ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রীবোঝাই ট্রলার চলছে উত্তাল পদ্মা-মেঘনায়

অমরেশ দত্ত জয়: চাঁদপুরের দেওয়ান ঘাট। এই ঘাট থেকে প্রতিদিন চলাচল করছে ৪০টিরও বেশি যাত্রীবাহী ট্রলার। উত্তাল পদ্মা-মেঘনা পাড়ি দিয়ে ইঞ্জিনচালিত নড়বড়ে নৌযানে প্রতিদিনই ঝুঁকিপূর্ণভাবে পারাপার হচ্ছেন কয়েক হাজার মানুষ। নানা সময়ে ঘটছে দুর্ঘটনা।

যাত্রীরা বলছেন, নদীর ওপারে গড়ে উঠা চরগুলোতে সবার ব্যবসা ও বাড়িঘর রয়েছে। তাই ট্রলারে বেশি ভাড়া দিয়ে, বয়া ও লাইফ জ্যাকেটহীন নৌযানে সবাইকে এভাবেই নদী পারাপার হতে হচ্ছে।

অন্যদিকে বিষয়টি দ্রুত খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানালেন চাঁদপুরের বন্দর কর্মকর্তা মোঃ শাহাদাত হোসেন।

বুধবার (১৬ নভেম্বর) দেওয়ানঘাটে গেলে দেখা যায়, ঘণ্টায় ঘণ্টায় ৬০-৭০ জন করে যাত্রীবোঝাই করে এসব ট্রলার চলাচল করছে।

এ সময় পারাপার হওয়া যাত্রী ওসমান, দেলোয়ার হোসেন, আইজর মোল্লাসহ অন্যান্যরা জানালেন- স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রীসহ নানা বয়সের হাজারো মানুষ প্রতিদিন উত্তাল পদ্মা-মেঘনা পাড়ি দিচ্ছেন। যারা জেলা শহরের পুরানবাজারের এই দেওয়ানঘাট থেকে মাস্টার ঘাট, বাশগাজেচ্ছর, নূর মাঝির বাজার, চেয়ারম্যান ঘাট, আফা মোল্লার বাজারসহ নানা স্থানে যাওয়া আসা করছেন।

এরা জানান, বছর বছর এভাবে নদী পার হতে গিয়ে অনেকেই ট্রলার ডুবিতে প্রাণ হারাচ্ছেন বলে সব সময়ই দুর্ঘটনার ভয় থাকে। এরসাথে ভাড়া বৃদ্ধি ও লাইফ জ্যাকেট নিয়ে যাত্রী ও ট্রলার চালকদের প্রায়ই বাকবিতণ্ডা হয়। তাই চাঁদপুর-শরিয়ত নৌ রুটে ব্রিজ নির্মাণেরও দাবি করলেন কেউ কেউ।

ট্রলার চালক নূরে আলম বলেন, তেলের মূল্যবৃদ্ধি ও ঘাটে টাকা দিতে হয় বলে আমরা ২৫ টাকার স্থানে এখন যাত্রীপ্রতি ৪০-৫০ টাকা করে ভাড়া নিচ্ছি। এরমধ্যে মাষ্টার বাজার ৪০ টাকা, মোল্লা বাজার, বাশগাজেচ্চর, নূর মাঝির বাজার, চেয়ারম্যান ঘাট নিচ্ছি ৫০ টাকা করে। আমাদের দেওয়া লাইফ জ্যাকেট যাত্রীরা পড়তে চায় না। তবুও প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখলে জোর করে পরিয়ে দেই।

দেওয়ানঘাটের শাহ-আলম খান নামের একজন ট্রলার প্রতি ৬০ টাকা করে তুলছিলেন। তার সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, চাঁদপুর শরিয়ত অঞ্চলে অন্তত ২৫টি চরে অর্ধালক্ষাধিক মানুষের বসবাস। যাদেরকে দেওয়ানঘাট থেকে প্রতিদিন ৪০-৫০ টাকা ভাড়া দিয়ে ৪০টির বেশি ট্রলারে করে দিনব্যাপী পারাপার হতে হয়। এরমধ্যে চেয়ারম্যান বাজার ১১ টা, মাষ্টার বাজার ১১টা, বেপারী বাজার ২টা, মাল বাজার ৪টা, মোল্লা বাজার ১১টা ট্রলার থেকে আমরা টাকা নিচ্ছি। এই ঘাট ইজারা নেওয়ায় আমাদের এই টাকা তুলতে হচ্ছে।

এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ চাঁদপুরের উপ-পরিচালক মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, মালামাল পরিবহনের জন্য চাঁদপুরের কয়েকটি ঘাট ইজারা দেওয়া হয়েছে। তবে দেওয়ানঘাট ইজারা দেওয়া হয়নি। তার ওপর ওই ঘাট দিয়ে যাত্রী পারাপারের বিষয়টি সম্পূর্ণ আইন বহির্ভূত। আমরা ঘাটটি ইজারার আওতায় এনে ট্রলারগুলো রেজিস্ট্রেশনের নির্দেশনা দিবো। এতে করে কয়টি ট্রলার চলে তা নির্ধারণ করে কারা এগুলো চালাচ্ছে তাও আমাদের কাছে তথ্য থাকলো। এরপর ভাড়া নির্ধারণ করে তাদেরকে প্রয়োজনীয় সাপোর্ট আমরা দিতে পারবো। অন্যথায় আমরা তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিবো।

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts