তানজিনা হোসেন এর গল্প
সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে ঘরের কোণে রাখা ঝাড়ুটা দিয়ে ঘর পরিস্কার করতে লেগে গিয়েছিল জুলহাস। তার বউ আমেনা তখন ছিল রান্নাঘরে, ছেলেকে খাইয়ে দাইয়ে ইশকুলে পাঠিয়ে মাত্র ভাত চড়িয়েছে চুলোয়, শব্দ পেয়ে ছুটে এসে দৃশ্যটা দেখে স্বামীর হাত থেকে কেড়ে নিল ঝাড়ুখানা।
-কী করতিছেন আপনে? ঝাড়ু দিতিছেন ক্যান?
জুলহাস বউ এর দিকে বিহ্বল দৃষ্টিতে চেয়ে বলল-সকাল সকাল কাম কাইজ শেষ করতি পারলি ভাল না? কত কাম বাকি রইছে! ঘর মুছা, কেঁথা চাদর ধোয়া, আনাজ কুটা।
আমেনা চোখের পানি মুছতে মুছতে বলল-কিচ্ছু করতি অবি না আফনার। এইটা আফনার নিজের বাড়ি, ভুইলে গেছেন সব? আমরা আছি না? হাত মুখ ধুইয়ে আসেন, নাশতা দেই। গরম ভাত রানতিছি।
ভাত? জুলহাসের মাথাটা কেমন গুলিয়ে যায়। ভাত কেন? সকালে তাদের দেয়া হয় রেশনের লাল আটার দুইটা মোটা মোটা রুটি। তার সাথে সবজি, আর ট্যালটেলা ডাল। টিনের প্লেট নিয়ে খাবারের লাইনে দাঁড়াতে হয়। তারও আগে ফজরের পর লাইনে দাঁড়িয়ে একে একে বাথরুম সারতে হয় সবার, বাথরুম পরিস্কারের দায়িত্ব চার নম্বর ওয়ার্ডের, জুলহাসের দায়িত্ব তার নিজের ওয়ার্ড ঝাঁট দেয়া আর বালতিতে পানি নিয়ে গোটা হলঘর, বারান্দা, ওয়ার্ড তকতকে করে মোছা। কাজ শেষ করতে করতে দশটা বেজে যায়। তারপর কলতলায় হাত পা ধুয়ে সে প্লেট হাতে লাইনে দাঁড়ায়। ততক্ষণে ভীষণ খিদে পেয়ে যায় তার। এক কোণে বসে গোগ্রাসে সেই রুটি ডাল সবজি গেলে। ঢক ঢক করে টিউবওয়েলের ঠান্ডা পানি পান করে পরান জুড়ায়। তারপর খাওয়া শেষ হলে আবার কাজকর্মের বিলিবন্টন করা হয়।
আমেনা ঝাড়ুটা এক কোণে ছুঁড়ে ফেলে স্বামীর হাত ধরে তাকে কলতলায় নিয়ে এল। উঠানে দড়িতে ঝোলানো গামছাটা নিয়ে তার কাঁধে ফেলে দিয়ে বলল-নেন, আমি কল চাপতিছি। আফনে হাত মুখ ধুইয়া নেন। রাজুরে আফনের লিগা টুথব্রাশ আনতি কইছি। ইশকুল থিকা আসবার সময় নিয়া আসবি।
দাওয়ায় দাঁড়িয়ে ভয়ে ভয়ে আর বড় বড় চোখে গোটা দৃশ্যটা দেখছিল দশ বছরের চুমকি। এই অগোছালো, পাগলাটে, উদভ্রান্ত, লম্বা চুল দাড়িওলা লোকটা নাকি তার আব্বা! স্টুডিওতে তোলা তাদের একটা রঙিন পারিবারিক ছবি টাঙানো আছে ঘরের দেয়ালে। সেই বাবার সাথে এই লোকটার কোন মিল নাই। চুমকির বিশ্বাস হয় না যে এই উটকো লোকটাই তার আব্বা, যে কিনা দীর্ঘ ছয় বছর পর গত পরশু হঠাৎ এসে হাজির হয়েছে। আশ্চর্য, যে কেউ এসে দাবি করলেই কি তার আব্বা হতে পারে? আম্মার কি একটুও সন্দেহ হচ্ছে না?
