নতুন করে গৃহকর পুনঃমুল্যায়নের নামে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকায় গৃহকর এর পরিমান এক লাফে ৮০ হাজার থেকে ১ লক্ষ আশি হাজার টাকা, গৃহকর নির্ধারণে ভাড়া আদায়ের ভিত্তিতে গৃহকর নির্ধারণের প্রক্রিয়ার কারণে সিটি কর্পোরেশনের হোল্ডিং ট্যাক্স এখন বাড়ীর মালিকের কাছে আতংকের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এক বিবৃতিতে ক্রেতা-ভোক্তাদের স্বার্থসংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগ ও নগর কমিটি এ দাবি করেছে।
বিবৃতিতে ক্যাব চট্টগ্রাম জানায়, গৃহকর নির্ধারণে এক লাফে এতো কর বৃদ্ধি যেভাবে গ্রহণযোগ্য নয়, তেমনি গৃহকর মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় সিটি করপোরেশনের একশ্রেণীর কর্মকর্তাদের নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। অন্যদিকে এভাবে গৃহকর বৃদ্ধি করা হলে তার পুরো দায়ভার গিয়ে পড়বে ভাড়াটিয়াদের উপর। করোনাসহ ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে সাধারণ মানুষ এমনিতেই নিত্যপণ্য, সেবা সার্ভিসের মূল্যবৃদ্ধি, ভ্যাট, ট্যাক্সসহ নানা ধরনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ করের ভারে জর্জরিত। সেখানে সিটিকর্পোরেশনের গৃহকরের এক ধাপে ১০গুণের বেশী বৃদ্ধি মানুষের ভোগান্তির নতুনমাত্রা যোগ করবে। যা পুরো নগরবাসীর জীবন যাত্রার ওপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং যা বর্তমান সরকারের জনপ্রিয়তাকে হুমকির মুখে ফেলবে।
তাই এ সংগঠনটি অনতিবিলম্বে বর্তমানে চলমান গৃহকর আদায় প্রক্রিয়া বন্ধ করে বাড়িভাড়ার ভিত্তিতে গৃহকর মূল্যায়ণ না করে, সম্পত্তির অবস্থান, বর্গফুট, গুণগত মান এবং কাঠামোগত বৈশিষ্ট্যই হতে হবে গৃহকর নির্ধারণ, দেশের সব সিটি করপোরেশনের গৃহকর নির্ধারণের পদ্ধতিকে ইউনিফর্ম পদ্ধতিতে নিয়ে আসার জন্য একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিশন গঠন করে ধাপে ধাপে কর বৃদ্ধি ও কর মূল্যায়ন প্রক্রিয়াকে আরো স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে কর আদায়কে জনবান্ধব করার দাবি জানিয়েছেন।
রোববার (২৩ অক্টোবর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, মহানগর সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু ও সাধারণ সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, দক্ষিণ জেলা সভাপতি আলহাজ্ব আবদুল মান্নান প্রমুখ উপরোক্ত দাবি জানান।
বিবৃতিতে ক্যাব নেতৃবৃন্দ বলেন, প্রয়োজনে ১৯৮৬ সালের ‘দ্য সিটি করপোরেশন ট্যাক্সেশন রুলস’ অনুসরণে বাংলাদেশের ১১টি সিটি করপোরেশনে গৃহকর নির্ধারণের উদ্যোগ নিতে ভারতের মুম্বাই, দিল্লি, কলকাতা ও চেন্নাইয়ের পাশাপাশি যুক্তরাজ্যের লন্ডন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক নগরীতে বিদ্যমান পদ্ধতির তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে নতুন আইনর প্রণয়ন করে কমিশন গঠন করতে হবে। এভাবে এক লাফে বিপুল পরিমান কর আদায় যেভাবে গ্রহনযোগ্য