রোববার (১৯ মে) ইরানের প্রেসিডেন্ট ইবরাহিম রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিকে নিয়ে দুর্ঘটনা কবলিত হেলিকপ্টারটির খোঁজ পাওয়া গেছে। ইরানের প্রেসিডেন্ট ইবরাহিম রাইসিকে নিয়ে বিধ্বস্ত হেলিকপ্টার থেকে এক ফ্লাইট ক্রুর মোবাইল ফোনের সংকেত শনাক্ত করে উদ্ধারকারী দল। ওই সংকেতের সূত্র ধরেই উদ্ধারকারী দলটি দুর্ঘটনাকবলিত স্থানটি খুঁজে পায়।
ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিকে নিয়ে দুর্ঘটনা কবলিত হেলিকপ্টারটির খোঁজ পাওয়ার পর রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে ওই হেলিকপ্টারে কেউই জীবিত থাকার লক্ষণ নেই। এ খবর জানিয়েছে আল জাজিরা।
রেড ক্রিসেন্ট বলছে, দুর্ঘটনাস্থলে ‘হেলিকপ্টারটির যাত্রীদের জীবিত থাকার কোন চিহ্ন’ পাওয়া যায়নি। ইরানের প্রেসিডেন্ট রাইসি এবং তার সঙ্গে থাকা কর্মকর্তাদের মৃত বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট রইসি যে কপ্টারে ছিলেন, সেটি পাওয়া গিয়েছে। আশা আরও ক্ষীণ হল। দুর্ঘটনাস্থলের ছবিও দিয়েছে রয়টার্স। তাতে দেখা যাচ্ছে, কুয়াশাঘেরা পাহাড়ের বুকে হেলিকপ্টার, একাধিক গাড়ি ঘোরাফেরা করছে। পায়ে হেঁটে দুর্ঘটনাস্থলে যাচ্ছেন উদ্ধারকারীরা।
ভেঙে পড়া চপারটির অবস্থা শোচনীয়। সেটি দুর্ঘটনার অভিঘাতে তুবড়ে গিয়েছে। কপ্টারটিতে আগুনও ধরে গিয়েছিল। বর্তমানে পোড়া অবস্থায় রয়েছে একাধিক অংশ। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কপ্টারের কেবিন।
ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ইরনা জানায়. ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় হেলিকপ্টারটি জরুরিভিত্তিতে ‘হার্ড ল্যান্ডিং’ করে। এতে হতাহত বা ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। ওই অঞ্চলে একটি বাঁধের উদ্বোধন শেষে রাইসি ফিরছিলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমিরাবদুল্লাহিয়ান, পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের গভর্নর মালেক রহমাতি, তাবরিজ জুমার নামাজের খতিব হোজ্জাতোলেস্লাম আল হাশেম এবং আরও কয়েকজন উচ্চপদস্থ ব্যক্তি রাইসির সঙ্গে হেলিকপ্টারে ছিলেন।
এ অবস্থায় ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যু হলে কে হবেন ইরানের প্রেসিডেন্ট, তা নিয়ে ইতোমধ্যে জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়ে গেছে।
ইব্রাহিম রাইসি ২০২১ সালে নির্বাচনে জয়লাভ করে ইরানের নির্বাচিত হন। ৬৩ বছর বয়সী কট্টরপন্থী রাইসি এর আগে দেশের বিচার বিভাগের নেতৃত্ব দিয়েছেন।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনির সম্ভাব্য উত্তরসূরি হিসেবে দেখা হয় তাকেই। তার বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞাও আরোপ আছে।
রাইসির শাসনামলে ইরান পর্যাপ্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ হয়েছে যার মাধ্যমে নিউক্লিয়ার অস্ত্র তৈরি করা সম্ভব।
ইউক্রেনের বিরুদ্ধে ইরান রাশিয়াকে অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করছে বলেও ধারণা করা হয়। পাশাপাশি চলমান গাজা সংকটের মধ্যেই খুব সম্প্রতি ইসরায়েলের ওপর ব্যাপক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান।
ইয়েমেনের সশস্ত্র সংগঠন হুতি বিদ্রোহীদের এবং লেবাননের হিজবুল্লাহকে অস্ত্র সরবরাহ করছে ইরান।
২০২২ সালে ইরানে হেফাজতে মাশা আমিনির মৃত্যুর ঘটনায় ব্যাপক বিক্ষোভ হয়।
রাইসিকে খামেনির উত্তরসূরি হিসেবে অভিহিত করেছেন কাতার ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক মাহজুব জুইরি। তার মতে, রক্ষণশীল রাজনীতিবিদ রাইসি ইরানের রাজনীতিতে একজন ‘হেভিওয়েট’ নেতা।
এ অবস্থায় ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যু হলে প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মোখবার প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিতে পারেন বলে আল-জাজিরা এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে।
ইরানের সংবিধান অনুযায়ী, প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মোখবার সর্বোচ্চ নেতার অনুমোদন নিয়ে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।
ইরানের রাষ্ট্রীয় পদক্রম অনুসারে, রাষ্ট্রের প্রধান সুপ্রিম লিডার আলি খামেনি এবং প্রেসিডেন্ট সরকার প্রধান হিসেবে রাষ্ট্রের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড।
সেকেন্ড-ইন-কমান্ড মারা গেলে প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট তাৎক্ষণিক দায়িত্ব গ্রহণ করবেন এবং ৫০ দিনের মধ্যে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন দেবেন।
বর্তমান প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট মোখবার ২০২১ সালের আগস্টে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।