নবীনগরে রাতের আঁধারে ঘরের বারান্দায় লাশ!

জ ই বুলবুল: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের কনিকাড়া গ্রামের জুরাহাটির মৃত ইউনুস মিয়ার ছেলে সাদেক মিয়ার বাড়িতে অদ্ভুত এক ঘটনা ঘটেছে। সাদেকের স্ত্রী ঘুম থেকে ওঠার পর দরজা খুলে বাইরে বেরুতেই বারান্দায় কফিনে শোয়ানো শিশুর লাশ! দেখে আঁৎকে উঠেন তিনি। চেচিয়ে মাকে ডাক দিয়ে বারান্দায় লাশ থাকার কথা জানালে তিনিও ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে লাশ দেখে চেচিয়ে উঠেন। লাশের চারপাশে তখনো আগরবাতি রাখা আছে, বুকে কড়ি, পাশেই মাটির পাত্র।

এ দৃশ্য হঠাৎ করে যে কেউ দেখলে মনে করবে এ যেন কোন শ্মশানঘাটের চিত্র! শুধুই কি তাই, ঘরের চারপাশে কে বা কাহারা গোলাপ ফুল, ধান গাছের ছড়া, ভেট, বটগাছের ডাল সহ বিভিন্ন গাছ গাছালি ডাল দিয়ে সাজিয়ে রেখে গেছেন।

ঘরের বারান্দায় লাশ, আর রাতের আঁধারে বাড়ির চারপাশের এমন নিদর্শন দেখে ঘরে থাকা মা ও চার সন্তান নিয়ে হতভম্ব হয়ে পড়েন সাদেকের স্ত্রী। সকাল হলে লোকজন জড়ো হয়ে এই ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে । এ খবরে ছড়িয়ে পড়লে আশপাশের উৎসুক জনতা এ দৃশ্য দেখতে সাদেক মিয়ার বাড়িতে ভিড় জমায়।

সরেজমিন, ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, কনিকাড়া গ্রামের পুর্ব অংশের শেষ সীমানায় সাদেক মিয়ার বাড়ি। শিবপুর রাধিকা সড়কের পাশেই এ বাড়ির পরে ফাঁকা বিল দেখা যায়। এমনিতেই সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে বাড়ির চারপাশে ভুতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করে।

সাদেকের স্ত্রী জানান, তার স্বামীর কুমিল্লায় সেলুনের দোকান আছে। তিনি সন্তানদের নিয়ে বাড়িতেই থাকেন। প্রায় সময় রাতের আঁধারে ঘরের চালে ঢিলের আওয়াজ শুনে ভয় পান তিনি। যে কারণে নিজের সাথে থাকতে মাকে নিয়ে আসেন তিনি।

স্থানীয়রা মনে করছেন পুরো ঘটনাটি ভুতেরা করেছে। কোন মানুষের পক্ষে এই সময়ে শাপলা ফুল, ভেট, ধান গাছে ছড়া সহ এসব সংগ্রহ করে আনাটাও অসম্ভব। আবার যেখানে লাশ রাখা আছে সেই স্থানে একটি চকি রাখা ছিলো। যা কিনা আধ মাইল দুরের একটি ডোবায় ফালানো হয়েছে।

তবে বাড়ির লোকজনের দাবী ভিন্ন, তারা মনে করছেন এসব কিছু জিনদের কাজ। জিনদের দিয়ে এসব কাজ করিয়েছে কেউ। সাদেকের স্ত্রী গতকাল গভীর রাতে তার ভাসুরের স্ত্রীর গলার আওয়াজ শুনেছেন। ফোনে কথা বলছেন ভেবে এই বিষয়ে আর ভাবেননি তিনি। তবে তার দাবী এসব ঘটনায় তার বড় জাল জড়িত।

আপনাকে ভয় দেখিয়ে লাভ কি সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সাদেকের স্ত্রী জানান, তার স্বামীর সাথে ভাবীর অন্য সম্পর্ক আছে। এতে বাধা দেয়ায় এসব করে ভয় দেখিয়ে এ বাড়ি ছাড়া করতেই জিনদের সাহায্যে এসব করিয়েছেন তিনি।

অভিযোগ করে বলেন, গত দেড় মাস আগে বাড়িতে এসে দীর্ঘদিন থাকলেও সাদেক স্ত্রী ও সন্তানের খোঁজ নেননি। এমনকি নিজের ঘরেও থাকেননি।

যার বিরুদ্ধে অদ্ভুত এ ঘটনায় সম্পৃক্ত থাকাসহ নানা অভিযোগ- তার বক্তব্য নিতে গেলে সে অকপটে জানান, আগে যখন অসুস্থ ছিলো তখন এসব করলেও এখন সে পুরোপুরি সুস্থ। তবে গতকালের ঘটনা তিনি ঘটাননি। তার বক্তব্যের স্পষ্টতা বলে দেয় সে এসব কিছুতেই জড়িত নয়!

সাদেকের মা জানান, তার বড় ছেলে বিদেশে থাকেন। ছেলের বউয়ের উপর জিনের নজর আছে। গত কয়েক বছরে এই পরিবারে বেশ কয়েকবার রহস্যময় ঘটনা ঘটেছে। জিন ছাড়াতে ঢাকার সাভারে বড় এক খনকারের কাছে নিয়ে গেলে ঝাড়ঁফুক করে জিন ছাড়িয়ে আনেন।

স্থানীয়রা গত রাতের ঘটনাটি নিছক ভয় দেখাতে কেউ করেছে এটা মানতে রাজি নন।

তবে, স্থানীয় এক মুরব্বি জানান, ভুতুড়ে কান্ড ঘটিয়ে কোন দুষ্ট লোক এসব করাতে পারে। নয়তো পারিবারিক ঝামেলায় একে অপরকে পেরেশানিতে রাখতেও এসব ঘটাতে পারে।

Print Friendly

Related Posts