চুমকি ভীষণ সন্দেহ ভরা চোখে লোকটার প্রতি মায়ের প্রেমময় আচরণ লক্ষ্য করে। এই মুহূর্তে আম্মা লোকটার মাথার আধ ভেজা চুল পাট পাট করে চিরুণি দিয়ে আঁচড়ে দিচ্ছে, চুলগুলি বেশ লম্বা, কাঁধ পর্যন্ত ছড়ানো; চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে আম্মা বলছে-আইজ বরুণ নাপিতের কাছত গিয়ে দাড়ি মোচ চুল সুন্দর কইরে কাইটে আসেন। কী অবস্থা অইছে!
চুমকি অবাক হয়ে ভাবে, আম্মা কি একটু বাড়াবাড়ি করতিছে না এই লোকটারে নিয়ে? এত আল্লাদের কি আছে?
তারপর রান্নাঘরের দাওয়ায় যত্ন করে বেড়ে দেয়া ভাত ডিম ডাল চেটেপুটে খেয়ে উঠতে না উঠতেই ওপাড়ার রমিজ মিয়া এসে হাজির।
-ওরে জুলহাস নাকি জেল থিকা ছাড়া পায়েছিস? আমারে কেউ জানায় নি দেখো দিকি! এখন বাজারে গিয়ে সব শুনলাম। পত্রিকায় বলে তোর নাম উঠিছে ও জুলহাস! আদালত নাকি দুখ্খু পরকাশ করিছে তোর জন্যি। তদন্ত হবি ক্যান তোরে ধরিছিল সেইটে নিয়ে। তোলপাড় হয়ে যাতিছে চারদিকে।
আমেনা দুটো মোড়া এনে দিল উঠানে। জুলহাস সেই মোড়ায় বসে বোকার মত রমিজ মিয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল কেবল। পত্রিকায় কেন তার নাম উঠবে? সে আবার কোন অপরাধটা করল এখন? জুলহাসের শূন্য দৃষ্টি দেখে রমিজ মিয়া আরও অবাক হয়ে বলল-আমাক কি তুই চিনতি পারছিস না জুলহাস? আমি রমিজ। উত্তর পাড়ার রমিজ। তোর দোস্ত তমিজর বড় ভাই। চিনতি পারছিস এখন?
দেখুন তো একে চিনতে পারেন কিনা! ইনিই কি আবু সালেহ?
কত কতবার যে এই বাক্যটা শুনেছে জুলহাস। জনাকীর্ণ আদালতে, কাঠগড়ার ওপারে, একের পর এক চেনা অচেনা, জানা অজানা মানুষ ওঠানামা করতে করতে সেই একই সওয়ালের মুখোমুখি হয়েছে বার বার। দেখুন তো একে চিনতে পারেন কিনা! এপারে দাঁড়িয়ে জুলহাস নিজেও তাদের চিনতে চেষ্টা করত। বিচিত্র সব নারী পুরুষ তারা। কেউ কারখানার দারোয়ান, কেউ পুলিশের লোক, কেউ নিহতের স্বজন, কেউ প্রত্যক্ষদর্শী দোকানদার। সবাইকে সেই একই প্রশ্ন।
ইনিই কি আবু সালেহ? ইনিই তো আবু সালেহ, তাই না? আপনি ঠিক বলছেন যে এঁর নাম আবু সালেহ? আচ্ছা, আপনি নিঃসন্দেহ যে এই লোকটিই তাহলে আবু সালেহ?
আদালত একটা ভারি মজার জায়গা। এখানে একই প্রশ্ন যে কতবার কত ভাবে করা হয়! একই ঘটনার নানা রকম বয়ান দিনের পর দিন শুনে যেতে হয় সবাইকে। জুলহাস মাঝে মাঝে ভাবত, ওই উঁচু চেয়ারে বসে থাকা বিচারক মহোদয় এই পুনরাবৃত্তি শুনতে শুনতে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ছেন না কেন? মাঝে মাঝে উকিলদের বাদানুবাদে অতিষ্ঠ হয়ে তার নিজেরই মনে হত বলে-ভাই আর প্যাঁচায়েন না দেখি। মানুষগুলারে রেহাই দেন। আইচ্ছা মাইনে নিলাম আমি জুলহাস না, আমি আবু সালেহ। হল তো এবার? খুশি?
