টানা পাঁচ দিন মুষলধারায় আষাঢ়ে বর্ষণে ধুয়ে গেছে কোরবানির পশুর বর্জ্য। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় নগরজীবনে ছিল অসহনীয় দুর্ভোগ। বর্জ্য থেকে সৃষ্ট দুর্গন্ধ ও জলাবদ্ধতা মিলিয়ে নগরজীবনে অস্বস্তির পরিবেশ সৃষ্টি করে। পাশাপাশি নির্ধারিত সময়ে কোরবানির বর্জ্য অপসারণের দাবি করেছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন।
বাংলাদেশের ওপর মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় পাঁচ দিন ধরে রাজধানীতে বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। এতে রাজধানীর অনেক এলাকায় তৈরি হয়েছে জলাবদ্ধতা। ঈদুল আজহার ছুটিতে যাঁরা রাজধানীতে ছিলেন, তাঁদের অসহনীয় ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। এই সুযোগে অ্যাপভিত্তিক রাইড, রিকশাচালক ও সিএনজি অটোরিকশা চালকরা ইচ্ছামতো ভাড়া আদায় করেছেন। অতিরিক্ত ভাড়া সাধারণ মানুষের কাছে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দেখা দেয়।
রাজধানীর উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ঘোষণা দিয়েছিল, আট ঘণ্টার মধ্যে কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণ করা হবে। নির্ধারিত সময়ে বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে বলে দাবি সংস্থাটির।
অন্যদিকে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) আশ্বাস দিয়েছিল, ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই কোরবানির বর্জ্য অপসারণ করা হবে।নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বর্জ্য অপসারণের দাবি ডিএসসিসিরও।
তকাল শনিবার সংবাদ সম্মেলনে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান দাবি করেন, এদিন দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত ১৭ হাজার ৮৬৫ টন বর্জ্য মাতুয়াইল ল্যান্ডফিলে ফেলা হয়েছে। এজন্য বর্জ্যবাহী গাড়িগুলো ৪ হাজার ৫২টি ট্রিপ দিয়েছে। পাশাপাশি নিয়মিত বর্জ্য অপসারণ অব্যাহত আছে।
বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম দ্রুত শেষ করতে ডিএসসিসির নগর ভবনে কন্ট্রোল রুম চালু হয়। মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস নিজে বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম মনিটর করেন। ঈদের দ্বিতীয় দিন রাত পৌনে ৮টার মধ্যেই দ্বিতীয় দিনের বর্জ্য অপসারণও সম্ভব হয়। ডিএসসিসি ও ঢাকাবাসী মিলে পদক্ষেপ নেওয়ায় বর্জ্য অপসারণে সফলতা পাওয়া গেছে বলে গণমাধ্যমকে জানান মেয়র।
তিনি বলেন, প্রথম দিনের বর্জ্য ১১ ঘণ্টায় অপসারণ করা হয়। দ্বিতীয় দিনের বর্জ্য রাত পৌনে ৮টার মধ্যে অপসারণ সম্ভব হয়েছে।
অন্যদিকে ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম ঈদের দিন দুপুর ২টায় ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের মনিপুর এলাকায় বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। ঈদের দিন রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত ১৪ হাজার ৫০০ টন বর্জ্য আমিন বাজার ল্যান্ডফিলে ফেলা হয়। এ জন্য ২ হাজার ৭১৩টি ট্রিপ দেয় বর্জ্যবাহী গাড়িগুলো। নির্ধারিত আট ঘণ্টার মধ্যে ৫৪টি ওয়ার্ডের শতভাগ বর্জ্য অপসারণ করতে সক্ষম হয় ডিএনসিসি। এ কাজে ১১ হাজার কর্মী নিয়োজিত ছিলেন।
অন্যদিকে রাজধানীর কিছু এলাকায় রাস্তার পাশে কিংবা খালের পাড়সহ যত্রতত্র বর্জ্য ফেলে রাখা হয়। এসব বর্জ্য থেকে দুর্গন্ধ ছড়িয়েছে। তবে বৃষ্টির পানিতে সেগুলো ধুয়ে খাল-জলাশয়ে গিয়ে পড়েছে। অনেক স্থানে জলাবদ্ধতা রক্তের রং ধারণ করে। রাজধানীর গুলশানের মতো জায়গায়ও এ দৃশ্য দেখা গেছে। এ নিয়ে অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনায় মেতে উঠেছেন।
গত ২৭ জুন মঙ্গলবার থেকে শুরু হয় ঈদ উপলক্ষে পাঁচ দিনের টানা ছুটি। মঙ্গলবারও সারাদিন রাজধানীতে ছিল হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত। আবহাওয়া অফিস জানায়, বুধবার সকাল ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীতে ১১৫ মিলিমিটার, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ৩৬ মিলিমিটার এবং শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে শনিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ৯১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। গতকাল বিকেল ৩টার পর শুরু হয় ভারী বর্ষণ।
টানা পাঁচ দিনের বৃষ্টিতে মিরপুরের কালসী, নিউমার্কেট, গ্রিন রোড, মিরপুর ১০ নম্বর, শান্তিনগর, মালিবাগ, যাত্রবাড়ীসহ অনেক এলাকায় মারাত্মক জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।