আস্থা ও সমৃদ্ধিতে সেনাবাহিনী

মো. সাখাওয়াত হোসেন

‘সমরে আমরা শান্তিতে আমরা সর্বত্র আমরা দেশের তরে’-এ স্লোগানের দীপ্ত মন্ত্রে পরিচালিত হয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহবানে এক রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্ম হয়েছিল। জন্ম থেকে অদ্যাবধি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী শৃঙ্খলার সঙ্গে নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে দেশ ও বিদেশে তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথ পালনের চেষ্টা করছে। বর্তমান সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সেনাবাহিনীর সদস্যদের উন্নয়নে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণের কারণে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী একটি দক্ষ ও চৌকস বাহিনী হিসেবে সমগ্র পৃথিবীতে পরিচিতি পেয়েছে।

বিশেষ করে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উদাত্ত ও দায়িত্বশীল ভূমিকা অত্যন্ত মর্যাদার সহিত আলোচিত। দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা রক্ষায় সেনাবাহিনীর বীর সদস্যরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। সংবিধানকে সমুন্নত রেখে সেনাবাহিনী দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি বিভিন্ন সেক্টরে সমৃদ্ধি লাভ করুক-এমনটিই এ দেশের আপামর জনসাধারণ প্রত্যাশা করে থাকে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ (বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস প্রভৃতি) মোকাবিলাসহ যে কোন অভ্যন্তরীণ সংকট নিরসনে ও প্রশমনে সেনাবাহিনীর অগ্রগণ্য ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। দেশের অবকাঠামোগত খাত উন্নয়নে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

একথা দ্বিধাহীনভাবে বলা যায়, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের যে আস্থা সেনাবাহিনীর প্রতি রয়েছে সেনাবাহিনী সুযোগ পেলে মানুষের আস্থার প্রতিদান দেওয়ার চেষ্টা করে। বিভিন্ন দুর্যোগ, সংকট ও দুর্বিপাকে সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। তাছাড়া সেনাবাহিনীর কাজের মধ্যে বহুমাত্রিকতা রয়েছে। কখনো সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক কনস্ট্রাকশন এর কাজ করে আবার কখনো প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও বিশেষায়িত নির্মাণের নিরাপত্তা প্রদানের দায়িত্বে নিয়োজিত থাকে সেনাবাহিনী।

সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানেও সেনাবাহিনী বহুমাত্রিক দায়িত্ব পালন করে থাকে। ঢাকা ওয়াসাকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে থাকে সেনাবাহিনী, দেশে স্থাপিত পাওয়ার স্টেশনের নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকে সেনাবাহিনী, সি-পোর্টের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত সেনাবাহিনী, বিশ্ব ইজতেমা মাঠ সংলগ্ন তুরাগ নদীর তীরে পন্টন ব্রীজ নির্মাণ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করা ইত্যাদি কাজগুলো অত্যন্ত দক্ষতার সহিত করে থাকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। ২০১১ সালের পৌরসভা নির্বাচনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে সেনাবাহিনী। ২০১১ সালে আইসিসি ওয়ার্ল্ড কাপ আয়োজনে সহযোগিতা করেছে সেনাবাহিনী, সিরাজগঞ্জের হার্ড পয়েন্টে দায়িত্ব পালন করে সেনাবাহিনী, কুয়াকাটায় পুরাতন নৌকা উদ্ধার করে সেনাবাহিনী, ২০১৪ সালের আইসিসি টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আয়োজনে সহায়তা করে সেনাবাহিনী, ২০১৪ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এ রকম অসংখ্য প্রয়োজনে সেনাবাহিনীর সদস্যরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। মোদ্দা কথা হচ্ছে, দেশের যে কোন প্রয়োজনে দায়িত্ব পালনে বদ্ধপরিকর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর গর্বিত সদস্যরা।

