সীমান্তে সোনার বারের ছড়াছড়ি

যশোরের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে সোনা পাচার হচ্ছে ভারতে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে সব থেকে বেশি সোনা পাচার হতো বেনাপোল দিয়ে। কিন্তু দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। বর্তমানে সোনা পাচারের জন্য আলোচিত নতুন রুটের নাম শার্শা।

শার্শা সীমান্তের গোগা, ভূলোট, অগ্রভূলট, পাঁচভূলট, রুদ্রপুর, হরিশচন্দ্রপুর, কায়বা, চরপাড়া ও দাঁদখালীসহ অন্ততঃ ১০টি অবৈধ ঘাট দিয়ে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ সোনা পাচার হচ্ছে।

সূত্র মতে, শার্শা-বেনাপোল, চৌগাছা সীমান্তের অন্তত ৫০টি অবৈধ ঘাট দিয়ে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ সোনা পাচার হচ্ছে। এই ঘাটগুলো চালু করেছে আন্তর্জাতিক সোনা সিন্ডিকেটের হোতা ভারতের ওপারের মাফিয়া ডন খ্যাত বস গৌতম, অপু সাহা, নাসির, আজগার, রবিউলসহ ওপারের সিন্ডিকেট মালিকরা। এপারে রয়েছে শতাধিক সিন্ডিকেট। এসব সিন্ডিকেটের রয়েছে আবার ১০ থেকে ৫০ জন ক্যারিয়ার। এসব ক্যারিয়াররা সোনা নিয়ে ছুটছে সীমান্তের দিকে।

যাদের মাধ্যমে সোনা ঢাকা থেকে শার্শার এসব সীমান্তে আনা হয় এবং ভারতে পাচার করা হয় তাদের কেউ কেউ মাঝে-মধ্যে সোনার চালানসহ ধরাও পড়ে। কিন্তু মূল মালিকরা থেকে যায় পর্দার আড়ালে।

বৃহস্পতিবার (১৭ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ভারতে পাচারের সময় যশোরের শার্শা সীমান্ত এলাকা থেকে ৮২ পিস সোনার বারসহ একটি মোটরসাইকেল আটক করেছে খুলনা ব্যাটালিয়নের (২১ বিজিবি) জওয়ানরা। আটক সোনার পরিমাণ ৯ কেজি ৫৫৮ গ্রাম (৮১৯.৭৩ ভরি)। যার বাজার মূল্য প্রায় ৭ কোটি টাকা।

খুলনা ব্যাটালিয়নের (২১ বিজিবি) অধিনানাক লে. কর্নেল মোহাম্মদ তানভীর রহমান জানান, খুলনা ২১ ব্যাটালিয়নের পাঁচভূলাট বিওপির বিশেষ টহল দল হাবিলদার মো. মালেক গাজীর নেতৃত্বে পাঁচভূলাট গ্রামের রহমতপুর ইটের ভাটার কাঁচা রাস্তায় গোপনে অবস্থান নেয়। সন্ধ্যা ৬টার দিকে এক ব্যক্তি মোটরসাইকেল যোগে আসে। বিজিবির টহল দল তাকে থামতে বললে তিনি জোরে চালিয়ে পালাবার চেষ্টা করেন। বিজিবি জওয়ানরা তাকে বাঁশের লাঠি দিয়ে আঘাত করলে মোটরসাইকেল হতে সে ছিটকে পড়ে। এসময় তার সাথে থাকা সোনার বারের ব্যাগ পড়ে যায়। বিজিবি টহল দল পিছনে ধাওয়া করলে মোহাম্মদ মেহেদী (২৫) নামের এই সোনা বহনকারী (বেনাপোলের পুটখালীর আব্দুল করিমের ছেলে) দৌড়ে পালিয়ে যায়। ফেলে যাওয়া ব্যাগে ৮২ পিস সোনার বার পাওয়া যায়।

লে. কর্নেল মোহাম্মদ তানভীর রহমান আরও জানান, চলতি বছরে খুলনা ব্যাটালিয়নের দায়িত্বাধীন সীমান্ত এলাকা হতে ১৬ দফা অভিযান চালিয়ে ১৭ জন আসামিসহ মোট ৪০ কেজি ৬৫৮ গ্রাম সোনার বার আটক করা হয়েছে। যার আনুমানিক বাজার মূল্য ২৯ কোটি ৬লাখ ১৬ হাজার ৭৪৮ টাকা।

এছাড়া বৃহস্পতিবার (১৭ নভেম্বর) সকালে বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন থেকে রিপন (৪৪) নামে এক পাসপোর্ট যাত্রীকে ২৩২ গ্রাম ওজনের দুই পিস সোনার বারসহ আটক করা হয়েছে। রিপন মুন্সিগঞ্জের হারিদিয়া এলাকার সাইদুল ইসলামের ছেলে। তার দেহ তল্লাশি করে পায়ের জুতার মধ্যে থেকে এই দুটি বার উদ্ধার করা হয়। এর বাজার মূল্য ১৬ লাখ টাকা।

সূত্র মতে, বুধবার (১৬ নভেম্বর) রাত সাড়ে ১০ টা থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২০ ঘন্টায় খুলনা ব্যাটালিয়ন (২১ বিজিবি) ও যশোর ব্যাটালিয়নের (৪৯ বিজিবি) জওয়ানরা পৃথক দুটি সফল অভিযান পরিচালনা করেন। দুই অভিযানে ১৯৬ পিস সোনার বার উদ্ধার হয়। আটক হয় দু ব্যক্তিসহ একটি পিক আপ এবং একটি মোটর সাইকেল। উদ্ধারকৃত সোনার বাজার মূল্য প্রায় ২৩ কোটি টাকা।

এর আগে বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে বেনাপোল সীমান্ত এলাকা থেকে ১১২ পিস সোনার বারসহ দুই জনকে আটক করে যশোর ব্যাটালিয়নের (৪৯ বিজিবি) জওয়ানরা। আটক সোনার পরিমাণ ১৬ কেজি ৫১২ গ্রাম। যার বাজার মূল্য সাড়ে ১৫ কোটি টাকা। বেনাপোল আমড়াখালি বিজিবি চেকপোস্ট থেকে তাদেরকে আটক করা হয়। এরা হলেন, কুমিল্লার দাউদকান্দি এলাকার মনু মিয়ার ছেলে ওমর ফারুক (২৭) ও চাঁদপুর জেলার মতলব উওর থানার কালিপুর বাজার এলাকায় বারেক সরকারের ছেলে ফরহাদ সরকার (৩২)।

যশোর ৪৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল শাহেদ মিনহাজ সিদ্দিকী জানান, বেনাপোল হাইওয়ের আমড়াখালি চেকপোস্টে পিক-আপ ভ্যানে তল্লাশি চালিয়ে এই ১১২ পিস সোনার বার উদ্ধার করা হয়।

 

Print Friendly

Related Posts