তবে এই সব অন্তহীন কথাবার্তার মধ্যে কেমন করে যেন সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়ে গেল যে সে জুলহাস নয়, সে হল আবু সালেহ। যে আবু সালেহ সূতার কারখানার সহকর্মী জনৈক রফিক মিয়াকে একটা ধারালো ছুরি দিয়ে প্রকাশ্য দিবালোকে খুন করে ফেলেছে। যেদিন আদালতে সেই লম্বা চকচকে ছুরিটা তার চোখের সামনে দোলাতে দোলাতে আসামী পক্ষের উকিল তাকে জিজ্ঞেস করছিলেন-দেখুন তো, এই ছুরিটা চিনতে পারেন কিনা-সেদিন সত্যি সে মুগ্ধ হয়ে ছুরিটার দিকে তাকিয়েছিল। বাহ, বেশ সুন্দর আর চকচকে তো ছুরিখানা। আদালতের জানালা দিয়ে আসা আবছা বাইরের আলোয় ছুরিটা কেমন রহস্যময় আর আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছিল। তার ইচ্ছে করছিল পোঁচ করে ওটার ধারালো আগা দন্ডায়মান দুই উকিলের পেটের মধ্যে সেঁধিয়ে দেয়। তাতে যদি এদের বকর বকর একটু থামত। কী আশ্চর্য, টানা দেড় বছর ধরে এই এক বিষয় নিয়ে এরা বক বক করেই যাচ্ছে। কি বিষয়? সে কি আবু সালেহ, নাকি আবু সালেহ না? আচ্ছা, ব্যাপারটার মীমাংসা কি এতই জটিল?
আইচ্ছা আব্বা, জেলখানা জাগাটা কেমুন? আন্ধাইর? বাত্তি জ্বলে? মোটা মোটা পালোয়ান আসামীরা রোজ মারামারি করে? অনেক খারাপ খারাপ লোক আছে ওইখানে?
ক্লাস এইটে পড়া রাজুর প্রশ্নের শেষ নেই। সিনেমায় সে জেলখানা দেখেছে। ডোরা কাটা জামা পায়জামা গায়ে আসামীরা মারামারি করছে। এ ওকে দিয়ে পা টিপিয়ে নিচ্ছে। জেলখানায় যে যত বড় দাগী আসামী, সে তত সুখে থাকে। কারণ তাকে সবাই ভয় পায়। কিন্তু তার কথা শুনে তার জেল খাটা আব্বা বেশ অবাক হয়। খারাপ লোক? কই, খারাপ তো মনে হল না কাউকে! ওই যে যশোরের গফুর মিয়া, কী সরল সহজ মানুষটা, তার সাথেই সবচেয়ে বেশি খাতির ছিল জুলহাসের। ঘরে নাকি তার নতুন বউ, পছন্দের বিয়ে, বউ এর নাম আয়েশা। অবশ্য বউ এখন আর নাই, তালাক হয়ে গেছে। বউ এর আপন মামাতো ভাইকেই যে কোপ দিয়ে মেরে ফেলেছিল গফুর মিয়া। কিন্তু এই ক বছরে গফুর মিয়াকে একবারও রাগতে দেখেনি জুলহাস। খুবই ভালো লোক সে, আর খুবই অমায়িক। কিংবা ধরো ওই আজহার ভাই। বয়স পঞ্চাশের কাছাকাছি হবে। উত্তরবঙ্গের মানুষ। কী দরাজ গলা! কী সুন্দর ভাটিয়ালি গায়। আহা, পরানটা ভরে যায় তার গান শুনলে। সবাই মিলে গোল হয়ে বসে তার গান শুনত তারা। কিন্তু লোকটা নাকি গায়েঁর মারামারিতে অংশ নিয়ে বেশ কয়েকজনের পেট ফুটো করে দিয়েছিল। নাহ, তবু কাউকে অত খারাপ মনে হয় নাই জুলহাসের। জেলখানার লোকগুলো বেশ ভালোই তো! সবাই বেশ মিলে মিশেই থাকে। মারামারিও করে না তেমন।
-তোমারে তারা ডরাইতো না আব্বা? হেরা তো জানত যে তুমি মানুষ খুন করছো!
