আবারও ঢাকার সংগীতপ্রেমীদের সুর আর কণ্ঠের মাধুর্যে মুগ্ধ করলেন সুরের জাদুকর এ আর রহমান।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত ‘ক্রিকেট সেলিব্রেটস মুজিব ১০০’ অনুষ্ঠানে গেয়ে মন মাতালেন উপমহাদেশের জনপ্রিয় এ সুরকার, সংগীত পরিচালক ও কণ্ঠশিল্পী।
গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা রাতে টিভির কল্যাণে অস্কারজয়ী এই শিল্পীর সুর ছুঁয়ে গেছে আরো অগণিত দর্শক-শ্রোতার হৃদয়ও।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) আয়োজিত ও দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্প গ্রুপ বসুন্ধরার পৃষ্ঠপোষকতায় এই মেগাকনসার্টের দ্বিতীয় পর্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে সংগীত উপভোগ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মিরপুরের শের-ই-বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে কনসার্টে এ সময় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি ও সংসদ সদস্য নাজমুল হাসান, বিসিবি কর্মকর্তা ইসমাইল হায়দার মল্লিক, শেখ সোহেল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান উপভোগ করেছেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান ও তাঁর স্ত্রী আফরোজা বেগম এবং বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর ও তাঁর স্ত্রী সাবরিনা সোবহান।
বিকেলে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের প্রথম পর্ব শুরু হয়। এরপর মঞ্চে আসে জনপ্রিয় ব্যান্ডদল মাইলস। ‘চাঁদ তারা সূর্য নও তুমি/নও পাহাড়ি ঝরনা/যদি বলি ফুল তবুও হবে ভুল/তোমার তুলনা হয় না’—নব্বই দশকের সুপারহিট এই গান দিয়ে শুরু করে মাইলস। অন্যতম দেশসেরা এই ব্যান্ডদল তাদের বিখ্যাত আরো কয়েকটি গান পরিবেশন করে মাতিয়ে তোলে দর্শকদের।
উপস্থাপক রুমানা মালিক মুনমুন মাইলসের পরিবেশনার পরই সংসদ সদস্য ও জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী মমতাজ বেগমকে মঞ্চে আমন্ত্রণ করেন। মমতাজ শুরু করেন তাঁর নতুন গান ‘জয় মুজিবুর, জয় স্বাধীনতা, বাংলাদেশের জয়’ গানটি দিয়ে। এরপর একে একে গেয়ে শোনান ‘না জানি কোন অপরাধে দিলা এমন জীবন’, ‘আমার ঘুম ভাঙায়া গেলো গো মরার কোকিলে’, ‘নান্টু ঘটকের কথা শুইনা’ ও ‘বন্ধু তুই লোকাল বাস’-এর মতো মঞ্চ মাতানো গানগুলো। বহু দর্শক বিপুল উত্সাহে গলা মেলাচ্ছিল তাঁর সঙ্গে।
দর্শক প্রবল আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছিল অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে আয়োজনের মধ্যমণি এ আর রহমান ও তাঁর দলের জন্য। তবে বেরসিক বৃষ্টি বাগড়া দিয়ে তাদের ধৈর্যের ভালোই পরীক্ষা নিয়েছে। বৃষ্টিজনিত বিরতি শেষে এ আর রহমান সদলে আলো ঝলমলে মঞ্চে এলে বাঁধভাঙা আনন্দে মাতে দর্শক। একের পর এক মনপ্রাণ ভরানো গানে এই জীবন্ত কিংবদন্তিও যেন তাদের ভালোবাসা আর মুগ্ধতার প্রতিদান দেন।
এ আর রহমান এবার দ্বিতীয়বারের মতো এসেছেন বাংলাদেশে। এর আগেও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের আমন্ত্রণে তিনি এসেছিলেন। বিসিবির উদ্যোগে ‘ক্রিকেট সেলিব্রেটস মুজিব ১০০’ শীর্ষক এ আয়োজন ২০২০ সালেই হওয়ার কথা ছিল। তবে করোনা মহামারির কারণে তখন আসতে পারেননি। দুই বছর পর এলেন এবং জয় করলেন বরাবরের মতোই।
বাংলাদেশ নিয়ে গান : গভীর রাত পর্যন্ত এ আর রহমান ও তাঁর সহশিল্পীরা গান গেয়ে শোনান। প্রধানমন্ত্রীসহ বিশিষ্ট অতিথি ও দর্শক-শ্রোতাদের চমত্কৃত করে গেয়ে ওঠেন ‘জয় জয় জয় বাংলাদেশ’। তাঁর আরেকটি গানে ছিল ‘সোনার বাংলা’ কথাটিও। একসময় মঞ্চে আসেন আরেক বিশিষ্ট নাম হরিহরণ। প্রায় মধ্যরাতে আরেক চমক। ডিজিটাল প্রযুক্তির কল্যাণে মঞ্চের পর্দায় ‘আবির্ভূত হন’ সম্প্রতি প্রয়াত সংগীত কিংবদন্তি লতা মঙ্গেশকর। তাঁর রেকর্ড করা কণ্ঠের সঙ্গে গলা মেলান এ আর রহমান। সৃষ্টি হয় সুরের ঐন্দ্রজালিক আবহ। গিটার বাজিয়ে গান করেন শিল্পী রশিদ আলী। ছিল যন্ত্রসংগীতের পরিবেশনাও।