মানজুরি তানভীর নিশি ও সালাহউদ্দিন কাদের রূপন
পদ্মায় ডুবে মারা যাওয়া বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অলরাউন্ডার সানজামুল ইসলামের একমাত্র বোন মানজুরি তানভীর নিশি (৩২) ও ভগ্নিপতি সালাহউদ্দিন কাদের রূপনের (৩৮) জানাজা ও দাফন একসাথেই সম্পন্ন হয়েছে।
শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) বিকাল সাড়ে ৪টায় রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা সদরের ফাজিলপুর গোরস্থানে তাদের জানাজা শেষে পাশাপাশি কবরে দাফন করা হয়। একসঙ্গে দুজনকে হারিয়ে এখন শোকের সাগরে ভাসছে ক্রিকেটার সানজামুলের পরিবার।
এর আগে জানাজা নামাজে আত্মীয়-স্বজন, এলাকাবাসীসহ বিপুল সংখ্যক মানুষ অংশ নেন। তাদের মৃত্যুতে গোদাগাড়ী পৌর এলাকায়ই শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এলাকার লোকজন এ দম্পতির প্রশংসা করে তাদের মৃত্যুর জন্য আফসোস করছেন।
ডুবে মারা যাওয়া রূপনের বাড়ি গোদাগাড়ী পৌরসভার শ্রীমন্তপুর মহল্লায়। তিনি উত্তরা ব্যাংকের কিশোরগঞ্জের একটি শাখার ব্যবস্থাপক ছিলেন। ক্রিকেটার সানজামুল ইসলামের বাড়িও গোদাগাড়ী উপজেলা সদরে। সানজামুলরা মোট আট ভাই। তাদের একমাত্র বোন ছিলেন নিশি। তিনি সবার ছোট। সানজামুল হকের এক ভাই কানাডায় থাকেন। অন্য সবাই থাকেন দেশে।
গত তিন বছর ধরে প্রতি ডিসেম্বরে তারা সব ভাই-বোন একসঙ্গে হয়ে পারিবারিক মিলনমেলা হিসেবে পদ্মার চরে পিকনিক করতে যেতেন। শুক্রবার দুপুরে সাত ভাইয়ের পরিবার এবং রূপনের পরিবারের সদস্যরা চতুর্থ বছরের মতো চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার বালুগ্রাম নারায়ণপুর এলাকায় পদ্মা নদীর মাঝের একটি চরে পিকনিক করতে যান। দুটি নৌকা ডেকোরেটর দিয়ে সাজিয়ে প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ জন গিয়েছিলেন পিকনিকে।
দুপুরে বাবুর্চি যখন রান্না করছিলেন, তখন কেউ কেউ নদীতে গোসলে নামেন। এ সময় রূপন নিশির বড় ভাই শামিমকে ডাক দিয়ে বলেন, ‘ভাইয়া বাঁচান, নিশি ডুবে যাচ্ছে, আমিও যাচ্ছি।’ এরপর রূপন তার স্ত্রীকে মাঝিকে ধরিয়ে দেন। কিন্তু তিনি নিজে উঠতে পারেননি।
নিশিকে উদ্ধারের পর হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। সেখানেই তার মৃত্যু হয়। একদিন পর পাওয়া যায় তার স্বামীর লাশ। স্বামীর লাশ উদ্ধারের পর হাসপাতালের হিমঘর থেকে নিশির লাশ আনা হয়।
ক্রিকেটার সানজামুলের ভাষ্যমতে, কম পানিতে সবাই গোসলে নামলেও পাশেই খাদ ছিল। সেটা কেউ বুঝতে পারেনি। একই সময়ে রূপনের বোন রিতাও ডুবে যাচ্ছিলেন। তিনি নিজে রিতাকে বাঁচিয়েছেন। রিতার সঙ্গে আবার সানজামুলের এক ভাইয়ের বিয়ে হয়েছে।
শুক্রবার দুপুরে রূপন নিখোঁজ হওয়ার পর সন্ধ্যা পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল অভিযান চালিয়েও তাকে উদ্ধার করতে পারেনি। শনিবার সকাল থেকে আবার অভিযান শুরু হয়। আত্মীয়-স্বজনেরাও নদীতে বড় বড় বড়শি ফেলে উদ্ধার কাজ চালাচ্ছিলেন। বেলা ১১টার দিকে ঘটনাস্থল থেকে খুব কাছেই বড়শিতে রূপনের লাশ বাধে। এরপর তা উদ্ধার করে বাড়ি নিয়ে আসা হয়।
পরে বিকালে একসঙ্গেই তাদের জানাযা শেষে দাফন করা হয়। এই দম্পতির দুটি ছেলে আছে। বড় ছেলে ইহান (৮) দ্বিতীয় শ্রেণিতে এবং ছোট ছেলে ইয়াজদান (৫) প্লে’তে পড়াশোনা করে।