আজ বিশ্ব স্ট্রোক দিবস
দেশে প্রতি ৪ জনের মধ্যে একজন স্ট্রোকের ঝুঁকিতে আছেন। অধিকাংশ মানুষ স্ট্রোকের লক্ষণ বুঝতে না পারায় রোগীকে হাসপাতালে নিতে দেরি করেন। অথচ, স্ট্রোকের প্রথম চার ঘণ্টা রোগীর জন্য গোল্ডেন আওয়ার বা অতি গুরুত্বপূর্ণ বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
‘প্রতি মিনিট জীবন বাঁচায়’ এই প্রতিপাদ্যে আজ শনিবার (২৯ অক্টোবর) বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে বিশ্ব স্ট্রোক দিবস।
স্ট্রোক কী, জানতে চাইলে নিউরো মেডিসিনের অধ্যাপক সিরাজুল হক বলেন, স্ট্রোক হলো—মস্তিষ্কে হঠাৎ করে রক্ত সরবরাহে বাধা সৃষ্ট হওয়া। স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগী চেনার উপায় হচ্ছে—মুখ বেঁকে যাবে, হাত একদিকে ঝুলে যাবে বা শক্তি কম পাবে, চোখে ঝাপসা দেখবে এবং রোগীর কথা জড়িয়ে যাবে। এছাড়া, তীব্র মাথাব্যথার সঙ্গে রোগী হঠাৎ ভারসাম্য হারিয়ে ফেলবে।
তিনি বলেন, স্ট্রোকের প্রধান কারণ অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন। এছাড়া ডায়াবেটিস, নিয়মিত মদ্যপান, কায়িক পরিশ্রম না করা, ফাস্টফুড বা জাঙ্ক ফুড গ্রহণও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। যার কারণে বর্তমানে আমাদের দেশসহ অন্যান্য দেশে তরুণদের মধ্যে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ছে। অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ স্ট্রোকের ঝুঁকি ৫০ ভাগ বাড়ায়।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, দেশে অসংক্রামক রোগে মৃত্যুর দিক থেকে তৃতীয় অবস্থানে আছে স্ট্রোক। সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যায় সড়ক দুর্ঘটনায়। মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ হার্ট অ্যাটাক বা হৃদরোগ। এর পরেই স্ট্রোক। বাংলাদেশে স্ট্রোকে মৃত্যুর হার চার গুণ বেড়েছে। এতে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বে প্রতি মিনিটে ১০ জন মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালের ২০১৮ সালের এক জরিপে জানা গেছে, দেশে প্রতি হাজারে স্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছেন ১১ দশমিক ৩৯ জন মানুষ। প্রায় ২০ লাখ স্ট্রোকের রোগী রয়েছে বাংলাদেশে। অন্যদের তুলনায় স্ট্রোকের ঝুঁকি ৬০ বছরের বেশি মানুষের মধ্যে ৭ গুণ বেশি। এক্ষেত্রে নারীর চেয়ে পুরুষের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি প্রায় দ্বিগুণ। আর শহরের চেয়ে স্ট্রোকের প্রকোপ গ্রামে কিছুটা বেশি।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে বলছে, স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে গত ২০১৯ সালে দেশে মারা গেছেন ৪৫ হাজার ৫০২ জন। ২০২০ সালে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৫ হাজার ৩৬০ জন। অর্থাৎ স্ট্রোকের রোগী এক বছরে প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে।
ওয়ার্ল্ড স্ট্রোক অর্গানাইজেশন জানিয়েছে, স্ট্রোক হওয়ার সর্বোচ্চ ৪ ঘণ্টার মধ্যে চিকিৎসা নিলে ৩০ শতাংশ রোগীর সম্পূর্ণ ভালো হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। স্ট্রোক হওয়ার ৬ ঘণ্টার ভেতরে রক্ত নালীর জমাট খুলে দিলে ৫০ শতাংশ রোগীর সম্পূর্ণ ভালো হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। চিকিৎসকরা বলছেন, স্ট্রোক হওয়ার পরে রিং পরানোর মাধ্যমে রক্ত নালীর ব্লক খুলে দেওয়া সম্ভব। স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীরা স্ট্রোক সেন্টারে চিকিৎসা নিলে ভালো হওয়ার সম্ভাবনা থাকে ১৪ শতাংশ।
স্ট্রোক সেন্টারে চিকিৎসার সুযোগ হলে আক্রান্ত ব্যক্তির সুস্থ হয়ে ওঠা এবং পঙ্গুত্ব থেকে রক্ষা পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
চিকিৎসকদের মতে, একিউট স্ট্রোক ম্যানেজমেন্ট বাংলাদেশে নতুন শুরু হয়েছে। একজন রোগী স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার পর সাড়ে ৪ ঘণ্টার মধ্যে স্ট্রোক সেন্টারে এলে চিকিৎসকরা তার সিটিস্ক্যান করার পর একটি ইনজেকশন দেন। এই ইনজেকশন দেওয়ার ফলে স্ট্রোকের কারণে যে পঙ্গুত্ব হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, একদিক দুর্বল হয়ে যায়- সেসব ঠিক হয়ে রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যান।
বিদেশে স্ট্রোক সেন্টারে চিকিৎসা ব্যবস্থা অনেক আগে থেকেই চালু থাকলেও বাংলাদেশে এটি নতুন ধারণা। সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল এবং বিএসএমএমইউ-তে এই চিকিৎসা ব্যবস্থা চালু হয়েছে। এছাড়াও রাজধানীর কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে এই চিকিৎসা চালু রয়েছে।