সূচনা বা উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, অতিথি আপ্যায়ন ও মিলাদ মাহফিলের মতো অনুষ্ঠানের খাদ্য তালিকার অগ্রভাগে থাকে মিষ্টি। চমচম, সন্দেশ, রসগোল্লা, মতিচূঁড়, কালোজাম, রসমালাই, পানতোয়া, বালিশ, আমিত্তি, জিলাপি, রাজভোগ, ক্ষীরমোহন, ভূবনেশ্বর, লাড্ডু, কাঁচাগোল্লা এমন সব বাহারি নামের মিষ্টি পাওয়া যায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। শুধু নামেই নয়, আকৃতি আর স্বাদ-গন্ধেও রয়েছে এদের ভিন্নতা। অনেকের মতে টাংগাইলের বিলপাড়ার চমচমই হলো মিষ্টির রাজা।
জনপ্রিয়তা আর স্বাদের দিক দিয়ে তাই বিলপাড়ার চমচমের সুখ্যাতি সর্বজনবিদিত!
জানা যায়, বিদেশ গমনকারী টাঙ্গাইলের প্রবাসীরা নেওয়াজ আলীর মিষ্টি সাথে নিয়ে যাচ্ছে।দেখতে অনেকটা লম্বাটে আকৃতি আর শরীরে মাওয়া জড়ানো মিষ্টির নাম চমচম। হালকা আঁচে পোড় খাওয়া এই মিষ্টির রঙ বাদামি । বাহিরটা একটু শক্ত হলেও এর ভেতরটা কিন্তু একদম রসে ভরপুর। একেবারে মাত্রা মতো মিষ্টি, ঘন রস আর টাটকা ছানার গন্ধমাখা বিলপাড়ার এই মিষ্টির স্বাদ সত্যি অতুলনীয়।
গাঢ় বাদামি বা লালচে রঙের এই সুস্বাদু চমচমের উপরিভাগে চিনির গুঁড়ো আর মাওয়া জড়ানো থাকে। এর ভেতরের অংশ বিশেষ কায়দায় করা হয় ফাঁপা ও রসাল নরম। খাঁটি মানের চমচম পাওয়া যায় বিলপাড়া বাজারের মিষ্টির দোকানগুলোতে। নেওয়াজ আলি মিষ্টান্ন ভান্ডার এদের মধ্যে অন্যতম।
বিলপাড়ার চমচম তৈরির অভিজ্ঞ কারিগরদের মতে- চমচমের গুণগত মান আর স্বাদ মূলত পানি এবং দুধের উপরই নির্ভরশীল। এখানে এ দু’টি মৌলিক শর্ত পূরণ হয় বলে এ মিষ্টি স্বাদে, গন্ধে, তৃপ্তিতে অতুলনীয়। তাছাড়া এ চমচমের বিশেষ বৈশিষ্ট হলো ভেতরেটা ফাঁপা। অন্য সব মিষ্টির মতো ভরাট নয়। আর চমচমের গায়ে জড়ানো মাওয়া হতে হবে একদম খাঁটি। এসবে কোনো ছাড় দেওয়া মানেই তার স্বাদ হয়ে যাবে ভিন্ন।
সর্বোপরি বিলপাড়ার চমচম তৈরিতে রয়েছে বিশেষ টেকনিক বা কলাকৌশল। যা একমাত্র বিলপাড়ার গুটি কয়েক পরিবারের লোকেরাই ভালোভাবে রপ্ত করেছেন। তার মধ্যে নেওয়াজ আলী অন্যতম।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নেওয়াজ আলী সহ আরোও কয়েকজন মিলে মিষ্টি তৈরির কাজ করছেন।দুপুরের সময় হলেই যেনো ব্যস্ত হয়ে পড়েন মিষ্টি তৈরিতে।
মিষ্টির ক্রেতা রাকিব হাসান বলেন, আত্মীয় বাড়ি বেড়াতে গেলে আমি নেওয়াজ আলীর সুস্বাদু মিষ্টি ক্রয় করে নিয়ে যায়।সবাই তার মিষ্টির প্রংশসা করে।খেতেও খুবই সুস্বাদু।বেশি মিষ্টি কিনতে হলে আগেই বলে দিতে হয়।
মিষ্টি ক্রেতা শামীম হোসেন বলেন,বিলপাড়ার নেওয়াজ আলীর মিষ্টি আমার খুব প্রিয়।দূর দূরান্ত থেকে অনেকেই বিলপাড়ার মিষ্টির জন্য আসে।আমি বিলপাড়ার নেওয়াজ আলীর মিষ্টি কিনতে এসেছি।
সখীপুর থেকে আসা মিষ্টির ক্রেতা সজিব মিয়া বলেন, আমি প্রায় বিলপাড়া মিষ্টির জন্য আসি।আত্নীয় স্বজন নেওয়াজ আলীর মিষ্টি খুবই পছন্দ করেন।
এ ব্যাপারে নেওয়াজ আলী বলেন, আমি প্রায় ৩০ বছর যাবত মিষ্টির দোকান করে আসছি।অনেকেই মিষ্টির জন্য আগেই বলে রাখে।আমার তৈরি চমচম আল্লা তায়ালার রহমতে জনপ্রিয়তা পাওয়ায় দেশ- বিদেশেও যাচ্ছে।আমার জন্য সবাই দোয়া করবেন আমি যেন সবার মাঝে এ জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে পারি।