একজন সরকারি ডাক্তারের কান্ড

ড্রাইভিং শিখতে গিয়ে দু’যুবককে চাপা, একজন লাইফ সাপোর্টে

 

আনোয়ারা খাতুন : জনবহুল হাইওয়েতে গাড়ী চালানো শিখতে গিয়ে দু’যুবককে চাপা দিয়েছেন একজন সরকারি ডাক্তার। এই  ঘটনায় আহত যুবকদের মধ্যে একজন ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিইউতে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে।

ঘটনাটি ঘটেছে সাতক্ষীরা’র শ্যামনগরে। আর ঘটনার নায়ক  ডা. আনিসুর রহমান। তাঁর প্রাইভেটকার চাপায় গুরুতর আহত শ্যামনগরের টগবগে কৃষি ডিপ্লোমাধারী যুবক শাহীন কাদির এখন ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিইউতে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে,গত ৩ জুন দুর্ঘটনার পর থেকে অদ্যাবধি শাহীনের জ্ঞান  ফেরেনি। ডাক্তাররা বলেছেন তার মস্তিকের ক্ষমতা ৭৫ ভাগ বিলুপ্ত হয়েছে। আঘাত জনিত কারণে তার মাথার মগজ বেরিয়ে গেছে। কয়েকটি স্নায়ুতন্ত্র বিচ্ছিন্ন হয়ে রক্তপাত হয়েছে। মেরুদন্ডের উভয় স্কন্ধের হাড় ভেঙে গেছে। এছাড়াও স্পাইনাল কর্ড ভেঙে ভেতরে ঢুকে গেছে। সারা শরীর থ্যাতলানো শাহীন কাদিরের লিভার বড় হয়ে গেছে। সে এখন কোমায় চলে গেছে। তরতাজা এই যুবক সাতক্ষীরা’র শ্যামনগর উপজেলার ঈশ্বরীপুর ইউনিয়নের শ্রীফলকাটি গ্রামের এসএম মুজিবর রহমানের ছেলে। সে সম্প্রতি কৃষি ডিপ্লোমা শেষ করে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের চেষ্টা করছিল। অপরদিকে শ্যামনগর উপজেলা হাসপাতালের আরএমও ডা. আনিসুর রহমান একই উপজেলার হাওলভাঙ্গি গ্রামের আবু দাউদ সরদারের ছেলে।

আহতের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, শ্যামনগর উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও ডা. আনিসুর রহমান নতুন প্রাইভেটকার কিনেছেন। তিনি জনৈক সোহারাব মোড়লের নিকট গাড়ি চালানোর প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলেন। ঘঁনার সময় তিনি চালক না হয়েও বেপরোয়া ভাবে নিজের প্রাইভেটকার চালিয়ে শ্যামনগর অভিমুখে আসছিলেন। অপরদিকে শাহিন কাদির তার বন্ধু হাবিবুর রহমানের মোটর সাইকেলে বসে বিপরীতমুখী কালিগঞ্জের দিকে যাচ্ছিল। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শ্যামনগরের খানপুর ফিলিং স্টেশনের কাছে একটি ছোট কালভাটের ওপর ডা. আনিসের মালিকানাধীন সাদা রঙের (রেজি নং ঢাকা মোট্রো গ ৩০-১২১১) প্রাইভেটকারটি শাহিন কাদিরকে চাপা দেয়। শাহিন কাদিরকে গুরুতর আহত দেখেও চালক ডা. আনিস সরাসরি শ্যামনগরের দিকে পালিয়ে যান। প্রামবাসী এ সময় তাঁকে তাড়া করেও ধরতে ব্যর্থ হন। স্থানীয়রা শাহিন কাদিরকে শ্যামনগর হাতপাতালে ভর্তি করলেও ডা. আনিস  তার চিকিৎসায় এগিয়ে আসা দুরের কথা এমনকি তার সামনেও আসতে অস্বীকৃতি জানান। শাহিন কাদিরের বাবা এসএম মুজিবুর রহমান জানান, তার ছেলেকে শ্যামনগর থেকে সাতক্ষীরায় পরে খুলনা এবং সর্বশেষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসা শুরুর আগে ডা. আনিস তাকে বলেছিলেন এয়ার এ্যাম্বুলেন্সে ঢাকায় নিতে। চিকিৎসার সব খরচ তিনি বহন করবেন। মুজিবুর রহমান  অভিযোগ করে আরও বলেন, খরচ বহন করা তো দুরের কথা বর্তমানে ডা. আনিস চিকিৎসার ব্যাপারেও কোন সহায়তা করছেননা।