নয়, তেমনি সিটি কর্পোরেশনের বর্তমান নাগরিক সেবার মানও কর প্রদানের সাথে জড়িত। বিশেষ করে নগর জুড়ে ভাঙ্গা রাস্তা নগরবাসীর জন্য যেমনি যন্ত্রণার কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে তেমনি যত্রতত্র ময়লার স্তুপ পুরো নগরী যেন আবর্জনার ডিপোতে পরিনত হয়েছে। ধুলাবালির যন্ত্রণায় সর্দি, কাশি, হাপানী ও শ্বাস কষ্টের প্রার্দুভাব অনেকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। নাগরিক সেবা প্রদানে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানগুলি সমন্বয়ের অভাবে যে যেভাবে পারে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহন করায় উন্নয়ন প্রকল্পগুলি নগবাসীর জন্য আর্শীবাদ না হয়ে অভিশাপে পরিনত হয়েছে। অন্যদিকে বিকল্প ব্যবস্থা তৈরী না করে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা, সিংহভাগ জনগোষ্ঠির কথা চিন্তা না করে গুটি কয়েক লোকের কথা চিন্তা করে বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহন করায় সাধারণ জনগন এ সমস্ত উন্নয়ন প্রকল্পের সুবিধা ভোগ করতে পারছে না। যার দায় ভার সিটি কর্পোরেশনের উপর পড়ছে।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ আরও বলেন ইতিপূর্বে ক্যাব চট্টগ্রাম সাবেক মাননীয় মেয়রগণের সাথে বেশ কয়েকবার এবিষয়ে মতবিনিময়ের সময় কর সিটিকর্পোরেশনের কর ব্যবস্থাপনায় ত্রুটির কথা উত্থাপন করলেও তার কোন উন্নয়ন হয়নি। হোল্ডিং ট্যাক্স মূল্যায়নের সময় বাড়ির মালিকের উপস্থিতিতে তথ্য যাচাই দরকার ছিলো। অন্যদিকে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে জানা গেছে প্রতিবছর সিটিকর্পোরেশন এর রাজস্ব বিভাগের লোকজন বিভিন্ন বাড়ীর মালিককে বিশাল বিশাল অংকের হোল্ডিং ট্যাক্স এর নোটিশ দিয়ে থাকেন এবং কর্পোরেশনে গিয়ে আপিল করার জন্য পরামর্শ দিয়ে থাকেন। সেখানে আপোষ ফর্মুলায় নোটিশের ১/৩ ভাগ বা যে যেভাবে পারে রাজস্ব বিভাগের সংশ্লিষ্ট সকলকে খুশি করতে পারলেই এখান থেকে রেহাই পাওয়া যায়। হোল্ডিং ট্যাক্স আদায়ে নীতিমালা না মেনে চলার কারনে ১০ গুণের বেশী হোল্ডিং ট্যাক্স প্রদানের নোটিশ দেয়া হচ্ছে এবং পরবর্তীতে আপোসরফার মাধ্যমে তা নিস্পত্তি করা হচ্ছে।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ আরও বলেন বাড়িভাড়া নিয়ে ভাড়াটিয়ারা প্রতিনিয়ত হয়রানির সম্মুখীন হচ্ছে। যে সমস্ত সমস্যা গুলি আছে তার মধ্যে প্রতি বছর বছর বিনা কারনে বাড়ী ভাড়া বৃদ্ধি, চুক্তিপত্র ছাড়া বাড়ীভাড়া প্রদান, রশিদ ছাড়া ভাড়া গ্রহণ, সিটি কর্পোরেশনের গৃহকর, গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য চার্জ আদায়, বিল না দিয়ে বিলের অর্থ দাবী, বিনা নোটিশে বাড়ী ছাড়তে বলা, রাতে বেলায় বাসা ঢুকতে দারোয়ান কর্তৃক অসযোগিতার কারণে চট্টগ্রাম মহানগরীতে লক্ষ লক্ষ ভাড়াটিয়া বাড়ীওয়ালাদের হাতে জিম্মি হয়ে আছে। ভাড়টিয়াদের হয়রানি লাগবে সরকারী কোন কর্তৃপক্ষ নেই যেখানে এ বিষয়ে অভিযোগ নিস্পত্তি করা যায়।