বিশ্ব নিউমোনিয়া দিবস আজ। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘নিউমোনিয়া এফেক্টস এভরিওয়ান’ অর্থাৎ ‘নিউমোনিয়া সবাইকে আক্রান্ত করে’।
প্রতি বছর ১২ নভেম্বর বিশ্ব নিউমোনিয়া দিবস পালন করা হয়। ২০০৯ সাল থেকে দিবসটি পালিত হচ্ছে। বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বেই নিউমোনিয়াকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়।
দিবসটি উপলক্ষে দেশের সব সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এ ছাড়া বেসরকারি কিছু সংগঠনও এ কর্মসূচি পালন করছে।
নিউমোনিয়ায় মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হাইপোক্সেমিয়া। অর্থাৎ রক্তে অক্সিজেনের অভাব। দেশে প্রতি বছর নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ২৫ হাজার শিশুর মৃত্যু হয়। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ৬৮-এর বেশি শিশু মারা যাচ্ছে। রক্তের অক্সিজেনের ঘাটতির কারণে শিশুদের বেশি মৃত্যু হচ্ছে। যা সম্পূর্ণ প্রতিরোধযোগ্য।
হাইপক্সেমিয়ায় আক্রান্ত যেকোনো রোগীর জন্য চিকিৎসা হিসেবে অক্সিজেন থেরাপি প্রয়োজন। নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশুদের যদি রক্তে অক্সিজেনের ঘাটতি কমানো যায় তাহলে মৃত্যু কমবে। তাই জেলা, উপজেলা হাসপাতালে পর্যাপ্ত অক্সিজেনের ব্যবস্থা করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।
বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের তথ্যমতে, চলতি বছর অক্টোবর পর্যন্ত ২৪৩৪ জন নিউমোনিয়ার রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ২৮৬, ফেব্রুয়ারিতে ২১৬, মার্চে ৩৩০, এপ্রিলে ২২৬, মে’তে ২৫০, জুনে ২১৫, জুলাইয়ে ১৬৯, আগস্টে ১৮০, সেপ্টেম্বরে ১৭০, অক্টোবরে সবচেয়ে বেশি ৩০৮ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এ ছাড়া চলতি মাসের ১০ দিনে হাসপাতালে রোগী ভর্তি হয়েছে ৮৪ জন। এর আগের বছর নিউমোনিয়ার চিকিৎসা নিতে ২২২৭ শিশু এ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলো। তথ্যমতে, গত চার মাসে হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।
গত বুধবার (৯ নভেম্বর) রাজধানীর মহাখালীর আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশে (আইসিডিডিআর,বি) বিশ্ব নিউমোনিয়া দিবস উপলক্ষে এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, সারা বিশ্বে প্রতি বছর সাত কোটি ৩০ লাখ মারাত্মক অক্সিজেন ঘাটতিতে ভোগেন। যার মধ্যে শিশুই তিন কোটি ২০ লাখ। আর দেশের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের অবকাঠামো অনুযায়ী মাধ্যমিক স্তরের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে নিউমোনিয়া নিয়ে আসা শিশুর প্রায় ৪২ শতাংশই হাইপোক্সেমিয়ায় ভোগে।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আইসিডিডিআর,বির মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের সহযোগী বিজ্ঞানী ড. আহমেদ এহসানুর রহমান। তিনি বলেন, বৈশ্বিক লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী আমাদের ২০২৫ সালের মধ্যে প্রতি এক হাজার জীবিত-জন্ম শিশুর মধ্যে মৃত্যুর সংখ্যা ৩-এ নামিয়ে আনতে হবে। আমরা গবেষণায় দেখেছি, দেশে প্রতি বছর এখনও এক হাজার জন্ম নেওয়া শিশুর মধ্যে পাঁচ বছর বয়সের আগেই ৩ শতাংশ শিশু নিউমোনিয়ায় মারা যায়। ফলে সেই লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, দেশে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার পর শিশুরা রক্তে অক্সিজেনের স্বল্পতায় বেশি মারা যাচ্ছে। তাই অক্সিজেনের ঘাটতি কমাতে হবে এবং প্রতিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পালস অক্সিমিটার থাকা জরুরি। এ ছাড়াও শিশু মৃত্যু হার কমাতে সঠিক পরিকল্পনা নিতে হবে এবং শিশুদের টিকা দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।