মনোয়ার চৌধুরী : প্রেমের টানে এবার কাঁটাতারের বাধা অতিক্রম করে বাংলাদেশে এসেছেন কারিশমা শেখ (১৯) নামের এক ভারতীয় তরুণী। এসেই বিয়ের পিঁড়িতে বসেছেন ভালোবাসার মানুষ বাংলাদেশি প্রেমিক আশরাফুল আলম (২২) এর সঙ্গে। নতুন দম্পতিকে দেখতে তাদের বসতবাড়িতে ভিড় করছেন আশপাশের লোকজন।
কারিশমা ভারতের আসাম প্রদেশের শোনিতপুর বালিডাঙ্গা গ্রামের আব্দুল কাশিম শেখের মেয়ে। আসামের ডিকেরায় হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন তিনি। কারিশমার বাড়িতে ছোট দুই ভাই আছে। তিন ভাইবোনের মধ্যে তিনিই সবার বড়।
আর আশরাফুল আলম সুনামগঞ্জ জেলার বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ধনপুর ইউনিয়নের চরগাঁও গ্রামের আলফাজ উদ্দিনের ছেলে। তিনি উপজেলার দীগেন্দ্র বর্মণ সরকারি ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী। এ যুগল তাদের পরিবারের সহযোগিতায় গত ১৯ জুলাই ইসলামী শরীয়া অনুযায়ী বিয়ে সম্পন্ন করেন।
এই যুগলের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ফেসবুকে পরিচয়ের সুবাদে তিন বছর আগে কারিশমার সাথে আশরাফুলের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। দীর্ঘদিন পরিবারের অজান্তে যতদিন যায় তাদের সম্পর্ক আরও গভীর হতে থাকে। এক পর্যায়ে ভারতীয় তরুণীর পরিবার জেনে যায় তাদের প্রেমের বিষয়টি। প্রেমে বাধা দেন বাবা। আশরাফুল অন্য দেশের নাগরিক হওয়ায় কারিশমার বাবা কিছুতেই রাজি হননি। কিন্তু শত চেষ্টায় বাবাকে এক পর্যায়ে রাজি করাতে সক্ষম হন কারিশমা। এরপর ছেলের পরিবারেরও সম্মতি মেলে। এবার বাধা হয়ে দাঁড়ায় দুদেশের সীমান্তের কাঁটাতার আর তাদের দুজনের জাতীয়তা। অবশেষে সববাধা ডিঙ্গিয়ে পরিবারের সহযোগিতায় বৈধপন্থায় বেনাপোল সীমান্ত হয়ে গত ১৬ জুলাই সুনামগঞ্জের আশরাফুলের বাড়িতে আসেন কারিশমা শেখ। বাংলাদেশে আসার মাত্র তিনদিন পর (১৯ জুলাই) সুনামগঞ্জ নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে ইসলামী শরীয়া অনুযায়ী বিয়ে সম্পন্ন হয় তাদের।
কারিশমা শেখ জানান, জানাজানির পর বাবা প্রথমে বিষয়টি মানতে পারছিলেন না। অনেক চেষ্টায় আশরাফুলের পরিবারের সাথে যোগাযোগ হওয়ায় পর সম্পর্ক মেনে নেন তিনি। পরে বাবার সহযোগিতায় পাসপোর্ট করে ভিসা নিয়ে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে ১৪ জুলাই রওনা হন। গোহাটি-কলকাতা থেকে বেনাপোল সীমান্তে হয়ে আসতে সময়ে লেগেছে দুই দিন। কেবল ভালোবাসার মানুষের সাথে জীবন কাটানোর জন্যে মা বাবা পরিবার ছেড়ে একাই ঝুঁকি নিয়ে এতদূর চলে আসেন। আর পছন্দের মানুষকে বিয়ে করে অনেক সুখে আছেন বলে জানিয়েছেন কারিশমা শেখ।
আশরাফুল আলম বলেন, কারিশমাকে পেয়ে আমি খুবই খুশি। সে দেশের আইন অনুযায়ী বিয়ে করেছি। এতে আমার ও কারিশমার পরিবারের সবাই খুশি। আমরা দুজন সারাজীবন এক সঙ্গে থাকতে কারিশমাকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদানে বাংলাদেশের সরকারের কাছে আমি দাবি জানাই। আমাদের জন্য সবাই দোয়া করবেন।
আশরাফুল আলমের বাবা আলফাজ উদ্দিন বলেন, মেয়েটা অনেক লক্ষী। অল্প সময়েই আমাদের সবাইকে খুব আপন করে নিয়েছে। আল্লাহ আমাকে তিন মেয়ে দিয়েছে এখন ছেলের বউ আরেক মেয়ে পেলাম। আমার ছেলেকে ভালোবেসে ভদ্র একজনের মেয়ে আমার বাড়িতে তার দেশসহ সবকিছুর মায়া ত্যাগ করে এক দেশ থেকে আরেক দেশে এসেছে। আমিও তারে নিজের করে দেখবো। আমার ছেলে বাচ্চা মানুষ, মেয়েটার বয়স কম- দোয়া করি তারা সংসার জীবনে সুখের হোক।
রোববার (২৩ জুলাই) রাত ১০টায় বিশ্বম্ভরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইফুল ইসলাম এ যুগলের সকল কাগজপত্র বৈধ আছে বলে নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ভারতের এই তরুণী বিশ্বম্ভরপুর থানা এলাকার যে ছেলেকে বিয়ে করেছেন তারা দেশের আইন মেনেই করেছেন। এছাড়া ভারতের এই তরুণী তার দেশ থেকে বাংলাদেশে বৈধভাবে এসেছেন। তার পাসপোর্ট আছে, তিন মাস মেয়াদের ভিসাও আছে। বর্ডার ক্রসে কোনো সমস্যা নেই তাদের কাগজপত্র সব ঠিক আছে।