এবার আমেনা ধমকে ওঠে।
-এই সব কি কতিছ তুমি রাজু? তোমার আব্বায় মোটেও মানুষ খুন করে নাই। তারে পুলিশ ভুল কইরে ধরছিল। সেই ভুল আদালত স্বীকারও করিছে। সসম্মানে ছাইড়ে দিছে তোমার আব্বারে। তুমি এই সব জাইনেও কি কতিছ উলটাপালটা? আর কখনো কবা না এইসব।
জুলহাস ছেলেকে কিছু বলে না। ছয় বছর ধরে সে শুনে আসছে যে সে আসলে আবু সালেহ, জুলহাস নয়। আদালতে থানা পুলিশ, আসামী পক্ষ, কারখানার লোক, সাক্ষী সাবুদ সবাই মিলে প্রমাণ করে ছেড়েছে যে সে আবু সালেহ। ঘটনার দিন সকাল থেকে কি কি ঘটেছিল, আবু সালেহ কিভাবে ঘটনাটা ঘটালো, কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে কোন এঙ্গেলে কোন অস্ত্র দিয়ে রফিক মিয়ার ভবলীলা সাঙ্গ করল, তারপর কিভাবে ব্যবহৃত অস্ত্র লুকিয়ে রক্তমাখা জামাকাপড় পালটে পালিয়ে গেল-এর পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ সে এতবার শুনেছে যে পুরো ঘটনাটা এখন দিব্যি চোখের সামনে দেখতে পায়। মাঝে মাঝে তার সত্যি মনে হয় সে-ই হয়তো ঘটনাটা ঘটিয়েছে। নাহলে এমন পরিস্কার সে পুরো জিনিসটা দেখতে পায় কিভাবে!
-আপনি কি থানায়, আদালতে বার বার বলেননি যে আপনি আবু সালেহ নন? তবু তারা কেন কোন কথা কানে তোলেনি। এর পেছনে নিশ্চয় কোন গুঢ় রহস্য আছে, তাই না?
শহর থেকে আসা সাংবাদিক মেয়েটি ক্যামেরা রোল করে কঠিন স্বরে জুলহাসকে প্রশ্ন করে পরদিন। যেন সব দোষ তারই। কেন পুলিশ বা আদালত তার কথা কানে তুলল না!
জুলহাস জবাবে মাথা নাড়ে কেবল, কিছু বলে না। প্রথম প্রথম সে জোর দিয়ে বলতে চেষ্টা করত যে সে আবু সালেহ নয়। সে হল জুলহাস। আবু সালেহ নামে কাউকে সে চেনেই না। পরের দিকে তার আর বলতে ইচ্ছে করত না। বরং কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে দুই পক্ষের উকিল আর সাক্ষীদের ঝগড়াঝাটি সওয়াল জবাব আগ্রহ ভরে শুনত। এত এত গুরুত্বপূর্ণ মানুষেরা তার মত সামান্য একজন মানুষকে নিয়ে এভাবে মেতে আছে; সে কে, জুলহাস, না আবু সালেহ, যেন এই প্রশ্নের মীমাংসা এই পৃথিবীর সবচেয়ে জরুরি কাজ। এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার জন্য দিনের পর দিন আদালত বসে, লাইট ফ্যান জ্বলে, সেই আদালতে বিচারক, আর্দালি, উকিল, উকিলের সহকারী, পেশকার, পুলিশ, সাক্ষী আরও কত কত মানুষ জড়ো হয়, তারা সারাদিন এ নিয়ে কথাবার্তা বলে। এই পুরো ব্যাপারটা তার ভারি আশ্চর্য লাগে। সে আসলে কে? একজন সামান্য ইট ভাটার শ্রমিক, বিরামপুর থানার জলডুপি গ্রামের জুলহাস উদ্দিন, বাপ মৃত দবিরউদ্দিন, এই জগতে তার কোন গুরুত্বই নাই-অথচ এরা তাকে নিয়ে এত মাতামাতি করছে।
-এই যে আপনার জীবন থেকে ছয় ছয়টা বছর অকারণে, অন্যদের ভুলের কারণে হারিয়ে গেল, আপনি কি বিচার চান না জুলহাস উদ্দিন?
ক্যামেরা সঠিক এঙ্গেলে বসিয়ে শেষ প্রশ্নটা করে বসে সাংবাদিক মেয়েটি। বিচার? শুনে চমকে ওঠে জুলহাস। আবার বিচার?
আবার সেই আদালতের অন্ধকার স্যাঁতস্যাঁতে ঘর, আবার সেই উকিলদের বিরামহীন পুনরাবৃত্তিময় প্রশ্ন, আবার দিনের পর দিন কাঠগড়ায় ওঠা আর নামা, ওঠা আর নামা, আর দিনভর একঘেঁয়ে কথাবার্তা। জুলহাসের কাছে বরং জেলখানার ছয় বছরই বেশি শান্তির সময় ছিল, বিচারকালীন সময়ের চাইতে। অন্তত একটা নিশ্চিন্তি ছিল সেই সময়। কারণ ততদিনে তার পরিচয় নিশ্চিত হয়ে গেছিল জনসমক্ষে, নাম পরিচয় নিয়ে আর কোন ক্যাচাল ছিল না। সে ও মেনে নিয়েছিল যে তার নাম আবু সালেহ, জুলহাস নয়। জেলখানায় তাকে সবাই সালেহ ভাই বলেই ডাকত, সে তাতে সাড়া দিতে অভ্যস্ত হয়ে গেছিল। এখন এতদিন পর তাকে আবার পুরনো নাম পরিচয়ের কাছে ফিরে আসতে হল। তা ফিরে আসার মধ্যেও দেখি ঝামেলা কম নয়। ছয় বছর আবু সালেহর জীবন যাপন করে আসার পর এক রাতেই কি আবার জুলহাস হওয়া যায়?
আরেকদিন এল মানবাধিকার কমিশনের লোক। আবার সেই একই সওয়াল। কিভাবে আপনি জুলহাস থেকে আবু সালেহ হলেন? কে বা কারা ছিল এর পেছনে? কি তাদের উদ্দেশ্য? তারপর, বিচার চান কিনা সেই প্রশ্ন নয়, তাঁরা বরং আশ্বাস দিয়ে বিদায় নিলেন-আপনি নিশ্চয় সুবিচার পাবেন জুলহাস উদ্দিন। এরকমটা হতে পারে না একটা দেশের বিচার ব্যবস্থায়, এর সুরাহা হতেই হবে। দেশে ন্যায় বিচার বলে একটা ব্যাপার এখনও আছে। ইত্যাদি ইত্যাদি।
জুলহাস ভারি ক্লান্ত বোধ করে। সে কি আসলে আবু সালেহ, নাকি আবু সালেহ না-এই দোলাচল নিয়েই কেটে গেল সাড়ে সাত বছর। এখনও দেখি সেই সমস্যা কাটে নি। নতুন করে যে সমস্যা দেখা দিয়েছে তা হল সে যদি সত্যি জুলহাসই হবে, তবে আবু সালেহ হল কি করে? কে বা কারা তাকে আবু সালেহ বানালো? কেন বানালো? আরও কতদিন যে এই আবু সালেহ সংক্রান্ত দ্বিধা দ্বন্দে তাকে কাটাতে হবে কে জানে! আজকাল তার মনে হয় আবু সালেহ লোকটার সাথে তার তেমন কোন পার্থক্য নাই। একটা বড় ধারালো চকচকে ছোরা পেলে সেও বেশ কাউকে খুন করে ফেলতে পারবে এখন। মাঝে মাঝেই সে ইচ্ছে চাগিয়ে ওঠে।
রাত ক্রমশ গভীর হলে পাশে শোয়া আমেনা তার বাহুতে হাত রেখে গাঢ় স্বরে বলে-আফনে জানি কেমুন হইয়ে গেছেন জেলত থিকা ফিইরা রাজুর বাপ। আফনেরে কেমুন অচিন লাগে অহন!
জুলহাস একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বিড়বিড় করে বলে- আমি কি তাহলে সত্যি আবু সালেহ? নাকি আবু সালেহ না? কে জানে!