হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ও তার সহযাত্রীদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের মরদেহ তাবরিজ শহরে পাঠানো হচ্ছে। সোমবার ২০ মে টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক মন্তব্যে ইরানের রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির প্রধান পীর হোসেইন কোলিভান্দ এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, মরদেহ উদ্ধার হওয়ার পরে ব্যাপক তল্লাশি ও উদ্ধার অভিযান সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়েছে। রেড ক্রিসেন্ট প্রধান রাষ্ট্রীয় টিভিকে আরও জানান, আমরা নিহতদের মরদেহ তাবরিজে স্থানান্তরের কাজ শুরু করেছি। উদ্ধার কার্যক্রম শেষ হয়েছে।
আপাতভাবে আকস্মিক দুর্ঘটনার জেরেই রাইসির মৃত্যু হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে দেশটির নাম ইরান আর তার শত্রু দেশের নাম ইসরায়েল বলেই সন্দেহপ্রবণ যারা, তারা এই দুর্ঘটনা নিয়ে হরেক প্রশ্ন তুলছেন। আর এ ক্ষেত্রেও চর্চায় উঠে আসছে ইসরায়েলের গুপ্তচর সংস্থা মোসাদের নাম। তারাই কৌশল রচনা করে রাইসিকে হত্যা করল কি না, উঠছে সেই প্রশ্নও।
কপ্টার ভেঙে মৃত্যু হয়েছে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির। মারা গিয়েছেন কপ্টারে রাইসির সহযাত্রী তথা সে দেশের বিদেশমন্ত্রী হোসেইন আমিরাবদুল্লাহিয়ানও।
ইরানের সরকারি সংবাদ সংস্থা এবং সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের তরফে প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে যে, পর্বতে ধাক্কা খেয়ে ভেঙে পড়ে রাইসির কপ্টার। সেই সময় দুর্ঘটনাস্থলে ভারী বৃষ্টি এবং ঘন কুয়াশার কারণে দৃশ্যমানতা খুব কম ছিল বলেও জানা গিয়েছে।
ইসরায়েল রাষ্ট্র গঠনের পর থেকেই শিয়া অধ্যুষিত ইরানের সঙ্গে তার ‘মধুর’ সম্পর্ক। সাম্প্রতিক ইসরায়েল-হামাস সংঘাতে সরাসরি প্যালেস্টাইনি সশস্ত্র সংগঠনটির পক্ষ নেয় ইরান। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়তে পশ্চিম এশিয়ায় লেবানন, সিরিয়া, ইরাক কিংবা ইয়েমেনের মতো দেশকে মদত দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তেহরানের বিরুদ্ধে।
গত ১ এপ্রিল সিরিয়ার রাজধানী দামাস্কাসে ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল। ইসরায়েলি হামলায় ইরানের দুই সেনা কর্মকর্তার মৃত্যু হয়। পাল্টা ইসরায়েলে হামলা চালায় ইরান।
রোববার রইসি আজারবাইজান সীমান্তে একটি কর্মসূচি সেরে তেহরান ফিরছিলেন। পড়শি রাষ্ট্র হলেও আজারবাইজানের সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক বরাবরই শীতল। তার একটি বড় কারণ এই যে, আজারবাইজানের-ইসরায়েল ঘনিষ্ঠতা। এমনকি দেশটির মোসাদকে সাহায্য করারও ইতিহাস রয়েছে। যদিও ষড়যন্ত্র-তত্ত্বের যারা বিরোধী, তাদেরও কিছু যুক্তি রয়েছে। সেগুলির একটি হল, ইসরায়েল বা মোসাদ অতীতে কখনও কোনও রাষ্ট্রপ্রধানের উপর সরাসরি হামলা চালায়নি। বরং চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়ে শত্রু দেশের সামরিক পরিকাঠামো নষ্ট করা কিংবা অর্থনৈতিক স্বার্থকে নষ্ট করার অভিযোগ রয়েছে মোসাদের বিরুদ্ধে। তবে ব্যক্তিটির নাম রইসি বলেই অনেকে এই অলিখিত নীতিতে বদলের সম্ভাবনা দেখছেন।
৬৩ বছরের রাইসি ইরানের চরম রক্ষণশীল সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লা আলি খামেনির ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত। খামেনির উত্তরসূরি হিসাবে একাধিক বার তার নাম উঠে এসেছে। ধর্মগুরু হিসাবে কর্মজীবন শুরু করা রাইসি একাধিক বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতেও ছিলেন। ইরানে ১৯৭৯ সালে ইসলামিক বিপ্লবের পর বহু রাজনৈতিক বন্দিকে বিনা বিচারে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার অভিযোগ ওঠে রাইসির বিরুদ্ধে।
২০২২ সালে কুর্দ তরুণী মাহশা আমিনির রহস্যমৃত্যুর পরে হিজাব-বিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে ইরান। মূলত মহিলাদের নেতৃত্বে হওয়া শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে ব্যাপক দমনপীড়ন চালানোর অভিযোগ ওঠে রাইসি প্রশাসনের বিরুদ্ধে।
২০২১ সালে যে ভোটে রাইসি প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হন, তা নিয়েও বহু বিতর্ক রয়েছে। ২০১৭ সালে ভোটে লড়তে নেমে ইরানের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট হাসান রৌহানির কাছে হেরে গিয়েছিলেন রাইসি। কিন্তু ২০২১ সালে তুলনায় কম ‘চরমপন্থী’ রৌহানিকে হারিয়ে দেন রাইসি। ভোটে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ ওঠে। বহু বিতর্ককে সঙ্গী করে চলা সেই রাইসি তার চরমপন্থী নীতির কারণেই শত্রুদেশের কোপে পড়লেন কি না তা নিয়ে জল্পনা ঘনীভূত হচ্ছে। বহু গোষ্ঠীতে বিভক্ত ইরানের কেউ বা কারা ‘পথের কাঁটা’ রাইসিকে সরাতে ষড়যন্ত্র করল কি না, উঠছে সেই প্রশ্নও।