আমরা কখনো হাল ছাড়ি না : মেসি

আগের দিন লিওনেল মেসির হাসিখুশি মুখে কত কী স্বপ্ন ছিল! ‘ভালো খেলা, জয় দিয়ে শুরু’র সব প্রত্যাশা জলাঞ্জলি দিয়ে ম্যাচ শেষে তিনি এলেন এক বিধ্বস্ত চেহারায়। যুদ্ধে পরাজিত সৈনিকের বেশে ব্যর্থতার কারণ ব্যাখ্যা করতে। এমনটা কল্পনা করেননি আর্জেন্টাইন অধিনায়ক, তাই এই হারের যন্ত্রণা অনেক, ‘এটা মস্ত বড় ধাক্কা, এমন হার খুব কষ্টের। ’

শুরুর ম্যাচেই সব ভাবনা তাঁর ওলটপালট হয়ে গেল।

ম্যাচের আগে হলে হয়তো সৌদি আরবের কাছে আর্জেন্টিনার হারের বাজি ধরার লোক খুঁজে পাওয়া যেত না। কিন্তু সত্যিটা হলো, সৌদি ফুটবলারের পায়ে কাল আরব্য রজনীর গল্প রচিত হয়েছে লুসাইল স্টেডিয়ামে। তারা ২-১ গোলে মেসির আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে চমকে দিয়েছে ফুটবলবিশ্বকে। তাই হারের যন্ত্রণাটা বড় বেশি লিওনেল মেসির। তাঁর পেনাল্টি গোলে লিড নিয়ে শেষ পর্যন্ত জিততে পারেনি। বিরতির পর যে সৌদি আরব হয়ে গিয়েছিল আর্জেন্টিনা, দুর্দান্ত খেলে, অপূর্ব সুন্দর দুটি গোল করে মেসির হৃদয় কাঁপিয়ে দিয়েছে। দ্বিতীয়ার্ধ শুরুর ১২-১৩ মিনিট হার্ভ রেনার্ডের সৌদি আরব এমন দাপটে খেলেছে, সেটাকে ছাপিয়ে নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি স্কালোনির আর্জেন্টিনা।

‘আমরা জানি, সৌদি আরবে বেশ কিছু ভালো ফুটবলার আছে, যারা হাই লাইন করে খেলে এবং পুরো মাঠ দাপিয়ে বেড়ায়। এ নিয়ে আমরা কাজ করেছিলাম এবং চেষ্টাও করেছি। তবে কোনো অজুহাত দিতে চাই না। বরং আমরা দল হিসেবে আরো সংগঠিত হয়ে খেলতে চাই সামনে’, বলেছেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। ম্যাচের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনেও সতীর্থদের সতর্ক করে মেসি সৌদি আরবকে ‘কঠিন প্রতিপ্রক্ষ’ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন।

কেউ সতর্ক হয়নি বলেই চরম মূল্য দিতে হয়েছে ম্যাচে। এর পরও তিনি হতোদ্যম নন, ‘আমাদের অবশ্যই আত্মবিশ্বাস নিয়ে এগোতে হবে। আমরা কখনো হাল ছাড়ি না, মেক্সিকোর ম্যাচে অবশ্যই জেতার চেষ্টা করতে হবে। ’ টানা ৩৬ ম্যাচ অপরাজিত থাকার পর তারা হোঁচট খেয়েছে সৌদি আরবে। খেলোয়াড়দের বিশ্বাস খানিকটা হলেও টলে গেছে। সাতবারের ব্যালন ডি’আর জয়ী মনে করছেন, এখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি তাঁদের আছে, ‘এই দলটি শক্তিশালী, এটা আমরা আগেও দেখিয়েছি। দীর্ঘদিন আমরা এ রকম অবস্থায় পড়িনি। এখন আমাদের সত্যিকারের শক্তি দেখাতে হবে। ’

প্রথম ম্যাচ পরে ‘সি’ গ্রুপে সবচেয়ে নিচে আছে আর্জেন্টিনা! অথচ গত দুই বছরে এটা কল্পনাও করা যায়নি কখনো। লিওনেল স্কালোনির অধীনে নতুনভাবে গড়ে ওঠা দলটি এত ভালো খেলছিল, কখনো তাদের বাতিলের খাতায় ঠেলে দেওয়া যায় না। তাই এক হারেই সব শেষ হয়ে যাবে—ব্যাপারটা এমন হতে পারে না। সামনে মেক্সিকো ও পোল্যান্ডের ম্যাচ আছে। এই দুটি জিতলেই আবার তৈরি হবে হুল্লোড়। এ জন্য দর্শক-সমর্থকদেরও আস্থা রাখতে বলছেন মেসি।

গ্রুপে সবচেয়ে ছোট দল হিসেবে গণ্য করা হয়েছিল সৌদি আরবকে। প্রথম ম্যাচে তারা হিসাব উল্টে দেবে—এমন কল্পনা আর্জেন্টাইন সমর্থকদের ধারেকাছেও ছিল না। লুসাইল স্টেডিয়ামে এই অঘটন দেখার পর নীল-সাদার আলোড়ন খানিকটা কমেছে। খানিকটা ভয়ও ধরেছে মনে। তবে এখন পথ কঠিন হয়ে গেল। হারাতে হবে মেক্সিকো ও পোল্যান্ডকে। এই সামর্থ্য আছে বলেই তারা বিশ্বকাপে এসেছে সবচেয়ে ফেভারিট হয়ে।

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts