বরিশাল মুক্ত দিবস : শহরে কারফিউ দিয়ে নৌ-পথে পালায় পাকহানাদার

বরিশাল নগরীর পানি উন্নয়ন বোর্ড বধ্যভূমি সংলগ্ন স্মৃতিস্তম্ভ

১৯৭১ সালের ৮ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বরিশাল থেকে পালিয়ে যাওয়ায় মুক্ত হয় শহর। নগরীর নিয়ন্ত্রণভার গ্রহণ করে মুক্তিসেনারা। সর্বত্র ওড়ানো হয় স্বাধীন বাংলার পতাকা।

এর আগে ডিসেম্বরে মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণ তীব্র হলে পাকহানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসররা চিন্তিত হয়ে পড়ে। ৭ ডিসেম্বর রাত থেকে শহরে জারি করা হয় অনির্দিষ্টকালের সান্ধ্য আইন। ৮ ডিসেম্বর সকালে জেলা প্রশাসকের দপ্তরে বৈঠকে মিলিত হয় তারা। শহরে কারফিউ চলাকালে সকাল ১০টায় বৈঠক শেষ করেই পাকি বাহিনী বরিশাল ছেড়ে নৌ-পথে পালানোর উদ্যোগ নেয়। খবর পেয়ে ভারতীয় বিমান বাহিনী পলায়নরত পাক সেনাদের গানবোট, স্টিমার ও লঞ্চ লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করে। এতে পাক বাহিনীর স্থানীয় প্রধান সহযোগী শাজাহান চৌধুরীসহ তাদের বহু দোসর নিহত হয়।

অন্যদিকে, সকাল ১০টার দিকে সদর উপজেলার রায়পাশা-কড়াপুর এলাকা থেকে বেজ কমান্ডার রেজায়ে সাত্তার ফারুকের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল শহরের দিকে প্রবেশ করতে থাকে। সাগরদী-দপদপিয়া এলাকা থেকে মুক্তিযোদ্ধা আ. মান্নানের নেতৃত্বে অপর একটি দল শহরে প্রবেশ করে। বেজ-কমান্ডার সুলতান মাস্টারের নেতৃত্বেও একটি দল শহরে ঢুকে পড়ে। বিকাল ৩টায় মুক্তিযোদ্ধাদের সুইসাইডাল স্কোয়াড শহরে ঢোকে। মুক্তিযোদ্ধারা বরিশাল কোতোয়ালি থানা, কালেক্টরেট ভবন ও জেলখানা দখলে নেয়। এরপর কালেক্টরেটের একদল কর্মকর্তা-কর্মচারী একটি জিপে করে শহরে বিজয়ের বার্তা প্রচার করতে থাকে। ওড়ানো হয় স্বাধীন বাংলার পতাকা।

১৯৭১ সালে ২৫ মার্চ মধ্যরাতে ঢাকায় অপারেশন সার্চলাইট শুরু করার পর বরিশালে মুক্তিযোদ্ধারা তৎকালীন পুলিশ সুপার ফখরুল ইসলামের কাছ থেকে চাবি নিয়ে পুলিশের অস্ত্রাগার থেকে শত শত রাইফেল গোলাবারুদ নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম মঞ্জুরের পেশকার বাড়ি নিয়ে যান। ২৬ মার্চ ভোরে ৯ নম্বর সেক্টর কমান্ডার এম এ জলিলকে সাথে নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা বরিশালের সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে দক্ষিণাঞ্চলের প্রথম স্বাধীন বাংলা সচিবালয় গঠন করেন। ২৬ মার্চ থেকে ২৫ এপ্রিল দীর্ঘ একমাস মুক্তিযোদ্ধারা এই স্থান থেকেই অনেক অভিযান পরিচালনা করেন।

২৫ এপ্রিল পাকবাহিনী সড়ক-আকাশ ও নৌপথ থেকে একযোগে বরিশাল আক্রমণ করে। বরিশালে ঢোকার মুখে চরবাড়িয়া ও গৌরনদীর কটকস্থলে তারা বাধা পায়। চরবাড়িয়ায় গণহত্যা চালিয়ে অর্ধশতাধিক মানুষকে মেরে ফেলার পর পাকবাহিনী কীর্তনখোলা নদীর পাড়ে বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিসে দক্ষিণাঞ্চলীয় হেড কোয়ার্টার গড়ে তোলে। সেখানে বাংকার খুড়ে, ভারি অস্ত্রের সমাবেশ ঘটায় তারা। প্রতিদিন বরিশাল, ঝালকাঠী, গৌরনদীসহ দূরদূরান্ত থেকে নিরীহ মানুষদের ধরে এনে তারা গুলি করে হত্যা করে লাশ খালে ফেলে দিতো। শত শত মানুষকে ধরে এনে নৃশংস নির্যাতন করতো। এই ওয়াপদাসংলগ্ন খাল ও ব্রিজে মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসে দুই থেকে তিন হাজার মানুষকে মেরে ফেলা হয়।

 

 

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts