কাতার বিশ্বকাপে নিজেদের নামের পাশে হট ফেভারিট তকমা লাগিয়েই বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) রাত ১ টায় সার্বিয়ার বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছিলো হলুদ সবুজের ব্রাজিল। মাঠে তার প্রতিফলন চোখে পরলো ভালোভাবেই। সেলেসাওদের নান্দনিক ফুটবলে শেষ পর্যন্ত ২-০ গোলের হার নিয়ে মাঠ ছাড়লো সার্বিয়া। ব্রাজিলের হয়ে দুটি গোলই আসে রিচার্লিসনের পা থেকে।
মজার বিষয় হলো রাশিয়া বিশ্বকাপেও ব্রাজিলের গ্রুপে পড়েছিল তারা। সেখানে হেরেছিল ২-০ গোলে। তার আগে ২০১৪ সালে এক প্রীতি ম্যাচে হেরেছিল ১-০ গোলে।
খেলার প্রথমার্ধ গোল শূন্য থাকলেও নেইমার-রিচার্লিসনের কৌশলি ফুটবল, ভিনিসিয়াসের গতিতে সেলেসাওরা প্রতি আক্রমণে কাপন ধরিয়েছিলো সার্বিয়ান শিবিরে।
ব্রাজিল প্রথম বড় সুযোগটা তৈরি করে ২৮ মিনিটে। থিয়াগো সিলভার রক্ষণচেরা পাস বামপাশে অরক্ষিত ভিনিসিয়াসকে খুঁজে পায়, তবে গোলরেখা থেকে এগিয়ে এসে সেটা ঠেকিয়ে দেন ভানজা মিলিঙ্কোভিচ-স্যাভিচ।
৩৫ মিনিটে রাফিনিয়া বড় একটা সুযোগই পেয়ে বসেছিলেন বক্সের একটু ভেতরে। তবে দুর্বল শটে সে সুযোগটা নষ্ট করেছেন তিনি। ৪১ মিনিটে সার্ব রক্ষণের ভুলে সুযোগ পায় সেলেসাওরা। নিকোলা মিলেঙ্কোভিচ বলটা তুলে দিয়েছিলেন ভিনিসিয়াসের পায়ে। তবে শেষমেশ তার ট্যাকলেই গোলটা হজম করা থেকে রক্ষা পায় তার দল সার্বিয়া।
দ্বিতীয়ার্ধে খেলার চিত্র পুরোপুরি পাল্টে যায়। ব্রাজিল যেন এককভাবেই দ্বিতীয়ার্ধে খেলেছে। সার্বিয়ান ডিফেন্স শুধু ব্রাজিলের আক্রমণ ঠেকানোতেই ব্যস্ত ছিল।
৪৯তম মিনিটে বক্সের সামনে ফ্রি-কিক আদায় করে নেন নেইমার। শট নেন তিনি। কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন সার্ব ডিফেন্ডাররা। কর্নার কিক করেন নেইমার। থিয়াগো সিলভার দুর্দান্ত এক হেড, ঘাড়ে বল লাগিয়ে দলকে রক্ষা করেন সার্ব ডিফেন্ডার।
৫৫ মিনিটে বাম পাশ থেকে বক্সের মধ্যে ক্রস করেন ভিনিসিয়ুস। গোল লক্ষ্যে দুর্দান্ত এক শট নেন নেইমার। কিন্তু দুর্ভাগ্য বলটি চলে যায় সাইড বারের অনেক বাইরে দিয়ে।
৫৮ মিনিটে দারুণ এক কাউন্টার অ্যাটাক ছিল সার্বিয়ার। কর্নারের বিনিময়ে বলকে রক্ষা করেন অ্যালেক্স সান্দ্রো। ৬০ মিনিটে নিশ্চিত গোলবঞ্চিত হলো ব্রাজিল। বক্সের বাইরে প্রায় ৩০ গজ দুর থেকে বাঁ-পায়ের দুর্দান্ত এক শট নেন আলেক্স সান্দ্রো। কিন্তু বল বামপাশের সাইডবারে লেগে ফিরে আসে।
৬২ মিনিটে গোল করে ব্রাজিল। অনেক কষ্টের পর আসে গোলটি। নেইমার বল নিয়ে ঢুকে পড়েন বক্সের মধ্যে। ডিফন্ডোরের সামনে বাধা পেলে সুযোগ বুঝে গোলে শট নেন ভিনিসিয়ুস। কিন্তু গোলরক্ষক ঝাঁপিয়ে পড়ে ফিরিয়ে দেন বলটি। ফিরতি বলটিতেই আলতো টোকায় সার্বিয়ার জালে বল জড়িয়ে দেন রিচার্লিসন।
৬৭ মিনিটে আবারও সুযোগ পেয়েছিলো ব্রাজিল। কাউন্টার অ্যাটাকে মাঝ মাঠ থেকে রাফিনহা বল নিয়ে এগিয়ে আসে সার্বিয়ার বক্সের সামনে। ডিফেন্ডার বাধা দিলে সেই বল নিয়ে কয়েক পা এগিয়ে এসে শট নেন ভিনিসিয়ুস। কিন্তু পোস্ট লক্ষ্যে শটটি রাখতে পারেননি তিনি।
কয়েকজন তরুণ ফুটবলারকে মাঠে নামান কোচ তিতে। তাতে শেষ ১০-১৫ মিনিট খেলার গতি যেন পাল্টে যায়। তিতের সাইড বেঞ্চ যে কতটা দুর্ধর্ষ, তা শেষ মুহূর্তে দেখা গেছে।
৭৩তম মিনিটে দ্বিতীয় গোল। রিচার্লিসনের এই গোলটি চোখে লেগে থাকার মত। বক্সের বাম প্রান্ত থেকে ডান-পায়ের টোকায় বক্সের মাঝে দাঁড়ানো রিচার্লিসনকে বলটি দেন ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। রিচার্লিসন প্রথমে বলটি নিয়ন্ত্রনে নেন। হালকা উপরে উঠে যাওয়া বলটিকে একটু সময় নিয়ে অসাধারণ এক বাইসাইকেল কিকে সার্বিয়ার জালে বল জড়ান তিনি।
৭৭ মিনিটে রিচার্লিসনকে তুলে গ্যাব্রিয়েল হেসুসকে মাঠে নামানো হয়। নেইমার হালকা আহত হলে তাকে তুলে নিয়ে মাঠে নামানো অ্যান্তোনিকে। তার আগেই ভিনিসিয়ুসকে তুলে মাঠে নামানো হয় রদ্রিগোকে।
৮১ মিনিটে রাফিনহার কাছ থেকে বল পেয়ে ক্যাসেমিরো শট নেন। কিন্তু বল ডান প্রান্তে পোস্টের কোনায় লেগে ফিরে আসে। ৮২তম মিনিটে রদ্রিগো দুর্দান্ত এক শট নেন। কিন্তু গোলরক্ষক ফিরিয়ে দেন সেটি। ৮৩ তম মিনিটে বাম পায়ের দুর্দান্ত এক শট নেন লুকাস পাকুয়েতার পরিবর্তে মাঠে নামা ফ্রেড। কিন্তু গোলরক্ষক ঝাঁপিয়ে পড়ে সেটি রক্ষা করেন।