আতাতুর্ক কামাল পাশা
বইমেলায় অনেক নতুন বই এসেছে ইতোমধ্যে। বৃহস্পতিবার (৩ মার্চ) বিকেলে বাংলা অ্যাকাডেমি মঞ্চে বশীর আলহেলাল ভাইয়ের ওপর আলোচনা চলছে। তিনি আজ নেই। একসময় তাঁর সাথে আলাপ ছিল। অ্যাকাডেমিতে তাঁর বসবার রুমে একসময় বেশ কিছু পেপার কাটিং আমার হাতে তুলে দিয়ে বলেছিলেন, সেগুলোর আলোকে একটা কিছু লিখতে। খুব ঠান্ডা, খুব ভালো মানুষ ছিলেন তিনি। লেখা হয়নি, আজো সে ক্লেশ বয়ে বেড়াই মনে।
জানা গেল, এবার ৭৮৩টি ইউনিটে ৫৩৪টি প্রতিষ্ঠান বই সাজিয়েছে। প্যাভেলিয়ান হয়েছে ৩৬টি। বাংলা অ্যাকাডেমির মাঠ আর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান মিলে অ্যাকাডেমিরই ১০ প্যাভেলিয়ান রয়েছে। তবে চারপাশে খোলা থাকলে সেটিকে চার ইউনিট ধরে একটি প্যাভেলিয়ান গণনা করা হচ্ছে, এমনটি বলছিলেন, অ্যাকাডেমীর রিসিপশানকর্মী মোছাঃ সাবিনা ইয়াসমীন।
বৃহস্পতিবারই বইয়ের মোট মোড়ক উন্মোচন হয়েছিল ৩০৩টি বইয়ের। কারণ, একটা নির্দিষ্ট সময় পর নতুন বই এলে পরদিনে জন্য বুকিং দিয়ে রেখে দেয়া হয়। প্রতিটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করার জন্য অ্যাকাডেমিকে ২০০ টাকা ফী দিতে হয়।
এদিন মেলায় নতুন বই এসেছে ১০৮টি। মেলায় আজদিন পর্যন্ত নতুন বই এসেছে ১,৮১৭টি। তবে এর বাইরে যে অন্য কোন বই আসে না তা নয়, অনেক লাইব্রেরী বা প্রকাশক নতুন বই আনেন, কিন্তু মোড়ক উন্মোচনের জন্য দেন না। গত মেলাগুলোতেও এমনটি দেখেছি। তবে শেষের সপ্তাহে নতুন বই আসার হিড়িক পড়ে যায়।
খুঁজতে শুরু করলাম আমার এক বান্ধবী হীরেমতিকে। এমন দুর্ভাগ্য তার সেলনম্বর নেই জানা। এনরয়েড সেটে এই ফাঁকে ডিসপ্লে নষ্ট হয়ে গেল। প্রকাশনীর নামটাও মনে পড়ছে না। ঢাকা মেট্রোপলিটান পুলিশ, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন, রেনেসা স্টলের চারধারে ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম। রেনেসাঁয় এসেছে নতুন ১৩টি বই। ম্যাগাজিন কর্নারে এলাম । বেশ সুন্দর পরিপাটি স্টলগুলো, বছরের সেরা লিটিল-ম্যাগগুলো নিয়ে বসে আছেন সবাই। ওপারে চলে গেলাম। প্রায় সন্ধ্যে হয়ে এসেছে, স্টল আর প্যাভেলিয়ানগুলো ঝলমলে আলোয় উজ্জ্বল হয়ে উঠল। লেকের কিনারজুড়ে বসেছে টীন বন্ধু-বান্ধবীরা। অনেকে সেলফি তুলছে। বন্ধুদের দিয়ে বান্ধবী নিজের ছবি তুলছে। সুন্দর কলকাকলীতে বইমেলা প্রাঙ্গণ ভরে উঠেছে।
বাচ্চাদের নিয়ে বাবা মায়েরাও এসেছেন। অনেকেই বই কিনছেন। তবে বই কেনার দলে বেশ কিছু তরুণ তরুণী বা ছাত্র ছাত্রীও দেখলাম যা বেশ আনন্দ দিল। হুমায়ূন আহমেদ নেই কিন্তু এখনো বর্তমার প্রজন্মের বইয়ের প্রতি কিছুটা হৃদবেগ দেখলাম। মনে হল, ভারী বিষয়ের বই বিক্রি হচ্ছে কিছুটা কম। কবিতা বা উপন্যাসই বেশি বিক্রি হচ্ছে। অনেক স্টলেই বঙ্গবন্ধুর জীবনী আর রাজনীতির ওপর বই প্রকাশ হয়েছে দেখলাম। সন্ধ্যের পরও গোটা সোহরাওয়ার্দী স্টলগুলোর সামনে দিয়ে চক্কর দিলাম। অক্ষর প্রকাশনীতে সেদিন পর্যন্ত এসেছে মোট ১৭টি নতুন বই। বইমেলা সত্যিকারভাবে সবার প্রাণের মেলা হয়ে উঠুক। কিছু নতুন বইয়ের পরিচিতি তুলে ধরা হলো:
গুণ আদর্শের বরপুত্র, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে নিয়ে অসংখ্য বই প্রকাশ হয়েছে। তারই মধ্যে রহিম আব্দুর রহিমের একটি নতুন বই মেলায় এসেছে ‘গুণ আদর্শের বরপুত্র, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব’। রহিম আব্দুর রহিম দীর্ঘদিন ধরে সাংবাদিকতা করছেন। একইসাথে তিনি সাহিত্য, নাট্য, প্রবন্ধ ও কলাম লিখিয়ে হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে তাঁর ৮টি বই প্রকাশ হয়েছে। গুণ আদর্শের বরপুত্র, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বইটিতে রয়েছে অনেক উচ্চ পর্যায়ের চিন্তাবিদদের বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে মূল্যায়ন। বইটিতে সহজ-সরল ভাষায় বঙ্গবন্ধুর গুণাগুণ তুলে এনেছেন সাংবাদিক এবং নাট্যকার রহিম আব্দুর রহিম যা সব ধরণের পাঠককে বেশ ভালো লাগবে। বইটিতে ৩৮টি প্রবন্ধসহ বঙ্গবন্ধুর কিছু উক্তি, বিশিষ্টজনদের মূল্যায়নসহ জ্ঞান-জিজ্ঞাসায় বঙ্গবন্ধুকে জানার সুযোগও রয়েছে বইটিতে। বইটি পাওয়া যাচ্ছে অভিযান প্রকাশনীর ৩৫৪ নম্বর স্টলে। প্রচ্ছদ করেছেন অবিনাশ আচার্য।
বঙ্গবন্ধুর স্মরণীয় ঘটনা
গত বছরের মার্চ থেকে এই মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মবার্ষিকী পালিত হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই তাঁর ওপর অনেক বই লিখেছেন অনেক লেখক, এক একজন এক এক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে। এতে বাংলার অবিশংবাদী পুরুষকে জানতে সহায়ক হবে। উল্লেখিত বইটিতে বঙ্গবন্ধুর জীবনের অনেক স্মরণীয় ঘটনার সমাহার রয়েছে। এগুলো জানা যাবে। বইটি লিখেছেন মো. মনির হোসেন। প্রকাশ করেছেন শওকত হোসেন লিটু, পারিজাত প্রকাশনী থেকে। পাওয়া যাচ্ছে ৫২০-৫২১ নম্বর স্টলে।
মহান জাতির মহান পিতা
বঙ্গবন্ধুর জীবনী ও ত্যাগের সংগ্রাম নিয়ে আলোকিত এই বইটি লিখেছেন মেহেরুন নেসা ইসলাম। বইটিতে বঙ্গবন্ধুর অনেক অজানা তথ্য খুব যতেœর সাথে উল্লেখ করা হয়েছে। সব বয়েসীদের পড়ার উপযোগী করে লেখা বইটি সবার ভাল লাগবে। বইটি পাওয়া যাচ্ছে অক্ষর প্রকাশনীতে, ৯ নম্বর প্যাভেলিয়ানে। প্রচ্ছদ করেছেন ধ্রæব এষ।
ডিজিটাল উমু
হেলেন ওসমান দীর্ঘদিন ধরে লিখছেন। তিনি দেশের প্রখ্যাত মহাকবি যাযাবর ওসমানের মেয়ে। ইতোমধ্যে তাঁর দুটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ হয়েছে। এবার বইমেলায় এলো তাঁর শিশুতোষ বই ডিজিটাল উমু। এই ডিজিটাল যুগে, করোনায় অনেকটা আবদ্ধ সময়ে শিশুরা বাসায় বসে কি করে, কিভাবে সময় অতিবাহিত করে, কিভাবে বাসায় বসে খেলাধুলার সময়গুলো উপভোগ করে সেগুলো নিয়েই একঝাঁক ছড়া উপহার দিয়েছেন হেলেন ওসমান। এখন তারা প্রকৃতি, মাঠ-ঘাট, কুকুর-বিড়াল-ছাগলছানার সাথে, এমনকি চাঁদ মামার সাথেও খেলে না। আগের মতো চানাচুর-বিস্কিট, সুজি-সেমাই খায় না। তারা এখন ফাস্ট ফুড খায়, খেলে মোবাইল নিয়ে, চিন্তা তাদের ডিজিটাল যন্ত্রপাতি নিয়ে। এসবের আলোকেই এই ছড়াগুলো লেখা হয়েছে। বইটি পাওয়া যাবে কিশোর কলম প্রকাশনীতে। প্রচ্ছদ ও অঙ্গসজ্জা করেছেন হেলেন ওসমান নিজেই।
বই কেনার মধ্য দিয়ে, পাঠের মধ্য দিয়ে উপভোগ্য হোক এবারের বইমেলা।
ataturk.pasha@yahoo.com