ঈদে সিলেটে ব্যাপক পর্যটক সমাগমের সম্ভাবনা

নূর আহমদ: সিলেটের পর্যটন কেন্দ্রগুলোকে ঈদে দর্শনার্থী বরণের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। জাফলং, বিছনাকান্দি, রাতারগুল, পান্তুমাই, সাদাপাথর, লোভছড়াসহ সবকটি পর্যটন স্পটে এখন অন্যরকম আমেজ। বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও দোকানপাটসমূহও প্রস্তুত। বিভিন্ন রিসোর্টসহ হোটেল মোটেলগুলোতেও সাজ সাজ রব। ঈদের ঠিক আগমুহূর্তে সিলেট নগরীর রেস্টুরেন্টগুলোও নতুন রূপ নিয়েছে।

অন্যদিকে আসন্ন ঈদুল ফিতরের ছুটিতে আসা পর্যটক দর্শনার্থীদের ভ্রমণ শান্তিপূর্ণ ও নির্বিঘ্নকরণে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসন।

সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সিলেটের হযরত শাহজালাল (রহ:) এর মাজার, শাহপরান (রহ:) এর মাজার, জাফলং, পাংতুমাই ঝর্ণা, সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা, রাতারগুল সোয়াম ফরেস্ট, কুলুম ছড়া, মালনীছড়া চা বাগান, খাদিম জাতীয় উদ্যান, ডিবির হাওর, উৎমাছড়া ঝর্ণা, লোভাছড়া, লালাখাল, বিছানাকান্দিও ভোলাগঞ্জ সাদা পাথরসহ সুনমাগঞ্জ ও মৌলভীবাবাজারের বিভিন্ন পর্যটন স্পটে বেড়াতে আসেন দর্শনার্থীরা। ঈদ বা অন্য যেকোন ছুটিতে প্রথমেই সিলেটকে বেছে নেন ভ্রমণ পিপাসু লোকজন। গত বছর বন্যা ও পদ্মা সেতু উদ্বোধনের প্রভাব পড়েছিলো সিলেটের পর্যটন শিল্পে। তবে এবার তা ছাপিয়ে ব্যাপক পর্যটক সমাগম ঘটবে বলে আশাবাদী পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।

বিশেষ করে গোয়াইনঘাট উপজেলার আওতাধীন জাফলং, বিছনাকান্দি, রাতারগুলের পর এবার পান্তুমাইয়ে ফ্যাসিলিটিজ সুবিধা বৃদ্ধি করা হয়েছে। সাধারণত এই উপজেলার জাফলং জিরো পয়েন্ট, বিজিবি ক্যাম্প, খাসিয়া পল্লী, দেশের একমাত্র সমতল চা বাগান, রাতারগুল সোয়াম ফরেস্ট, জাফলং মায়াবতী ঝরনা, বিছনাকান্দি, পান্তুমাই এবং মরকিটিলায় ঈদ, পূজা এবং সরকারি বিভিন্ন ছুটিতে পর্যটক দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায়। তাই এই উপজেলায় পর্যটকদের ভ্রমণ আরামদায়ক ও নির্বিঘ্নকরণে প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগের তোড়জোড় শুরু হয়। এবারো তার ব্যতিক্রম ঘটছেনা। গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওয়াশ ব্লক, তথ্য কেন্দ্র, নৌ ও পরিবহন সুবিধা, স্বেচ্ছাসেবক এর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

গোয়াইনঘাটের সবচেয়ে আলোচিত পর্যটন স্পট জাফলংয়ের গ্রিন রিসোর্টের স্বত্বাধিকারী বাবলু বখত জানান, প্রতি বছর ঈদুল ফিতরে ঢল নামে পর্যটক দর্শনার্থীদের। এবারো পর্যটকদের আনাগোনা আগেকার মতো অথবা বেশি হতে পারে। এরই লক্ষ্যে আমাদের কাস্টমারদের কথা বিবেচনা করে আমরা বাড়তি ব্যবস্থা নিয়েছি।

প্যারিস রেস্টুরন্টের স্বত্বাধিকারী আনোয়ার হোসেন জুবের জানান, ভ্রমণে আসা পর্যটক দর্শনার্থীদের নির্ভেজাল খাবার পরিবেশন এবং ন্যায্য মূল্যে সেবা প্রদানে আমরা বদ্ধপরিকর। পর্যটকরা যাতে হয়রানির শিকার না হন সে বিষয় আমাদের মাথায় রয়েছে।

কোম্পানীগঞ্জ ট্যুরিস্ট ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আবিদুর রহমান জানান, যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় সবচেয়ে বেশি পর্যটক সমাগম ঘটে সাদাপাথরে। এবারো তাই হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তিনি সাদাপাথর পর্যটক বরণে প্রস্তুত বলে জানান।

সিলেট ট্যুরিজম ক্লাবের সভাপতি হুমায়ুন কবির লিটন জানান, সিলেট শহরের অনেক আবাসিক হোটেলে রুম বরাদ্দ শুরু হয়ে গেছে। বরাবরই কিছু পর্যটক আগে রুম বুকিং না দেওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েন। যারা সিলেট আসতে চান, আগেভাগেই রুম বুক করলে হয়রানী মুক্ত থাকতে পারবেন।

সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি খন্দকার সিপার আহমদ বলেন, সিলেটের পর্যটন শিল্প নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেটে পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটলে আমাদের প্রবাসী বর্তমান প্রজন্মকে সিলেটমুখি করা যাবে। একই সাথে দেশের পর্যটনের উন্নয়ন হবে। সিলেটের রাস্তাঘাটগুলোর উন্নয়ন করা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।

ট্যুরিস্ট পুলিশ জাফলং সাব জোনের ইন্সপেক্টর রতন শেখ এবং গোয়াইনঘাট থানা অফিসার ইনচার্জ কেএম নজরুল জানান, গোয়াইনঘাটের পর্যটন স্পটসমূহে বেড়াতে আসা পর্যটক দর্শনার্থীরা চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, ইভটিজিং, অজ্ঞান পার্টি, জুয়াড়ি, ট্যুরিস্ট গাইড ও ক্যামেরাম্যানদের দ্বারা প্রতারিত না হন, সে লক্ষ্যে ব্যাপক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ট্যুরিস্ট পুলিশ এবং গোয়াইনঘাট থানা পুলিশ পোশাকে এবং সাদা পোশাকে একাধিক ইউনিট নিয়মিত টহলের পাশাপাশি সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।

সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান বলেন, সিলেটের পর্যটন স্পটসমূহে পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তা বিধানে এবং তাদের ভ্রমণ নির্বিঘ্নকরণে সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসন পদক্ষেপ নিয়েছে। বৃষ্টিপাত ও বর্ষণমুখর পরিবেশে সিলেটের পর্যটন স্পটগুলো আপন রূপ মেলে ধরে। এই বর্ষায় যাতে ভ্রমণ নির্বিঘ্ন হয় সব ব্যবস্থা করা হবে।

 

Print Friendly

Related Posts