সাম্প্রতিক সময়ে কেএনএফ সন্ত্রাসীরা বান্দরবানের রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচি উপজেলার পাহাড়ি জনপদে হত্যা, অপহরণ, জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টিসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অরাজকতা সৃষ্টি করে চলেছে। কেএনএফের প্রশিক্ষণ ক্যাম্প এলাকার আশপাশে বসবাসরত স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সেনা জোনের একটি টহল দল গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে কেএনএফ প্রশিক্ষণ ক্যাম্পের কাছাকাছি পৌঁছলে কেএনএফ সশস্ত্র সন্ত্রাসী দলটি পালিয়ে যায়। তবে ঐ সময় কেএনএফের পুঁতে রাখা আইইডি (ইমপ্র্রোভাইসড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) বিস্ফোরণে একজন সৈনিক আহত হন, পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। বান্দরবানের রুমা উপজেলার থিনদলতে লাং নামক স্থানে কেএনএফের ঘাঁটিতে সেনাবাহিনীর একটি চৌকশ দল অভিযান পরিচালনা করলে কেএনএফের সদস্যরা প্রাণ ভয়ে পালিয়ে যায়। উদ্ধার হয় বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, গোলাবারুদ, বিস্ফোরক, স্থাপনকৃত আইইডি ও অন্যান্য সামরিক সরঞ্জামাদি। সেনাবাহিনীর আভিযানিক দলটি এখন এলাকাটিকে সর্বসাধারণের জন্য নিরাপদ করে তুলতে বদ্ধপরিকর। অর্থাৎ সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কেএনএফকে প্রতিহত করতে সেনাবাহিনীর অগ্রনী ভূমিকা উল্লেখযোগ্য।

শান্তিচুক্তির পরবর্তী সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থিতিশীলতা রক্ষার পাশাপাশি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা পার্বত্য অঞ্চলের আপামর জনসাধারণের আর্থসামাজিক উন্নয়ন, খাদ্য সমস্যা, মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত স্থানীয় ব্যক্তিবর্গদের চিকিৎসা সেবা, দরিদ্র ব্যক্তিবর্গদের আর্থিক অনুদান প্রদান করে স্বাবলম্বী হতে সহযোগিতা করা, দরিদ্র শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করা, দুর্গম এলাকায় পানির সমস্যায় জর্জরিত স্থানীয়দের কষ্ট লাঘবে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা এবং বেকার ব্যক্তিবর্গের কর্মসংস্থানের জন্য ক্ষুদ্র কারখানা স্থাপন করে আসছে। এছাড়া তিন পার্বত্য জেলার অরক্ষিত সীমান্ত এলাকাকে নজরদারির আওতায় আনতে বাংলাদেশ সরকারের আহবানে সাড়া দিয়ে দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চল ও উপজাতি সন্ত্রাসীদের প্রতিকূল অবস্থান মোকাবেলা করে সীমান্ত সড়ক নির্মাণে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নিবেদিতপ্রাণ হয়ে দায়িত্বপালন করছে।

খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা, রাঙামাটির সাজেক ও বান্দরবানের বিভিন্ন এলাকায় হাম আক্রান্ত হয়ে বহু পাহাড়ী শিশু নিহত হবার ঘটনা ঘটেছে। এসব আক্রান্ত এলাকাগুলোতে নিজেদের জীবন বাজি রেখে সুপেয় পানি সরবরাহ, খাবার ব্যবস্থা, অস্থায়ী মেডিকেল ক্যাম্প করে অসুস্থদের চিকিৎসাসেবা পরিচালনা করে পাহাড়ে হাম আক্রান্ত পাহাড়ীদের জীবন বাঁচানোর মতো মানবিক কাজে সেনাবাহিনীর অবদানও কম নয়। অবেহেলিত শিশুদের মানসিক বিকাশে তাদের রয়েছে সময়োপযোগী পদক্ষেপ। অনেক স্কুলে পড়ালেখার বই নেই, উপকরণ নেই। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিভিন্ন প্রকার শিক্ষা উপকরণ, ছাত্রছাত্রীদের স্কুল ড্রেস ও খেলাধুলার সামগ্রী বিতরণ করে তারা মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।

শান্তি চুক্তির পরপরই কমে আসে পাহাড়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। সেনাবাহিনী দায়িত্ব পাওয়ার পরপরই যেন এই অঞ্চলে অর্থনৈতিক মুক্তি ঘটেছে। তবে শান্তিচুক্তির পরও এখনও পাহাড়ে উগ্র উপজাতি গোষ্ঠী বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে তৎপর রয়েছে।পাহাড়ে অনেক স্থান ছিলো অনুন্নত। অথচ সেনাবাহিনীর সদস্যরা পার্বত্যাঞ্চলে দিনরাত পরিশ্রম করে রাতারাতি সেখানে যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিপ্লব ঘটিয়েছেন। সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো হামলা চালায়, লুটপাট করে, পর্যটক অপহরণ করে; চাঁদাবাজি তো আছেই। এসব অপকর্ম থেকে পাহাড়ের মানুষকে শান্তিতে রাখতে কাজ করছে সেনাবাহিনীর সদস্যরা। পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি ও ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হওয়ার খবরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা সঙ্গে সঙ্গে ছুটে যাচ্ছেন। অভিযানে উদ্ধার করা হয় রকেট লঞ্চার, ১৪-এমএম, এম-১৬, এসকে-৩২, সেনেভা-৮১, এম-৪ এবং এম-১ এর মতো ভয়াবহ অস্ত্র। এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি ফেরাতে এসে আজ অবধি বহু সেনা সদস্য মশার কামড়ে ম্যালেরিয়া হয়ে, সাপের কামড়ে কিংবা বন্য জন্তুর আক্রমনে নিহত হয়েছেন। কেউ কেউ আজীবনের জন্য পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। দেশমাতৃকার সেবায় নিয়োজিত সেনাবাহিনীর বেশকিছু সদস্য পাহাড়ের মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গিয়ে সশস্ত্র আঞ্চলিক সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন অনেকেই।

