পেলে ও ম্যারাডোনার মধ্যে কে সর্বকালের সেরা—এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খুঁজতে ফুটবল মাঠে আবির্ভাব লিওনেল মেসির। সেই থেকে বিতর্কটা ত্রিমুখী—পেলে, ম্যারাডোনা, নাকি মেসি? পরের প্রজন্মের কাছে বিতর্কটা মাত্র দুজনকে ঘিরে—ম্যারাডোনা, নাকি মেসি?
আর্জেন্টিনা তৃতীয়বার বিশ্বকাপ জয়ের পর সাবেক ইংলিশ মিডফিল্ডার ডেক্লান রাইসের রায়, ‘(মেসি) সর্বকালের সেরা। মেসির মতো ফুটবলার আর দেখাও যাবে না।’
সময়ের আঁচলে বাঁধা সব কীর্তি। তাই যে যাঁর সময়ের সেরা। পেলে ও ম্যারাডোনার মধ্যে কে সর্বকালের সেরা—এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খুঁজতে ফুটবল মাঠে আবির্ভাব লিওনেল মেসির। সেই থেকে বিতর্কটা ত্রিমুখী—পেলে, ম্যারাডোনা, নাকি মেসি? পরের প্রজন্মের কাছে বিতর্কটা মাত্র দুজনকে ঘিরে—ম্যারাডোনা, নাকি মেসি? গত পরশু লুসাইল স্টেডিয়ামে আর্জেন্টিনা তৃতীয়বার বিশ্বকাপ জয়ের পর সাবেক ইংলিশ মিডফিল্ডার ডেক্লান রাইসের রায়, ‘(মেসি) সর্বকালের সেরা।
মেসির মতো ফুটবলার আর দেখাও যাবে না। ’
রাইস মহাতারকা নন, বিশ্বকাপ জয়ের আনন্দও তাঁর জানা নেই। তবে বাস্তিয়ান শোয়েনস্টেইগার জানেন কোন উচ্চতায় উঠে বিশ্বকাপ জিততে হয়। রবিবারের ফাইনালের পর মেসিবন্দনায় জার্মানির ২০১৪ বিশ্বকাপজয়ী দলের এই তারকাও টুইট করেছেন, ‘অবশেষে তাঁর অসাধারণ ক্যারিয়ারে বিজয় মুকুট যুক্ত হলো। ’ সাবেক ইংলিশ ফুটবলার জেমি ক্যারাঘারের মনেও মেসির শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে আর কোনো সংশয় নেই। ফ্রান্সকে হারিয়ে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয় নিশ্চিত হতেই টুইটারে সর্বকালের সেরা পাঁচ ফুটবলারের নাম পোস্ট করেছেন তিনি। সবার ওপরে মেসি, এরপর ম্যারাডোনা ও পেলে। চার নম্বরে ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো এবং শেষজন জিনেদিন জিদান।
সাবেকদের এই রায় নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে। বিশেষ করে পেলে কিংবা ম্যারাডোনার সময়ের তুলনায় এখন ফুটবল আইন বাড়তি নিরাপত্তা দেয় মেসিদের। তবু দর্শকের চোখের আনন্দ আর মেসির কাপবোর্ডে জমা হওয়া পদকগুলো তো আর মিছে নয়। প্রায় দুই যুগের ক্যারিয়ারে ক্লাব পর্যায়ে মেসি যতগুলো ট্রফি জিতেছেন, পেলে কিংবা ম্যারাডোনার অতগুলো নেই। প্রতিদ্বন্দ্বিতার মান বিচারে ক্লাব পর্যায়ে পেলে কিংবা ম্যারাডোনার চেয়ে বার্সেলোনার জার্সিতে মেসির লড়াইটা অনেক কঠিন ছিল। এর মধ্যে আঞ্চলিক শ্রেষ্ঠত্ব, কোপা আমেরিকা জয়ের পর আরাধ্য বিশ্বকাপও জিতেছেন মেসি। ৩৫ বছর বয়সেও কী অবিশ্বাস্য নৈপুণ্য দেখিয়েছেন তিনি।
তাই ‘চিরশত্রু’ ব্রাজিলের ও গ্লোবো দৈনিকের শিরোনাম হয়েছে, ‘ঋণ শোধ হলো’। মানে, মেসিকে তাঁর পাওনা বুঝিয়ে দিল ফুটবল। ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টাইমস সাফ জানিয়ে দিয়েছে, ‘দ্য গ্রেটেস্ট’, সর্বকালের সেরা। সে দেশের ট্যাবলয়েড ডেইলি মিররও কোনো রাখঢাক করেনি। নিজেদের প্রতিবেদনে মেসিকে ‘সর্বকালের সেরা’ বলে উল্লেখ করেছে। দ্য সান অবশ্য মেসির প্রশংসার পাশাপাশি ১৯৮৬ বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে ডিয়েগো ম্যারাডোনার ‘হ্যান্ড অব গড গোল’ প্রসঙ্গে খোঁচাও দিয়েছে, ‘(বিশ্বকাপ) ঈশ্বরের হাতে। ’ জার্মানির দ্য সুয়েডয়েচে জেইটুংয়ের শিরোনামেও প্রশংসা আর পুরনো নিন্দার মিশেল, ‘ঈশ্বরের পা’।
কিন্তু পেলে থেকে মেসি—এঁদের কি আর শুধু শিরোপার ওজনে মাপা যায়? মাত্র ১৭ বছর বয়সে বিশ্বকাপ জিতেছিলেন পেলে। সব মিলিয়ে তিনটি, যে রেকর্ড আর কারোর নেই। ব্রাজিলের ‘ফুটবলের রাজা’র রাজত্বে আশির দশকে হানা দিলেন ডিয়েগো আরমান্ডো ম্যারাডোনা। মন্ত্রমুগ্ধের মতো তাঁর অবিশ্বাস্য ফুটবল সামর্থ্য দেখেছে বিশ্ব। মাঝখানে জিদান, ব্রাজিলের ‘দ্য ফেনোমেনন’ রোনালদো, রোনালদিনহোরা ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই করে নিয়েছেন। আসলে তাঁদের দূরের তারকা বানিয়ে দিয়েছেন লিওনেল মেসি ও ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো। একুশ শতকে এর চেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বিতা ক্রীড়াঙ্গনের ইতিহাসেই বিরল। এক-দুই বছর তো নয়, যুগ পেরিয়ে ক্রীড়াঙ্গনের শাশ্বত প্রতিদ্বন্দ্বিতার ফ্রেম হয়ে আছেন তাঁরা।
সেই প্রতিদ্বন্দ্বিতার ফায়সালা অবশ্য হয়ে গেছে। জয়ী লিওনেল মেসি। সাফল্যের স্মারক ট্রফির সংখ্যা কিংবা বিস্ময়কর প্রতিভার স্ফুরণ—সব বিবেচনাতেই। ‘মেসি সর্বকালের সেরা’—এই রায় তো মনগড়া কিছু নয়।