স্ট্রাইকার গনসালো রামোসের হ্যাট্টিকে সুইজারল্যান্ডকে বড় ব্যাবধানে হারিয়ে কাতার বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করেছে পর্তুগাল।
টুর্নামেন্টে আজ শেষ ষোলোর শেষ ম্যাচে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর পর্তুগাল ৬-১ গোলের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে সুইজারল্যান্ডকে।
২০০৬ আসরের পর প্রথম ফিফা বিশ্বকাপের শেষ আট নিশ্চিত করলো পর্তুগাল।
এ ম্যাচের ১৭, ৫১ ও ৬৭ মিনিটে গোল করে হ্যাট্টিক করেন রামোস। এবারের বিশ্বকাপে এটিই প্রথম হ্যাট্টিক। ম্যাচের শুরুর একাদশে না থাকলেও ৭৩ মিনিটে বদলি হিসেবে মাঠে নামেন রোনালদো।
সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের আগে গুঞ্জন ছিলো রোনালদোকে নিয়ে। শেষমেষ রোনালদোর না খেলার শঙ্কাই সত্যি হয়। সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ ষোলোর ম্যাচে দলের অধিনায়ক এবং দেশের হয়ে সর্বোচ্চ ম্যাচ ও গোলের মালিক রোনালদোকে প্রথম একাদশে রাখেননি পর্তুগাল কোচ ফার্নান্দো সান্তোস। সর্বশেষ ২০০৪ সালে ইউরোতে রাশিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের শুরুতে বেঞ্চে বসেছিলেন রোনালদো।
লুসাইলের লুসাইল স্টেডিয়ামে সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে শুরু থেকেই আক্রমনাত্মক ছিলো রোনালদো বিহীন পর্তুগাল। একাদশে এ তারকার অনুপুস্থিতি টেরই পেতে দেননি রামোস-পেপেরা। নিজেদের সীমানায় ব্লক তৈরি করে মাঝমাঠ থেকে আক্রমন করার চেষ্টা করে পর্তুগাল। প্রথম ১৫ মিনিটে সুইজারল্যান্ডের সীমানায় দু’বার আক্রমন করলেও তা ভেস্তে গেছে বক্সের ভেতর।
তবে প্রথম গোলের জন্য বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি পর্তুগালকে। ১৭ মিনিটেই গোলের আনন্দে নেচে উঠে পর্তুগাল। সুইজারল্যান্ডের বক্সের বাইরে থেকে দারুণ বোঝাপড়ায় বক্সের ভেতরে থাকা স্ট্রাইকার রামোসকে বল পাস দেন আক্রমনভাগের আরেক খেলোয়াড় হুয়াও ফেলিক্স। বলকে হালকা থামিয়ে বাঁ-পায়ে দুর্দান্ত এক শটে সুইজারল্যান্ডের বারের একদম কর্ণার দিয়ে বলকে জালে পাঠান রামোস। সুইস গোলরক্ষক ইয়ান সোমারের তাকিয়ে দেখা ছাড়া কিছুই করার ছিলো না।
১-০ গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর আক্রমনের ধার আরও বাড়িয়ে দেয় পর্তুগাল। ২২ মিনিটে রামোসের পাস থেকে বক্সের বাইরে থেকে শট নেন মিডফিল্ডার ওটাভিও। তবে সেটি জমা পড়ে সুইজারল্যান্ডের গোলরক্ষকের হাতে।
পরের মিনিটে আবারও আক্রমন চালায় পর্তুগাল। মাঝমাঠ থেকে বাতাসে ভাসিয়ে রামোসকে বল দেন পেপে। উড়ে আসা বল নিয়ন্ত্রনে নিয়ে ডি-বক্স থেকে রামোসের নেয়া শটও ধরে ফেলেন সুইস গোলরক্ষক।
৩০ মিনিটে প্রথমবার গোলের ভালো সুযোগ পায় সুইজারল্যান্ড। ২৫ গজ দূর থেকে ফ্রি-কিক পায় সুইজারল্যান্ড। মিডফিল্ডার জিহার্দান শাকিরির শট পর্তুগালের গোলরক্ষক দিয়োগো কস্তার হাতে লেগে বার ঘেষে বাইরে চলে যায়।
