দিগন্তজোড়া হলুদ সরিষার মাঠ

শিরিন সুলতানা কেয়া: রাজশাহীতে সরিষার গাছে গাছে ফুল এসেছে। হলুদ ফুলে ভরে গেছে মাঠ। দিগন্তজোড়া হলুদ সরিষার মাঠ চোখ জুড়াচ্ছে।

এ জেলায় এবার সরিষার আবাদ রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। কৃষি বিভাগের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে এবার ৪২ হাজার হেক্টরেরও বেশি জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে। এতো বেশি পরিমাণ জমিতে অতীতে কখনোই সরিষার চাষ হয়নি।

কৃষি বিভাগ বলছে, দেশে ভোজ্যতেলের চাহিদা মেটাতে এবার সরিষার আবাদ বাড়ানোর নির্দেশনা ছিল সরকারের তরফ থেকে। তাই সরিষা চাষ বৃদ্ধিতে একটা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। তৈরি করা হয় নতুন শস্যবিন্যাস। উদ্বুদ্ধ করা হয় চাষিদের। গত মৌসুমে সরিষার ভাল দাম পাওয়ার কারণে সহজেই চাষিরা উদ্বুদ্ধ হন। এ কারণে চলতি মৌসুমে বেড়ে গেছে সরিষার আবাদ।

কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গত মৌসুমে রাজশাহীতে প্রায় ২৬ হাজার ৫৬ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছিল। চাষাবাদে বিঘাপ্রতি খরচ হয়েছিল চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা। আর প্রতি বিঘায় সরিষার উৎপাদন হয়েছিল ৫ থেকে ৬ মণ। গড়ে তিন হাজার টাকা মণ দরে সরিষা বিক্রি করে চাষিরা ভাল লাভ করেছিলেন। সরিষার আবাদ বাড়ানোর নির্দেশনা আসার পর এ বছর জেলায় লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিলো ৪০ হাজার ২৫০ হেক্টর জমি। ইতোমধ্যে ৪২ হাজার হেক্টরেরও বেশি পরিমাণ জমিতে সরিষা আবাদ হয়েছে। এবার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৬৩ হাজার ৯৯৭ মেট্রিক টন। এই লক্ষ্যমাত্রাও ছাড়িয়ে যাবে।

রাজশাহীতে বারি-১৪, বারি-১৫, বারি-১৭ ও বারি-৮ এবং বিনা-৯ জাতের সরিষা চাষ হয়েছে বেশি। বীজ ছিটানোর ৮০ থেকে ৮৫ দিনের মধ্যে বারি জাতের সরিষা ঘরে তোলা যায়। আর বিনা জাতের সরিষায় সময় লাগে ১১০ থেকে ১১৫ দিন। স্বল্প সময়ে ফসল ঘরে তুলতে চাষিরা বারি জাতের সরিষাই বেশি চাষ করেছেন। জেলার পবায় রানী-১০ নামের সরিষার একটি জাতের কিছু চাষ হয়েছে। এই সরিষার গাছ তুলনামুলক বড়।

রাজশাহী বিভিন্ন উপজেলার প্রতিটি বিলের নিচু জমিতে এবার চাষ হয়েছে সরিষা। সরেজমিনে গোদাগাড়ী উপজেলার বিলপাতিকলা, দুর্গাদহ বিল, রেলগেট বিল, সুশাডাং, বোগদামারী, কালিদীঘিসহ বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, সরিষার হলুদ ফুলে ভরে গেছে পুরো মাঠ। ভোরের কুয়াশা, সকালের মিষ্টি রোদ কিংবা বিকালের শীতের স্নিগ্ধতার মাঝে দিগন্তজোড়া হলুদ সরিষা ফুল এক অন্যরকম সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলছে মাঠে মাঠে। কোথাও কোথাও সরিষা খেতে মৌবক্স বসিয়ে মৌমাছির মাধ্যমে মধু সংগ্রহের কাজ চলছে।

গোদাগাড়ীর বালিয়াঘাট্টা গ্রামের চাষি শফিকুল ইসলাম বলেন, প্রতিবছরই তিনি চার বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেন। এবার কৃষি কর্মকর্তারা আরও বেশি জমিতে চাষ করার পরামর্শ দেন। গতবছর ভাল লাভ হওয়ার কারণে তিনি রাজি হয়ে যান। এবার চাষ করেছেন সাত বিঘা জমিতে। এই জমি থেকে ইতোমধ্যে দুই হাজার টাকার শাক বিক্রি করেছেন তিনি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) শারমিন সুলতানা জানান, সরিষার আগে ও পরে রাজশাহীতে ধানের আবাদ হয়। সরিষার আবাদ বাড়াতে এবার আমনে স্বল্পমেয়াদী ধান চাষ করানো হয়। তারপর সরিষা চাষ শুরু করা হয়েছে। ডিসেম্বরের শুরুর দিকেও কোন কোন জমিতে ধান ছিল। কোন জমির ধান উঠতে আরও দুই সপ্তাহ সময় লাগবে, এ রকম সময়ও ধানের ভেতর সরিষা বীজ ছিটিয়ে দেওয়া হয়েছে ‘রিলে ক্রপিং’ পদ্ধতিতে। এভাবে অন্তত দুই হাজার হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ করা হয়েছে।

শারমিন সুলতানা বলেন, ‘এবার আমাদের ওপর নির্দেশনা ছিল সরিষার চাষ বাড়ানোর জন্য। আমরা চাষিদের উদ্বুদ্ধ করেছি। গতবছর চাষিরা সরিষার ভাল দাম পেয়েছেন বলে সহজেই উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। এ কারণে চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রাও ছাড়িয়ে যাবে।’

Print Friendly

Related Posts