জাতীয় নিরাপত্তা ও আর্থ-সামাজিক মূল্যায়নে পদ্মা সেতুর গুরুত্ব অপরিসীম। এটি বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ভৌত অবকাঠামো। প্রকল্পের শুরু হতেই প্রকল্প কাজে নিয়োজিত দেশি-বিদেশি (সর্বোচ্চ ১২৯৬ জন বিদেশি নাগরিক একই সময়ে ছিলেন) গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের ক্ষতিসাধন, প্রকল্প এলাকার ভেতর শ্রমিক অসন্তোষ, প্রকল্প সংশ্লিষ্ট অতিমূল্যবান দ্রব্যসামগ্রী ও সরঞ্জামাদি পাচার অথবা ক্ষতিসাধন, সেতু সংলগ্ন অথবা নদী শাসন এলাকা হতে অবৈধ বালু উত্তোলন, ব্রীজের পিলারে নৌযানসমূহের ধাক্কা, প্রকল্প এলাকায় শ্রমিকদের মধ্যে মাদকের প্রভাব ইত্যাদি সম্ভাব্য ঘটনাসমূহ প্রকল্পের ওপর প্রত্যক্ষ হুমকি ছিল। এর পাশাপাশি পদ্মা সেতু প্রকল্প এবং তদসংলগ্ন এলাকায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা, সড়ক দুর্ঘটনা, প্রকল্পের মালামাল পরিবহনে যানজট এবং অবৈধ চাঁদা আদায়, দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া, শীতকালে নদীর নাব্যতা হারানোর মতো অনাকাঙ্খিত ঘটনাও পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজকে বিঘ্নিত করার সম্ভাবনা ছিল।

এ সকল বিষয় বিবেচনায় নিয়ে পদ্মা সেতু প্রকল্পের নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মধ্যে এ নিয়ে একটি সমঝোতা চুক্তি হয় যার উল্লেখযোগ্য অংশ হলো-মাওয়া ও জাজিরা এলাকায় স্থাপিত ৯৯ কম্পোজিট ব্রিগেড ভূমিতে এবং নদীতে পদ্মা সেতু প্রকল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল ব্যক্তি এবং সরঞ্জামাদির নিরাপত্তা নিশ্চিত কল্পে প্রয়োজনীয় সংখ্যক স্থায়ী নিরাপত্তা চৌকি ও অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করবে এবং দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় ২৪ ঘণ্টা টহল ও নৌ টহল পরিচালনা করবে মাওয়া-জাজিরা প্রান্তেএবং নদীপথেযে কোন উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য একটি করেইমারজেন্সি রেসপন্স দল প্রস্তুত থাকবে এবং সেতু কর্তৃপক্ষের সাথে সমন্বয়পূর্বক প্রকল্প এলাকার বাইরে যেকোন অনভিপ্রেত ঘটনা যা সেতু প্রকল্পের নির্মাণ কাজে প্রভাব ফেলতে পারে তা নিরসনের জন্য সকল কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