এলাকাবাসী জানান, ডা. আনিস আনাড়ি চালক হওয়ায় তার গাড়িতে থাকা জনৈক সোহারাব মোড়ল তাকে গাড়ি চালানোর প্রশিক্ষণ দিচ্ছিলেন। এসময় গাড়ির মধ্যে তাঁরা উচ্চস্বরে কথোপকথন, হাসি ঠাট্টা ও তুচ্ছ তাচ্ছিল্যভাবে কথা বলছিলেন । তাঁদের খামখেয়ালির কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটে বলে জানান এলাকাবাসী। শাহিন কাদিরের বাবা এসএম মুজিবুর রহমান জানান, চিকিৎসার শুরু থেকে এ পর্যন্ত তিনি প্রায় ১২ লাখ টাকা ব্যয় করেছেন। এসব টাকা তিনি জমি বিক্রি ও বন্ধক এবং সমিতি থেকে লোন নিয়ে খরচ করেছেন। এখন প্রতিদিন শাহিন কাদিরের পিছনে ২৫ হাজার টাকা ব্যয় হচ্ছে। ছেলের মৃত্যু’র সন্ধিক্ষনে এসে বাবা মুজিবুর রহমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মো: নাসিমের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, “আমি আমার ছেলের চিকিৎসার জন্য মানবিক সাহায্য চাই”।

এদিকে এই দুর্ঘটনার ব্যাপারে জানতে চেয়ে ডা. আনিসুর রহমানের কাছে ফোন করা হলে তিনি দাবি করেন, ঐদিন তিনি গাড়ি চালাচ্ছিলেননা। তার ড্রাইভার সোহারাব মোড়ল তার গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি রোগীর জন্য ৫০ হাজার টাকা দিতে চেয়েছেন। শ্যামনগরের অনেক সংবাদকর্মী এবং স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মচারী এবং সাধারণ মানুষরা জানান, ডা. আনিসুর রহমান মাদকাসক্ত এবং তিনি নিয়মিত ইয়াবা সেবন করেন। তার হাতে কোনো রোগী নিরাপদ নন দাবি করে এসব ব্যক্তিরা বলেন, তাকে নিয়ে পত্রপত্রিকায় রিপোর্ট হয়েছে। তার হাতে বহু রোগী মারা গেছে। তার দাপটে শ্যামনগর হাসপাতালে কোনো ভালো ডাক্তার টিকে থাকতে পারছেন না। তবে ডা. আনিস এসব অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি মাদকাসক্ত নন বলে দাবি করেন।

এদিকে প্রাইভেটকার চাপায় গুরুতর আহত হবার পরও শ্যামনগর থানা পুলিশ শাহিনের বাবার দেওয়া মামলা গ্রহণ করেননি। এলাকাবাসী জানান, ওসির সাথে ডাক্তার আনিসের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। ওসি তার গাড়ি বিভিন্ন সময় ব্যবহারও করে থাকেন। পুলিশ মামলা নিতে অস্বীকার করায় শাহিনের বাবা মুজিবর রহমান সাতক্ষীরা’র জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের নিকট আবেদন করেছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শ্যামনগর থানার ওসি সৈয়দ মান্নান আলি বলেন, আহতের পরিবার কোনো এজাহার দেননি। এখনই এজাহার দিলে তিনি তা গ্রহণ করবেন বলে জানান।

কান্না জড়িত কন্ঠে শাহিন কাদিরের বাবা বলেন, আমার ছেলেটির জীবন বিপন্ন। তারা বাক রুদ্ধ হয়ে গেছেন। লাইফ সাপোর্ট খুলে দিলেই তার ছেলের জীবনবায়ু শেষ হয়ে যাবে। এ অবস্থায় তিনি ডা. আনিসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।

Print Friendly

Related Posts