কামড়ে দেওয়া স্বভাব, তাই ৯ বছর ধরে খাঁচায়

সুকান্ত বিশ্বাস: কামড়ে দেওয়া শিশুটির স্বভাব, তাই ৯ বছর ধরে খাঁচায় বন্দী করে রাখা হয়েছে তাকে। কবে নাগাদ তার এই বন্দীত্ব শেষ হবে, তা কেউ জানেনা।

শিশুটির নাম শিখা রানী দাস। বয়স এখন ১১। রাজবাড়ী জেলার কালুখালী উপজেলার মাঝবাড়ি ইউনিয়নের পুর্ব ফুল কাউন গ্রামের বাসিন্দা মদন ও চন্দনা দম্পতির প্রথম সন্তান শিখা। জন্মগ্রহণের ১বছর পর তার পরিবার বুঝতে পারে শিশুটি অস্বাভাবিক।

সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, ২০১০ সালের মার্চ মাসে জন্ম শিখার। জন্মের পর থেকে যে কেউ তাকে কোলে নিলেই কামড়ে দিতো সে। আবার জন্মের পরই হামাগুড়ি দেওয়া শুরু তার। চলে যেতো এক স্থান থেকে অন্যত্র। শিশুটিকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য গ্রাম্য কবিরাজ থেকে শুরু করে দেশে এবং ভারতে বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরেছে বাবা-মা। কিন্তু লাভ হয়নি। উপরন্তু শিশুটির চিকিৎসা করাতে জমানো টাকা ও পৈত্রিক সম্পত্তি সবই শেষ করে বাবা মদন দাস।

পরে অর্থাভাবে চিকিৎসা করাতে না পেরে শিশুটিকে প্রথমে শিকল দিয়ে বেঁধে ও পরে খাঁচাবন্দী করে রাখা শুরু করে পরিবার। এখন প্রতিদিন ১৫০ টাকার ওষুধ লাগে তার।

নয় বছর ধরে খাঁচায় বন্দী জীবন কাটানো এই বাক-শ্রবণ ও শারীরিক প্রতিবন্দী শিশুটির চিকিৎসা করাতে গিয়ে তার সর্বশান্ত পরিবার এখন সরকারসহ সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আশার আহ্বান জানিয়েছেন।

শিখার বাবা মদন কুমার দাস বলেন, শিশুটিকে নিয়ে আমাদের দুঃখের অন্ত নেই। যেখানে দরিদ্রতার কারণে আমার সংসার চালানোই কষ্টসাধ্য, সেখানে কেমন করে ওর চিকিৎসা করাবো।

তিনি বলেন, সরকারিভাবে একটি প্রতিবন্দী কার্ড করে দেওয়া হয়েছে। যাতে তিন মাস অন্তর অন্তর পান ২১ শত টাকা করে। এতো সামান্য টাকা দিয়ে তার ব্যয় বহন করা কষ্টসাধ্য। তবে, সে টাকাও পাচ্ছেন না নিয়মিত। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরের পর আর কোন টাকা পাননি তারা।

এ বিষয়ে জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রুবাইয়াত মো. ফেরদৌসের সঙ্গে কথা বললে তিনি বিষয়টি তদন্ত করবেন বলে জানান। শিখা যাতে নিয়মিত তার ভাতা পায় সে বিষয়টিও নিশ্চিতের কথা বলেন।

মা চন্দনা রানী বলেন, স্বামী সেলুনে কাজ করে যা পায় তা দিয়েই চলে আমাদের ৬ জনের সংসার। মেয়েটির অসুস্থতার চিকিৎসার জন্য সর্বস্ব খুইয়ে ভারত গিয়েও কোন লাভ হয়নি। এখন মেয়েটিকে খাঁচায় আটকে রেখে আমাদের কাজ করতে হয়। ওর কাছ থেকে সরে গেলে মলমূত্রত্যাগ ত্যাগ করে জায়গাটি নষ্ট করে ফেলে। ক্ষুধা লাগলেও বলতে পারে না। নিজের কোন অনুভূতি প্রকাশ করতে পারে না। যখন রেগে যায় তখন নিজেই নিজের শরীর কামড়ে ঘা করে ফেলে।

শিখার প্রতিবেশি কাকি জানান, বাচ্চাটা এমনিতে কাউকে কখনো বিরক্ত করে না। ওর জন্য আমাদের কোন সমস্যার সৃষ্টি হয় না। তবে এরকম অবস্থায় এই ছোট বাচ্চাকে দেখলেই কষ্ট লাগে।

শিশুটির এই সমস্যা নিয়ে জেলার সিভিল সার্জন ডা. মো. ইব্রাহিম টিটন বলেন, মাতৃগর্ভে থাকা অবস্থায় মস্তিষ্কের পূর্ণাঙ্গ বিকাশ না হওয়ায় শিশুটির এসকল সমস্যা দেখা দিয়েছে। শিশুটির শতভাগ সেরে ওঠা সম্ভব না হলেও দেশেও তার চিকিৎসা সম্ভব। বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোসাইন্স বিভাগে তার চিকিৎসা করালে সে অনেকটা সুস্থ হয়ে উঠবে।

এ বিষয়ে কালুখালী উপজেলার নির্বাহী অফিসার মো. ইসমাইল হোসেনের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, বর্তমান সরকার সকল শ্রেণী পেশার মানুষের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করছে। তারই ধারাবাহিকতায় শিশুটিকে একটি কার্ড করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ওই শিশুটির পরিবার আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে জেলা প্রশাসন থেকে চিকিৎসা সহায়তাসহ সব ধরনের সহায়তা করা হবে।

Print Friendly

Related Posts