জেরিন হাসান
কোন দেশের কথা মনে পড়ছে না। তবে তুর্কিস্থানের ইস্তানবুল হতে পারে। আমাদের দেখে জিজ্ঞাসা করেছিল, আপনারা কোথাকার। বললাম, বাংলাদেশ। বলে সেই দেশ, যে পাকিস্তান এর সঙ্গে ছিল। পরে যুদ্ধ করে স্বাধীন করেছে। বললাম, হ্যাঁ। শুনে ভাল লাগল যে, বিশ্ব আমাদেরকে কিভাবে চিনে। দেশটা স্বাধীন কিভাবে করেছি।
মালদ্বীপ-এ গেলাম। ট্যাক্সিচালক আমাদের এয়ারপোর্ট থেকে হোটেলে নিচ্ছিল। জিজ্ঞাসা করল কোন দেশ? গায়ের চামড়া আর গঠনের জন্য হঠাৎ করে আমাদেরকে ভারতীয়ই ভাবে। আর তাছাড়া ভারত তো অনেক বড় দেশ, আর প্রচারও অনেক বেশি। চিনেও বেশি। তো বললাম বাংলাদেশ থেকে আসছি। বলে উঠলো- ও তোমাদের দেশে তো অনেক জনসংখ্যা। তার উপর তোমাদের প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) আরেক দেশের (মিয়ানমার) রোহিঙ্গাদেরও জায়গা দিয়েছে। নিজের দেশেই এতো লোক, আবার অন্যদের আশ্রয় দাও তোমরা। ভালই! ভেবে ভালো লাগলো আমাদের দেশের লোকেরা নিজেরা না খেয়ে থাকলেও অন্যদের ভালো রাখতে বা আশ্রয় দিতে দ্বিধা করে না। সাথে ছোটবেলায় পড়েছিলাম, বাংলাদেশের মানুষ যে অতিথিপরায়ণ দেশ সেটার জলন্ত প্রমাণ আমরা রোহিঙ্গাদের জায়গা দিয়েছি। বিজয়ের আনন্দে ভালই লাগলো।
আমার বড় যোবায়ের ভাইয়ার বিয়ের সময় আমি অনেক ছোট। ক্লাস সিক্সে পড়ি। আমার ভাবীর বাবা ছিলেন লেফটেন্যান্ট কর্ণেল এ.কে.এম. সলিমুল্লাহ। খালাম্মা (ভাইয়ের শাশুড়ি) আমাদের শুনিয়েছিলেন, তাঁদের সাথে ঘটে যাওয়া অনেক ঘটনা। অনেকগুলোর মধ্যে ঐ একটা ঘটনাই আমার এখনো মনে আছে। কারণ ঘটনাটা অনেক লোমহর্ষক এবং আল্লাহ হায়াত রেখেছিলেন বলেই তাঁরা বেঁচে গেছেন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় খালুকে (ভাইয়ের শ্বশুর) পাকিস্তানি সেনারা যখন উঠিয়ে নিয়ে যায় বা উনি পাকিস্তানেই আটকা পড়েছিলেন কর্তব্যরত অবস্থায়। তখন ফোন করে বললো, নাকি ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় খালাম্মাকে বলে গিয়েছিলেন- বাসায় রিভলভার আছে অথবা খালাম্মার হাতে দিয়ে বলেছিলেন, দরজায় যদি কোন রাজাকার বা পাকসেনারা আসে প্রয়োজনে এই রিভলভার দিয়ে আমাদের ছেলে-মেয়ে দুজনকে মারবা। সাথে নিজেকেও মেরে ফেলবা। তাও দরজা খুলে পাকসেনাদের হাতে ধরা দিবেনা। দেশের জন্য আত্মত্যাগে পিছ পা হবা না। নিজ পরিবারের চেয়ে দেশকে বড় করে দেখেছিলেন বলেই-সেদিন এভাবে বলতে পেরেছিলেন। আজ ভাবি, এ সকল অর্জনই ছিল মুক্তির শক্তি।
১৫ আগস্ট ২০২৩
লেখক: মানব সম্পদ ব্যবস্থাপক, বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা-ডরপ
ইমেইল: nouman@dorpbd.org