পোলিশ বাঁধা টপকাতে মেসির জাদুর অপেক্ষা

পোলিশ বাঁধা টপকে শীর্ষ দল হিসেবেই নক আউট পর্বে যেতে চায় আর্জেন্টিনা।গ্রুপ-সি’র শেষ ম্যাচে আজ বাংলাদেশ সময়  রাত ১টায়  পোল্যন্ডের মুখোমুখি হচ্ছে লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা।পোলিশদের হারাতে পারলে নক আউট পর্বের পাশাপাশি গ্রুপের শীর্ষস্থানটাও নিশ্চিত হবে।দুইবারের চ্যাম্পিয়নরা এই মুহূর্তে সৌদি আরবের সাথে সমান তিন পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপের দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। পোল্যান্ডের থেকে মাত্র এক পয়েন্ট পিছিয়ে রয়েছে আর্জেন্টিনা।

মেসির জাদু আর লেভার দ্যুতির প্রত্যাশায় আছে পুরো ফুটবল দুনিয়া। শেষ হাসি হাসবেন কে?  দুজনই নিজেদের দেশের সর্বোচ্চ গোলদাতা। আজ আর্জেন্টিনা-পোল্যান্ড ম্যাচের ভাগ্য নিয়ন্তাও তাঁরা।

দুজনের অর্জনই আকাশছোঁয়া। লিওনেল মেসি ৯৯৮ ম্যাচে গোল করেছেন ৭৮৮টি, অ্যাসিস্ট ৩৪৬টি। তাঁর ক্যারিয়ার শিরোপা ৪১ আর ব্যক্তিগত শিরোপা ৭৮টি। রবার্ত লেভানদোস্কি ৮৩১ ম্যাচে গোল করেছেন ৬৩১টি, অ্যাসিস্ট ২১৬টি। এই পোলিশ তারকার ক্যারিয়ার শিরোপা ২৬ আর ব্যক্তিগত শিরোপা ৪০টি। সব মিলিয়ে দুজনের গোল ১৪১৯টি, শিরোপা ৬৭ আর ব্যক্তিগত অর্জনের মুকুট ১১৮টি। এমন সমৃদ্ধ ক্যারিয়ারের দুই তারকার বিশ্বকাপে মুখোমুখি হওয়াটা বিশেষ কিছুই।

ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর সঙ্গে লিওনেল মেসির লড়াই যে উচ্চতায় পৌঁছে, লেভানদোস্কির সঙ্গে অবশ্য সেটা কখনো হয়নি আর্জেন্টাইন জাদুকরের। প্রথম কারণ তাঁরা একই লিগে খেলেননি। দ্বিতীয়ত ব্যালন ডি’অর বা ফিফার দ্য বেস্ট নিয়ে লড়াইটাও ছিল মেসি-রোনালদোকে ঘিরে। ২০১৫-১৬ থেকে টানা আট মৌসুম ৪০টির বেশি গোল করলেও এই দুজনের দ্যুতিতে আড়ালে ছিলেন লেভানদোস্কি। তিনি আলোয় আসেন ২০১৯-২০ মৌসুমে ৫৫ গোল করে। সেবার নিশ্চিতভাবেই জিততেন ব্যালন ডি’অরের শিরোপা। কিন্তু করোনার থাবায় পুরস্কারটাই দেওয়া হয়নি সে বছর! কষ্ট ভুলতে ব্যালন ডি’অরের আদলে ট্রফি বানিয়ে মজাও করেছিলেন পোল্যান্ডের এই তারকা।

২০২০-২১ মৌসুমেও ৪৮ গোল করে ব্যালন ডি’অরের অন্যতম দাবিদার ছিলেন লেভানদোস্কি। কিন্তু ২৮ বছর পর আর্জেন্টিনাকে কোপা আমেরিকা জেতানোয় পুরস্কারটা পান মেসি। তখন থেকেই দুজনের শ্রদ্ধার সম্পর্কে আঁচ আসতে শুরু করে কিছুটা। মেসি সান্ত্বনা জানিয়ে বলেছিলেন, ‘আগের বছরের ব্যালন ডি’অর অবশ্যই লেভানদোস্কি পেত। এটা ওর বাড়িতে দিয়ে আসা উচিত আয়োজকদের। অসাধারণ এক খেলোয়াড় লেভা। ’ এর জবাবে লেভা যা বলেছিলেন সেটা ভিন্নভাবে আসে সংবাদমাধ্যমে। পরে ভুলটা ভাঙেন লেভানদোস্কিই, ‘মেসিকে নিয়ে কোনো বাজে মন্তব্য করিনি আমি। ওর কথা আমার ভালো লেগেছে। ব্যালন ডি’অর পাওয়ায় মেসিকে অভিনন্দনও জানিয়েছি। ’

মেসি ব্যালন ডি’অর পেলেও টানা দুইবার ফিফার দ্য বেস্ট পুরস্কার জেতেন লেভানদোস্কি। জাতীয় দলের অধিনায়ক হিসেবে এতে ভোট দিয়েছেন মেসি, লেভা দুজনই। তবে লেভার ভোট মেসি পেলেও আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি সেরা তিনে রাখেননি লেভাকে! পোল্যান্ডের এই তারকা তাতে ক্ষুব্ধ হয়ে সমালোচনা করেছিলেন মেসির, ‘আমি মেসিকে ভোট দিয়েছিলাম, কারণ ও বছরজুড়ে দারুণ খেলেছে। ও বলেছিল ব্যালন ডি’অরের সমর্থন নাকি আমাকে দিয়েছে। কিন্তু ফিফার ভোটের সময় হয়তো সিদ্ধান্ত বদল করেছে। যা হোক ব্যালন ডি’অরের চেয়ে দ্য বেস্ট অনেক বড় পুরস্কার। কারণ কোচ, অধিনায়ক, সমর্থকদের ভোট দিয়ে এটা নির্বাচন করা হয়। ’ তখন থেকেই উত্তেজনার শুরু দুজনের। সেটা অবশ্য মাত্রা ছাড়ায়নি। বরং বার্সেলোনায় মেসির বিকল্প হিসেবেই নিয়ে আসা হয়েছে লেভাকে।

এর আগে তিনবার মুখোমুখি হয়েছেন মেসি ও লেভানদোস্কি। সবগুলো ম্যাচই বার্সেলোনা ও বায়ার্নের হয়ে। লেভা জিতেছেন দুটি, মেসি একটিতে। লেভার একটি জয় আবার ২০২০ চ্যাম্পিয়নস লিগ কোয়ার্টার ফাইনালের সেই ৮-২ ব্যবধানে বার্সাকে বিধ্বস্ত করা ম্যাচে। তবে মুখোমুখি দেখায় দুজনেরই গোল সমান দুটি করে। জাতীয় দলের হয়ে আজই প্রথম মুখোমুখি হচ্ছেন দুজন। মঞ্চটাও বড়, বিশ্বকাপ। লিওনেল মেসি প্রথম দুই ম্যাচে দুই গোলের পাশাপাশি অ্যাসিস্ট করেছেন একটি। লেভাও সৌদি আরবের বিপক্ষে করেছেন বিশ্বকাপে নিজের প্রথম গোল। সেই গোলের পর তো আবেগে কেঁদেই ফেলেছিলেন রীতিমতো। আজ আর কান্না নয়, মেসিকেই বরং কাঁদাতে চাইবেন লেভা। আর মেসি কী চাইবেন, সেটি কারোর বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়—জীবনে একবার বিশ্বকাপ ছুঁয়ে দেখতে কাতারে এসেছেন তিনি!

Print Friendly

Related Posts