রামোসের গোলে এগিয়ে থাকলেও, ব্যবধান দ্বিগুনে মরিয়া ছিলো পর্তুগাল। ৩৩ মিনিটে পেপের দুর্দান্ত হেডে দ্বিতীয় গোল পায় পর্তুগিজরা। মিডফিল্ডার ব্রুনো ফার্নান্দেসের উড়ে আসা বলে অসাধারণ টাইমিংয়ে সুইজারল্যান্ডের দুই খেলোয়াড়ের মাঝে লাফিয়ে হেডে গোল করেন ৩৯ বছর বয়সী পেপে। এর মাধ্যমে বিশ্বকাপের নক আউট পর্বে সবচেয়ে বেশি বয়সে গোল করার অনন্য কীর্তি গড়েন পেপে।
৪৩ মিনিটে অল্পের জন্য গোল পায়নি পর্তুগাল। ফার্নান্দেসের পাস থেকে বক্সের ভেতর বল পেয়ে বাঁ-পায়ের শট নেন রামোস। তার শট বাঁ-দিকে ঝাপিয়ে পড়ে পর্তুগালকে নিশ্চিত গোল থেকে বঞ্চিত করেন সুইজারল্যান্ডের গোলরক্ষক।
রামোস ও পেপের জোড়া গোলে ২-০ হোলে এগিয়ে থেকে প্রথমার্ধ শেষ করে পর্তুগাল। এই অর্ধে বল দখলে এগিয়ে ছিলো পর্তুগাল। ৫৩ শতাংশ বল তাদের আয়ত্বে ছিলো। সুইজারল্যান্ডের গোলমুখে ৬টি শট নেয় পর্তুগাল। এরমধ্যে ৫টি ছিলো টার্গেটে।
বিরতির পর মাঠে নেমেই তৃতীয় গোল পেয়ে যায় পর্তুগাল। এবারও গোলের মালিক রামোস। ম্যাচের ৫১ মিনিটে ডান প্রান্ত দিয়ে ডিফেন্ডার দিয়োগো ডালটের ক্রস থেকে আলতো ছোঁয়ায় সুইস গোলরক্ষক সোমারের দুই পায়ের নিচ দিয়ে বলকে জালে পাঠান রামোস (৩-০)।
রামোসের গোলের রেশ কাটতে না কাটতে পর্তুগালকে চতুর্থ গোল এনে দেন ডিফেন্ডার রাফায়েল গুয়েরেইরো। ৫৫ মিনিটে কাউন্টার অ্যাটাকে মধ্য মাঠ থেকে বল নিয়ে ডি বক্সের ভেতরে থাকা গুয়েরেইরোকে বল দেন রামোস। ফাঁকায় থাকা গুয়েরেইরো তাড়াহুড়া না করে সুইজারল্যান্ডের গোলরক্ষকের মাথার উপর দিয়ে বলকে জালে পাঠান (৪-০)।
এক হালি গোল হজমের পর ৫৮ মিনিটে প্রথম গোল পায় সুইজারল্যান্ড। কর্ণার থেকে উড়ে আসা বলে বাঁ-দিকের গোলবার দিয়ে গোল আদায় করে নেন সুইস ডিফেন্ডার ম্যানুয়েল আকাঞ্জি।
৬৭ মিনিটে হ্যাট্টিক পূর্ণ করেন রোনালদোর পরিবর্তে দলে জায়গা পাওয়া ২১ বছর বয়সী রামোস। ফেলিক্সের কাছ থেকে বক্সের ভেতরে বল পেয়ে শট নিয়ে হাওয়ায় ভাসিয়ে এবারের বিশ্বকাপে প্রথম হ্যাটট্রিক করেন রামোস।
পর্তুগালের সব গোলেই বেঞ্চ ছেড়ে উঠে এসে উদযাপন করেছেন রোনালদো। ৫-১ গোলে এগিয়ে পর্তুগালের জয় যখন নিশ্চিত তখন ৭৩ মিনিটে রোনালদোকে মাঠে নামান পর্তুগাল কোচ। ফেলিক্সের পরিবর্তে মাঠে নামেন রোনালদো। সিআর সেভেন মাঠে নামতেই উল্লাসে মুখরিত হয়ে উঠো পুরো স্টেডিয়াম।
৮৪ মিনিটে মাঝমাঠ থেকে বল পেয়ে সুইজারল্যান্ডের বক্সের ভেতর ঢুকে গোল করেন রোনালদো। কিন্তু সেটি অফসাইডে বাতিল হয়।
ইনজুরি সময়ের দ্বিতীয় মিনিটে ডালটের কাছ থেকে বল পেয়ে দারুন শটে সুইজারল্যান্ডের জালে ষষ্ঠবারের মত বল পাঠান বদলি হিসেবে নামা রাফায়েল লিয়াও। লিয়াওর গোলের পরই ম্যাচের শেষ বাঁশি বাজে। ৬-১ গোলের বিশাল জয় দিয়ে কোয়ার্টারফাইনালে উঠলো পর্তুগাল। শেষ আটে পর্তুগালের প্রতিপক্ষ মরক্কো। শেষ ষোলোর ম্যাচে পেনাল্টিতে ৩-০ গোলে স্পেনকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে মরক্কো।