শাহীন গোলদার: সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলায় প্রতাপনগরের খোলপেটুয়া নদীর উথাল-পাতাল ঢেউ যেন হঠাৎ থমকে গেল। কানে শোনা গেল এক নতুন অতিথির কান্নার স্বর। বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখলেন সবাই।
মিনারা খাতুন ভাসমান নৌকায় জন্ম দিয়েছেন একটি ছেলে সন্তান। তিনি মা হয়েছেন। ছেলের নামও রেখেছেন ওমর ফারুক।
আনন্দে আত্মহারা ইয়াকুব-মিনারা দম্পতি যেন হাতে পেলেন একফালি চাঁদ। ভরা জোয়ারে নৌকাটি যখন পানির তোড়ে দুলছিল, তখনই আলোর মুখ দেখল শিশুটি। মা মিনারা খাতুনের চোখেমুখে হাসি। সদ্যজাত শিশুর চাঁদমুখ যেন তাঁর সব কষ্ট ধুয়ে মুছে নিয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) বিকেলে এই শিশুটি জন্ম নেয় সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার ইয়াশ ও আম্ফানের প্রভাবে সৃষ্ট জলাবদ্ধ ইউনিয়ন প্রতাপনগরের খোলপেটুয়া নদীতে।
শিশুটির বাবা জেলে ইয়াকুব আলী বলেন, হাতুড়ে ডাক্তার বলেছিল, প্রসব হতে আরও কদিন সময় লাগবে। এর আগেই আমি ছেলের বাবা হয়েছি।
তিনি আরও বলেন, একদিকে টাকাকড়ি হাতে নেই। তার ওপর যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই খারাপ। বউটারে যে ভালো ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাব, সে সক্ষমতাও নেই আমার। আম্পান আর ইয়াশ আমাদের সবকিছু কেড়ে নিয়েছে।
কান্নাভেজা কন্ঠে ইয়াকুব আলী বলেন, ঘরবাড়ি হারিয়ে নৌকার উপর ৭ সদস্যের পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন উপকূলীয় এলাকার ইয়াকুব আলী। খোলপেটুয়া নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত গোটা এলাকা। ভাঙনের কবলে ঘরবাড়িও বিলীন হয়ে গেছে পরিবারটির। নিরুপায় হয়ে বসবাস করছেন মাছ ধরা নৌকার উপর। সেখানেই সন্তান জন্ম দিয়েছেন ইয়াকুবের স্ত্রী মিনারা খাতুন।
স্থানীয় মৎস্যজীবী ইয়াকুব আলী বলেন, আট মাস ধরে এই নৌকায় আমার সাত সদস্যের পরিবারের বসবাস। নিরুপায় হয়ে আমি, আমার মা, স্ত্রীসহ অন্যদের নিয়ে আশ্রয় নিয়েছি নৌকায়। নৌকায় থাকি, নৌকায় খাই। এটাই আমাদের বসতঘর। এরই মধ্যে আমাদের জীবনে এল এই সন্তান। ওর নাম রেখেছি- ওমর ফারুক। মা ও ছেলে দুজনেই সুস্থ আছে।
আশাশুনি উপজেলায় প্রতাপনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন বলেন, নৌকার উপর সন্তানের জন্ম হচ্ছে, তবে উপলব্ধি করুন মানুষ কতটা কষ্টে রয়েছে। বন্যতলা বেড়িবাঁধ ভেঙে পুরো এলাকা প্লাবিত। বন্যতলার ওই এলাকাটি প্রতাপনগর ইউনিয়ন ও শ্যামনগর উপজেলার পদ্মপুকুর ইউনিয়নের সীমান্ত এলাকা।
তিনি বলেন, লোকালয় দিয়েই জোয়ারভাটা খেলা করছে। বসতভিটা হারিয়েছে হাজারো মানুষ। বাধ্য হয়েই কেউ বেড়িবাঁধের উপর কেউবা নৌকায় বসবাস করছেন।