দেশীয় জাতের মাছ শিকারীরা ভাল নেই

জাহিদুল হক চন্দন: মানিকগঞ্জে রয়েছে পদ্মা যমুনা কালীগঙ্গা ধলেশ্বরী ইছামতীসহ বেশকিছু নদী ও খাল-বিল। বর্ষা মৌসুমে এসব নদী ও খাল বিল পানিতে ভরে যায়। এক সময় শুষ্ক মৌসুমেও খালবিলগুলো পানিতে ভরপুর থাকতো। তবে এবার বর্ষা মৌসুমেও বিলগুলো টইটম্বুর হয়নি। পানি না থাকায় মিলছে না দেশীয় জাতের মাছ। ফলে এসব খাল-বিল থেকে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করা জেলেদের দুর্দিন চলছে।

মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার দিঘী মাঝিপাড়ার জেলেপল্লিতে ১৭০টির মতো পরিবার রয়েছে। খাল-বিল নদীতে জাল টেনে আগে সংসার চলতো এসব জেলে পরিবারগুলোর। তবে এখন খাল-বিলে পানি না থাকায় এবং নদীতে মাছ না পাওয়ায় আর্থিক দৈন্যতায় পড়েছে পরিবারগুলো। এখন কেউ কেউ মৎস্যখামারির পুকুরে জাল টেনে কিংবা আড়ত থেকে মাছ কিনে বাজারে বিক্রি করে সংসারের হাল ধরে আছেন।

ফালান রাজবংশী বলেন, বর্ষায় খালে ও জমিতে পানি আসে। সেই পানিতে মাছ ধইর্যা বাজারে বেইচ্যা যে ট্যাহা পাই তা দিয়াই সংসার চলে। ইবার পানি না হওয়ায় মাছ ধরা বন্ধ। বউ-পোলাপান নিয়া বিপদে আছি।

কার্তিক রাজবংশী বলেন, রোগ-শোকে শরীর খারাপ। এহন আর জাল টানতে পারি না। বাজারে অন্য মাইনষের মাছ বেইচ্যা দেই। যা দেয় তাতে এহন আর সংসার চলবার চায় না। বেশির ভাগ সময় ধারদেনা করে চলতে হয়। এছাড়া বিলে আগের মতো পানিও নাই, মাছও নাই। ফলে বেচাকেনাও কইম্যা গেছে।

জেলেপল্লির আরেক বাসিন্দা শনিরাম রাজবংশী বলেন, জিনিসপত্রের দাম অনেক বেশি। যা আয় করছি, তা দিয়ে সংসার চালানো যাচ্ছে না। খুব কষ্টে আছি।

এখানকার আরেক বাসিন্দা কৃষ্ণ চন্দ্র রাজবংশী বলেন, ছোটবেলা থেকে খাল-বিল ও নদীতে মাছ ধরতাম। এই মাছ বিক্রির টাকায় সংসার চলতো। খাল-বিল শুকিয়ে গেছে, নদীতে তেমন মাছ নেই। এহন বাজারে জিনিসপত্রের যে দাম! মানুষের পুকুরে ও মাছের ঘেরে মাছ ধরে যা পাই, তাই দিয়ে কোনোমতে দিন চলছি।

পরিবেশবাদী সংগঠক অ্যাডভোকেট দীপক কুমার ঘোষ বলেন, সরকারিভাবে প্রাকৃতিক জলাধার-জলাশয় সংরক্ষণের নির্দেশনা রয়েছে। তারপরও প্রভাবশালী মহলের দখল ও অপরিকল্পিত উন্নয়নের ফলে খাল-বিলে পানি থাকছে না। ফলে মৎস্য সম্পদ কমে যাচ্ছে। এসব মৎস্য সম্পদের উপর নির্ভরশীল পরিবারগুলো দিন দিন অসহায় হয়ে পড়ছে। বিলগুলোতে পানি প্রবাহের সকল কার্যক্রম বাস্তবায়ন জরুরি হয়ে পড়েছে।

মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইসরাফিল হোসেন বলেন, কৃষি জমিতে প্রয়োগকৃত কীটনাশক বৃষ্টির পানিতে মিশে বিলে গিয়ে মাছের ক্ষতি করে। এছাড়া পানি প্রবাহ আগের মতো না থাকায় দেশীয় জাতের মাছ দিন দিন কমেছে। জেলেদের জীবনমান উন্নয়নে বিভিন্ন উপকরণ ও প্রনোদনা দিয়ে সহযোগিতা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

Print Friendly

Related Posts