ট্রাম্প সোমবার নিশ্চিত করেছেন যে, সীমান্ত নিরাপত্তায় একটি জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করার পরিকল্পনা করছেন তিনি। পাশাপাশি, আমেরিকায় অবৈধ শরনার্থীদের ফেরত পাঠানোর জন্য আমেরিকার সেনাকে ব্যবহার করার পরিকল্পনা করছেন বলেও তিনি জানিয়েছেন।
আমেরিকায় সদ্যসমাপ্ত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জিতেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। আগামী বছরের জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউসে প্রবেশের কথা রয়েছে তাঁর। তবে প্রসিডেন্ট নির্বাচনে জিতে হোয়াইট হাউসে প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করার পর থেকেই একের পর এক সিদ্ধান্তের কথা জানাচ্ছেন ট্রাম্প।
সম্প্রতি আমেরিকার ধনকুবের ইলন মাস্ক এবং ভারতীয় বংশোদ্ভূত শিল্পপতি বিবেক রামস্বামীকে নিয়ে ‘ডিপার্টমেন্ট অফ গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি’ বা ‘ডজ’ নামে একটি মন্ত্রক চালু করার ঘোষণা করেছেন তিনি। এই নিয়ে আমেরিকার রাজনীতিতে ইতিমধ্যেই হইচই পড়েছে।
তবে সম্প্রতি ট্রাম্প আরও একটি ঘোষণা করেছেন, যা আলোড়ন ফেলেছে আমেরিকা-সহ তার পড়শি দেশগুলির রাজনীতিতে। কী সেই ঘোষণা?
ট্রাম্প সোমবার নিশ্চিত করেছেন যে, সীমান্ত নিরাপত্তায় একটি জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করার পরিকল্পনা করছেন তিনি। পাশাপাশি, আমেরিকায় অবৈধ শরনার্থীদের ফেরত পাঠানোর জন্য আমেরিকার সেনাকে ব্যবহার করার পরিকল্পনা করছেন বলেও তিনি জানিয়েছেন।
বিনা নথিতে আমেরিকায় শরণার্থী সমস্যা নিয়ে উদ্বেগের কথা নির্বাচনী প্রচারে নেমে বার বার শোনা গিয়েছিল ট্রাম্পের কণ্ঠে। বলা ভাল, আমেরিকায় অবৈধ ভাবে শরণার্থীদের প্রবেশ বন্ধ করার প্রতিশ্রুতিই ছিল তাঁর নির্বাচনী প্রচারের অন্যতম ‘ট্রাম্প-কার্ড’।
ট্রাম্পের দাবি, জো বাইডেন সরকারের আমলে রেকর্ড সংখ্যক মানুষ সীমান্ত পেরিয়ে অবৈধ ভাবে আমেরিকায় প্রবেশ করেছেন।
একই সঙ্গে ওই লক্ষ লক্ষ অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর এবং মেক্সিকো সীমান্ত স্থিতিশীল করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ট্রাম্প। তবে নতুন ঘোষণার পরে ট্রাম্প তাঁর সেই প্রতিশ্রুতি পূরণের পথে এক ধাপ এগোলেন বলেই মনে করছে আন্তর্জাতিক মহল।
সম্প্রতি সমাজমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ আমেরিকার এক জন রক্ষণশীল সমাজকর্মী পোস্ট করেন যে, আমেরিকার নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট একটি জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করার জন্য প্রস্তুত এবং একটি গণ নির্বাসন কর্মসূচির জন্য সামরিক শক্তি ব্যবহার করবেন।
সেই পোস্টেই ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন, এই কথা সত্যি। সম্মতিসূচক মন্তব্য হিসাবে লেখেন ‘ইয়েস’। আর তার পর থেকেই জল্পনা তৈরি হয়েছে।
ইতিমধ্যেই অবৈধ শরণার্থীদের নিয়ে কট্টর অবস্থান নিয়ে একটি মন্ত্রক তৈরির ঘোষণা করেছেন ট্রাম্প। অভিবাসন এবং শুল্ক দফতরের প্রাক্তন ভারপ্রাপ্ত প্রধান টম হোম্যানকে তার দায়িত্বও দিয়েছেন।
জুলাই মাসে রিপাবলিকান ন্যাশনাল কনভেনশনে উপস্থিত হয়ে হোম্যান বার্তা দিয়েছিলেন, ‘‘লক্ষ লক্ষ অবৈধ শরণার্থীদের জন্য আমার বার্তা রয়েছে। আপনারা এখনই ব্যাগ গোছানো শুরু করে দিন।’’ আমেরিকার প্রশাসনের অনুমান, প্রায় ১ কোটি ১০ লক্ষ মানুষ আমেরিকায় অবৈধ ভাবে বসবাস করছেন।
তবে ট্রাম্পের নির্বাসন পরিকল্পনা প্রায় দু’কোটি পরিবারকে সরাসরি প্রভাবিত করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
বহু দিন ধরেই সীমান্ত নিয়ে মেক্সিকোর সঙ্গে উত্তেজনা চলছে আমেরিকার। অবৈধ অভিবাসীদের ঠেকানো নিয়ে বছরের পর বছর ধরে অশান্তিও হয়েছে বার বার।
ট্রাম্পের দাবি, দীর্ঘ দিন ধরে অবৈধ শরণার্থীরা ‘আক্রমণ’ করে চলেছে আমেরিকায়। তাঁর উদ্বেগ, অবৈধ শরণার্থীরা আমেরিকানদের ধর্ষণ এবং হত্যা করবে।
নির্বাচনী প্রচার চলাকালীন বার বার অনথিভুক্ত অভিবাসীদের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছেন ট্রাম্প। অবৈধ শরণার্থীরা আমেরিকার ‘রক্তকে বিষাক্ত’ করে তুলছে বলেও মন্তব্য করেছেন। যদিও নিন্দকদের একাংশের মতে, প্রচার চলাকালীন ট্রাম্প অভিবাসন পরিসংখ্যান এবং নীতি নিয়ে তাঁর সমর্থকদের বিভ্রান্ত করেছেন।
আমেরিকার সীমান্ত নিরাপত্তায় একটি জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করার ইঙ্গিত দিলেও অভিবাসন সংক্রান্ত ধরপাকড় নিয়ে এখনও বিস্তারিত ভাবে কিছু বলেননি ট্রাম্প। তবে নির্বাচনী প্রচারে বার বার ১৭৯৮ সালের ‘এলিয়েন এনিমিজ় অ্যাক্ট’ চালু করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ট্রাম্প।
ট্রাম্প সমালোচকদের দাবি, এই আইনটি পুরনো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানি-আমেরিকানদের যথাযথ প্রক্রিয়া ছাড়াই বন্দিশিবিরে আটকে রাখার জন্য শেষ এই আইন ব্যবহার করা হয়েছিল।