গাজীপুরের সাফারি পার্কের নিঃসঙ্গ হোয়াইট পেলিক্যান

রফিক সরকার: ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রের হ্রদ ও সাগরের কাছাকাছি জায়গায় জলজ পাখি গ্রেট হোয়াইট পেলিক্যানের বসবাস। ২০১৪ সালে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো বিশাল আকারের এই পাখিটির আগমন ঘটে। তখন মাত্র দু’টি হোয়াইট পেলিক্যান আনা হয়।

পাখি দু’টির স্থান হয় গাজীপুরের শ্রীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান সাফারি পার্কে। ২০১৭ সালের প্রথম দিকে অসুস্থ হয়ে স্ত্রী হোয়াইট পেলিক্যানটি মারা যায়। এরপর থেকেই নিঃসঙ্গ জীবন কাটতে থাকে পুরুষ হোয়াইট পেলিক্যান। এরই মধ্যে ৪ বছর পেরিয়ে গেলেও সঙ্গী জোটেনি তার।

সোমবার (১৩ ডিসেম্বর) সকালে হোয়াইট পেলিক্যানের নিঃসঙ্গতা নিয়ে কথা বলেন শ্রীপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তবিবুর রহমান।

তিনি বলেন, পুরুষ হোয়াইট পেলিক্যানের সঙ্গীটি অসুস্থ হয়ে মারা যায় ২০১৭ সালে। এরপর ৪ বছর ধরে নিঃসঙ্গ রয়েছে পুরুষ হোয়াইট পেলিক্যান পাখিটি। পুরুষ পাখিটির একটি সঙ্গী হলে প্রজননের একটি সম্ভাবনা সৃষ্টি হতো। তবে নিঃসঙ্গ এই পাখিটিকে কেন্দ্র করে সাফারি পার্কে আগত পর্যটকরা ভালোই বিনোদন পাচ্ছে বলে জানান সাফারি পার্কের ওই কর্মকর্তা ।

পার্কের বন্যপ্রাণী পরিদর্শক আনিছুর রহমান বলেন, সাফারি পার্কের ধনেশ অ্যাভিয়ারিতে হোয়াইট পেলিক্যানটির বসবাস। প্রায় এক একর আয়তনের এ জায়গার চারদিক দিয়ে বেষ্টনী তৈরি করা। মূলত, এখানেই তার দিনগুলো অতিবাহিত হচ্ছে। কখনো একাকী চুপচাপ বসে থাকা, আবার কখনো উড়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা এসবই তার সারা দিনের রুটিনে লিপিবদ্ধ। এছাড়া সে দর্শনার্থীদের নানাভাবে কসরতও দেখায়। শিশুসহ অনেকেই দেশে অপরিচিত এ পাখিকে দেখে আলাদা বিনোদন পায়।

তিনি আরও বলেন, স্ত্রী সঙ্গীটি মারা যাওয়ায় পুরুষ এ হোয়াইট পেলিক্যান পাখিকে দৈনিক দেড় কেজি করে ছোট রুই মাছ দেওয়া হয়। এখন পর্যন্ত এ পাখির তেমন কোনো শারীরিক সমস্যা তৈরি হয়নি। ভিনদেশি হলেও এ পাখিটি বাংলাদেশের পরিবেশের সঙ্গে ভালোভাবেই মিশে আছে।

জানা গেছে, হোয়াইট পেলিক্যান মূলত জলের পাখি। বড় ঠোঁটের জন্য এরা বিখ্যাত। ঠোঁটের নিচে চামড়ার থলি থাকে, যার মধ্যে এরা খাবার জমিয়ে রাখে। মাছ এদের প্রধান খাদ্য। জলাশয়ের ধারে শিকারের সন্ধানে এদের বসার ভঙ্গি খুবই বৈচিত্র্যময়। এ পাখি প্রায় দেড় মিটার লম্বা। এদের পা ছোট। আঙ্গুলগুলো পরস্পরের সঙ্গে চামড়া দিয়ে জোড়া লাগানো। তবে খাবার শিকারের সময় এরা পানিসহ মাছ উঠিয়ে নেয়। পরে মাছকে নিজের থলিতে ঢুকিয়ে পানিগুলো ফেলে দেয়। পানিতে ভালো সাঁতারও কাটতে পারে এ হোয়াইট পেলিক্যান। এ পাখি ঝাঁক তৈরি করে ভ্রমণ করে। এখন পর্যন্ত বিশ্বে আট প্রজাতির হোয়াইট পেলিক্যানের দেখা মেলে। প্রজননের সময় এরা মূলত গাছে বাসা তৈরি করে এবং ১ থেকে ৪টি ডিম দেয়। ২৮ থেকে ৩৬ দিনে ডিম থেকে ছানার জন্ম হয়। বিশাল আকারের পাখি হলেও এরা ঘণ্টায় ৬০ মাইল বেগে উড়তে পারে।

 

Print Friendly

Related Posts