বিশ্ব পরিমন্ডলে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে শীর্ষ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী বাংলাদেশের মর্যাদা সমুন্নত রাখতে সদা প্রতিজ্ঞ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। ১৯৮৮ সালের ইউএন ইরান-ইরাক মিলিটারি অবজারভেশন গ্রুপ (ইউনিমগ) মিশনে মাত্র ১৫ জন সেনা পর্যবেক্ষক প্রেরণের মাধ্যমে এ অগ্রযাত্রার সূচনা হয়। পরবর্তী বছরগুলোয় দক্ষতা ও সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পেশাদারি ও কর্মস্পৃহার মূর্তপ্রতীক হিসাবে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে নিজেদের অবস্থান সুসংহত করেছে। দায়িত্ব পালনের সময় প্রতিদ্বন্দ্বী দল বা গোষ্ঠীদের আশ্বস্ত করতে হয়, কাউকে আঘাত করা শান্তিরক্ষীদের লক্ষ্য নয় বরং তাদের মূল উদ্দেশ্য বেসামরিক নাগরিক এবং জাতিসংঘের কর্মরত সদস্যদের জানমাল রক্ষা করা। জাতিসংঘে বিভিন্ন ভাষাভাষী ফোর্সদের সঙ্গে সমন্বয় করে দায়িত্ব পালন করা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং বিষয়। সে জায়গাতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চৌকস সদস্যরা দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে। ইউএন মিশনে যাত্রাকালীন অনিশ্চয়তা, অবস্থানের সময়কাল, নিজ ও পরিবারের প্রস্তুতির সময়সীমার অপর্যাপ্ততা, পরিবার-পরিজন থেকে দীর্ঘদিন আলাদা থাকা, ভিন্ন ভাষা ও সংস্কৃতি, মিশনের জন্য পর্যাপ্ত প্রস্তুতি গ্রহণ, পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়াজনিত অনিশ্চয়তা, যুদ্ধক্ষেত্রের ভয়ংকর ও চরম প্রতিকূল পরিবেশ মন ও মস্তিষ্কে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। এসব প্রতিকূলতাকে ডিঙ্গিয়ে জাতিসংঘ মিশনগুলোতে দক্ষতার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করে চলেছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর গর্বিত সদস্যরা।

পরিশেষে বলা যায়, পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন সংক্রান্তে সেনা সদস্যদের সীমাহীন ত্যাগ উল্লেখযোগ্য। পাহাড়ী ও বাঙালি জনগোষ্ঠীর মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এ অঞ্চলে সন্ত্রাসী সংগঠনের প্রতিকূলতাকে পথ মাড়িয়ে সেনাসদস্যদের দায়িত্ব পালন করতে হয়। উগ্রবাদি সংগঠনগুলোর হুমকিতে পড়তে হয় সেনাসদস্যদেরকে। এসব হুমকি ও প্রতিকূলতা জেনেই দেশের স্বার্থে, পাহাড়ে দীর্ঘ দিন ধরে চলে আসা অচলায়তন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের নিমিত্তে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চৌকস সদস্যরা দক্ষতার সহিত দায়িত্ব পালন করে শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছে। এসব দায়িত্ব পালনে সেনাসদস্যদের ব্যাপক ঝুঁকি গ্রহণ করতে হয়, অনেককে আত্নাহুতি দিতে হয়েছে। তবুও তারা পিছপা হয়নি, তাদের মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক দায়িত্ব পালন করে যাওয়া এবং অদ্যাবধি সে কাজটি তারা সুকৌশলে সুনিপুণভাবে করে যাচ্ছে। রাষ্ট্রীয় ‍গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় সেনাসদস্যদের দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়। শৃঙ্খলাই তাদের একমাত্র ব্রত-এটিকে কাজে লাগিয়ে সেনা সদস্যরা তাদের নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।

সবিশেষ উল্লেখ করা যায়, সংবিধানের বিধি অনুযায়ী সেনাবাহিনী দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বজায় রাখার লক্ষ্যে কাজ করবে এমনটিই প্রত্যাশা করে এ দেশের মানুষ। দেশ পরিচালনার একমাত্র রক্ষাকবচ দেশের পবিত্র সংবিধান। সংবিধানের কোনরূপ ব্যত্যয় ঘটে এমন কর্ম কখনোই সেনা সদস্যদের দ্বারা সাধিত হবে-এটি কারো কাম্য নয়। সরকারও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে অভিনব ও আধুনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করে সেনা সদস্যদের মানোন্নয়নে যথোক্ত ভূমিকা রাখছে। সংবিধান পরিপন্থী কোন কাজ সেনাবাহিনীর মাধ্যমে সংঘটিত হউক এমনটি কেউই আশা করে না। আমরা প্রত্যাশা করি দেশ ও জাতির স্বার্থে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সংবিধানকে সমুন্নত রেখে তাদের উপর ন্যস্ত দায়িত্ব পালন করবে এবং নিজেদেরকে প্রতিনিয়ত সমৃদ্ধ করবে।

লেখক: চেয়ারম্যান, ক্রিমিনোলজি এন্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

Print Friendly

Related Posts