সিন্ডিকেটেই আটকে আছে নবীনগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন

এ নিয়ে ঢাকায় একাধিক সভা, ত্যাগী নেতারা হতাশ

 

জ.ই বুলবুল: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন নিয়ে সাম্প্রতিক কর্মকান্ডে দলের নেতাকর্মীরা হতাশ। হঠাৎই তারিখ দিয়ে জোরেসোরে সম্মেলনের ঢোল বাজানো শুরু, আবার মুহূর্তেই বন্ধ। তবে কি সিন্ডিকেটেই নিমজ্জিত নবীনগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন? এ নিয়ে দফায় দফায় রাতভর বিশেষ পরামর্শ সভা করেছেন ঢাকায়।

বৃস্পতিবার মতিঝিল বিকন সেন্টারে সংসদ এবাদুল করিম বুলবুল এর অফিসে সভা হয়। এর আগে সাবেক এমপি ফয়জুর রহমান বাদলের বনানীর অফিসেও সভা হয়।

জানা গেছে, জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে সামনে রেখে এই উপজেলার সম্মেলনের বারবার তাগিদ এলেও সম্মেলনের চাকা আর ঘুরছে না এখানে। গত ক’মাসে নবীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের তারিখ হয়েছে কয়েকবার। যদিও ১৩ই অক্টোবরে হওয়ার কথা ছিল সম্মেলনটি। গত ২৫শে আগস্ট জেলা আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় ৪ উপজেলার সম্মেলনের তারিখ ঠিক করা হয়। এরমধ্যে ১৩ ও ১৪ই সেপ্টেম্বর ঘোষিত তারিখে নাসিরনগর ও সরাইল উপজেলার সম্মেলন হয়। জেলা কমিটির বিশেষ বর্ধিত সভায় তারিখ ঘোষণার পর একমাস পেরুলেও নবীনগরের সম্মেলনের ফলাফল শূন্য। এখনো ওয়ার্ড সম্মেলনই শেষ হয়নি।

তারপর রয়েছে ২১টি ইউনিয়নের সম্মেলন। জেলার সবচেয়ে বড় উপজেলা এটি। কেন হচ্ছে না সম্মেলন, কোথায় বাধা-এসবই আলোচনা সর্বত্র। সুষ্ঠুু সম্মেলন আয়োজনে ৫/৭ জনের একটি সিন্ডিকেটের মাতবরি বড় বাধা বলেও দলের নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন। আগাম পদ বাণিজ্য করছেন তারা। নেতারা জানান, জুলাইয়ে প্রথম নিজ ইউনিয়ন শ্রীরামপুরে সম্মেলন আয়োজন করেন উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি, সাবেক এমপি ফয়জুর রহমান বাদল। কিন্তু সেটি করতে পারেননি। সম্মেলনে প্রধান অতিথি করা হয়েছিল বর্তমান সংসদ সদস্য এবাদুল করিম বুলবুলকে। তিনি সেখানে যাননি। এরপরই হতাশ হয়ে পড়েন সাবেক সংসদ বাদল। ক্ষোভে জেলা আওয়ামী লীগের বৈঠকে দল ছাড়ার কথাও ব্যক্ত করেন।

এরপর সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে হঠাৎ করে ৫টি ইউনিয়নের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়। উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দেশের বাইরে থাকায় সংসদ সদস্য এবাদুল করিম বুলবুলের সমর্থনে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সহ-সভাপতি নিয়াজ মুহম্মদ খান এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জহির উদ্দিন চৌধুরী এসব ইউনিয়নের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করেন। কিন্তু এরমধ্যে বীরগাঁও ইউনিয়নের সম্মেলন হলেও বাকি ৪ ইউনিয়নের সম্মেলন স্থগিত করা হয়। বীরগাঁওয়ের কমিটি ঘোষণা করা হয়নি ২০/২৩ দিনেও। রসুলাবাদ ইউনিয়নে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনায় সম্মেলন আয়োজন করা হলেও সম্মেলন হয়নি। এমনকি সংসদ সদস্যের নিজ ইউনিয়ন সলিমগঞ্জের সম্মেলন স্থগিত করা হয় আগের রাতে। সম্মেলন হয়নি বিদ্যাকুট, বড়িকান্দি ইউনিয়নে। এরপরই হতাশায় সংসদ সদস্য মাঠ ছেড়ে যান। ফলে নবীনগরের সম্মেলন ভবিষৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের একজন সদস্য বলেন, বাদল সাহেব দেশে এসে সম্মেলন বাস্তবায়ন কমিটির মিটিং ডেকেছেন। এখন আবার নতুন করে হবে। তাহলে আগে যে ডেট করলো তারা কারা? কীভাবে তারিখ করলো, কেন সম্মেলন হলো না। সবকিছু এলোমেলে। সম্মেলন না হওয়ায় নেতাকর্মীদের উৎসাহ-উদ্দীপনায় ভাটা পড়েছে।

উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জহির উদ্দিন চৌধুরী বলেন, কেন সম্মেলন হচ্ছে না জানি না। সম্মেলনতো একটু সময় লাগবেই। জেলা সম্মেলনের সঙ্গে আমাদেরতো সম্পর্ক নাই। উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নিয়াজ মোহাম্মদ খান বলেন, ৫টি ইউনিয়নের সম্মেলনের ডেট করার পর সবগুলি স্থগিত করা হয়েছে। এখন আবার সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দায়িত্বশীল এক নেতা বলেন, ৮/১০ জনের সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে গেছে নবীনগর আওয়ামী লীগ। এ থেকে বের না হতে পারলে এখানে আওয়ামী লীগের রাজনীতি ধ্বংস হয়ে যাবে।তবে, উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি, সাবেক এমপি ফয়জুর রহমান বাদল দেশে ফেরার পর আবারো সম্মেলন নিয়ে তোড়জোর শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে (২৭/৯) ঢাকায় দলের নেতাদের নিয়ে বনানীতে তার কার্যালয়ে রাতভর বৈঠক করেন তিনি। এসময়ে বর্তমান এমপি’ এবাদুল করিম বুলবুল সহ উপজেলা আ’ লীগের কমিটির নেতারা সহ সহস্রাধিক লোকজন উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে সম্মেলনকে কেন্দ্র করে নানা কারণে আলোচিত হয়ে উঠেছেন উপজেলা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা। তারা হচ্ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান মনির, লাউর-ফতেপুর ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান জাকির হোসেন সাদেক, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সাইফুর রহমান সোহেল, যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক নাসির, সহ-প্রচার সম্পাদক পিন্টু ভদ্র। ত্যাগী নেতাকর্মীদের অনেকেই কোণঠাসা সেখানে। বীরগাঁও ইউনিয়নের সম্মেলনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকদের পর্যন্ত নিমন্ত্রণ করা হয়নি। এসব বিষয়ে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান মনির বলেন, আমাদের কোনো সাইনিং পাওয়ার নেই। আর সম্মেলনের জন্যে আমরা অ্যাসাইন করা কেউ নই। মাঠেতো কতো কথাই শোনা যায়। ২০১৪ সালের ৬ই জুন উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়। সে সময় সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সিনিয়র সহ-সভাপতি ও ১ নম্বর সদস্য পদ ঘোষণা করা হয়।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম বলেন, সামনের সম্মেলন কি ভাবে করা যাবে এ নিয়ে স্থানীয় সংসদ ও সাবেক সংসদ একাধিক বার বসেছেন, তবে জেলার নেতাদের দিক নিদর্শনা নিয়েই পরবর্তী তারিখ জানানো হবে।

Print Friendly

Related Posts