এক চোখ, এক হাত, এক পা নেই! হামাসের ‘ভয়ঙ্কর’ কমান্ডারকে হন্যে হয়ে খুঁজছে ইসরাইল। ফিলিস্তিন এবং ইসরাইলের মধ্যে বিবাদ দীর্ঘ দিনের। জেরুসালেম এবং গাজ়া স্ট্রিপের দখলকে কেন্দ্র করে দু’দেশের মধ্যে হামলা-পাল্টা হামলা লেগেই থাকে। শনিবার নতুন করে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ল দুই দেশ। যার জেরে মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে ওই দুই দেশ।
যুদ্ধের মধ্যে হামাস বাহিনীর এক কমান্ডারকে ঘিরে জোর আলোচনা চলছে। গত ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ইসরাইলের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ তালিকায় রয়েছেন তিনি। এই হামলার পর নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছেন ওই কমান্ডার।
নাম মোহাম্মেদ দেইফ। ফিলিস্তিনের নাগরিক তিনি। ২০২২ সাল থেকে হামাসের সামরিক বাহিনীর প্রধান দেইফ। বিভিন্ন হামলার ঘটনায় মূল এই দেইফ।
তবে এখন আর তাঁর শরীরে তেমন জোর নেই। হুইলচেয়ারে বসেই দিন গুজরান করছেন তিনি। সেখান থেকেই হামাস বাহিনীকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন এই কমান্ডার। তাঁর এক চোখ নেই।
২০ বছর আগে এয়ার স্ট্রাইকে মরতে মরতে কোনওক্রমে বেঁচে গিয়েছিলেন দেইফ। সেই হামলায় এক চোখ, এক হাত এবং এক পা হারান। তার পর থেকে হুইলচেয়ারই তাঁর সম্বল।
ষাটের দশকে গাজ়ায় একটি শরণার্থী শিবিরে জন্ম দেইফের। জন্মের সময় দেইফের নাম ছিল মোহম্মদ দিয়াব ইব্রাহিম আল-মাসরি। সেই সময় মিশরের দখলে ছিল গাজ়া। পরে দেইফ নামে পরিচিতি পান তিনি। আরবিতে যার অর্থ ‘অতিথি’।গাজ়ায় ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করেন তিনি।
১৯৬৭ সালের জুন মাসে গাজ়া কব্জা করে ইসরাইল। গত শনিবার ইসরাইলের ভূখণ্ডে যেখানে হামাস বাহিনী ঢুকে হামলা চালিয়েছে, পঞ্চাশের দশকে দেইফের বাবা, কাকারা সশস্ত্র ফিলিস্তিনীদের সঙ্গে সেই এলাকাতেই হানা দিয়েছিল। ছোট থেকেই যুদ্ধের পরিবেশে বড় হয়ে ওঠা দেইফের। ইসরাইলের দখলে ছিল ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক এবং গাজ়া স্ট্রিপ। এর প্রতিবাদে বিদ্রোহ শুরু হয়েছিল ফিলিস্তিনে। সেই সময় ১৯৮৭ সালে হামাস তৈরি করা হয়। আত্মঘাতী হামলা চালানো হয়েছিল সেই সময়। ওই ঘটনায় দেইফ জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ। তার জেরে তাঁকে জেলে পাঠিয়েছিল ইসরাইল।
গাজ়ায় ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ই হামাস বাহিনীর সঙ্গে পরিচয় ঘটে দেইফের। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পড়তে ফিলিস্তিনের বহু নেতা দেশের মুক্তি আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। সেই শুরু। তার পর থেকে ফিলিস্তিনের হয়ে ইসরাইলের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালিয়েছেন দেইফ। সেই ‘মাথা’কে হন্যে হয়ে খুঁজছে ইসরাইল সরকার।
বার বার দেইফকে হত্যার চেষ্টা করেছিল ইসরাইল। কিন্তু ব্যর্থ হয়। শোনা যায়, কমপক্ষে সাত বার দেইফকে মারার চেষ্টা করা হয়। দেইফকে খতম করতে ২০১৪ সালে একটি বাড়িতে হামলা চালায় ইসরাইল সরকার। সেই হামলায় মৃত্যু হয় দেইফের স্ত্রী এবং দুই সন্তানের।
গত শনিবার সকালে ইসরাইল ভূখণ্ডে ঢুকে আচমকা হামলা চালিয়েছে হামাস বাহিনী। এই প্রসঙ্গে দেইফ বার্তা দিয়েছেন, ১৬ বছর ধরে গাজ়াকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। ইসরাইলের দখলের জবাবে এই হামলা।