শিশু পর্নোগ্রাফি : অস্ট্রেলিয়া ফেডারেল পুলিশের তথ্যে টিপু কিবরিয়া গ্রেফতার

৫০০ থেকে এক হাজার টাকার বিনিময়ে বানানো হতো শিশু পর্নোগ্রাফি। বিদেশি চক্রের কাছে বিক্রি করতেন চড়া দামে। এ ঘটনায় অস্ট্রেলিয়া ফেডারেল পুলিশের তথ্যের ভিত্তিতে মূলহোতা টিপু কিবরিয়াকে এক সহযোগীসহ আবারও গ্রেফতার করেছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট।

দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে এজেন্টের মাধ্যমে অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে প্রথমে ছিন্নমূল ছেলে পথশিশুকে টার্গেট করতো চক্রটি। এরপর, তাদের দিয়ে পর্ণোগ্রাফি কন্টেন্ট বানিয়ে বিদেশিদের কাছে বিক্রি করা হতো চড়ামূল্যে।

এমন অভিযোগে রাজধানীর খিলগাঁও থেকে আন্তর্জাতিক শিশু পর্নোগ্রাফি চক্রের মূলহোতা টিপু কিবরিয়া ও তার এক সহযোগীকে গ্রেফতার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় এক ভুক্তভোগী শিশু এবং ২৫ হাজারেরও বেশি পর্নোগ্রাফি কন্টেন্ট। মূলত টিপু শিশু পর্নোগ্রাফির আন্তর্জাতিক চক্রের সদস্য।

সংবাদ সম্মেলনে সিটিটিসির প্রধান মো. আসাদুজ্জামান জানান, শিশুদের মাত্র ৫০০ থেকে এক হাজার টাকার বিনিময়ে বাসা কিংবা বনজঙ্গলে নিয়ে এসব বিকৃত কাজ করাতো চক্রটি। বিনিময়ে সে আয় করতো হাজার হাজার ডলার।

তিনি জানান, টিপু খিলগাঁও এলাকার একটি বাসায় স্টুডিও তৈরি করেছেন। অভিযানের সময়েও তিনি পর্নোগ্রাফি তৈরিতে ব্যস্ত ছিলেন। টিপুর কাছ থেকে বেশকিছু ডিভাইস জব্দ করা হয়েছে। এসব ডিভাইসে শিশুদের আপত্তিকর হাজার হাজার স্থিরচিত্র ও ভিডিও রয়েছে।

সিটিটিসি কর্মকর্তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ৫৮ বছর বয়সী টিপু জানিয়েছেন, তিনি পর্নোগ্রাফি তৈরি করে ‘মেঘা’ ও ‘টোটা নোটা’ নামের বিশেষ অ্যাপে সেই ভিডিও আন্তর্জাতিক চক্রের কাছে পাঠাতেন। ইতালির এক ব্যক্তি ও অস্ট্রেলিয়ার এক ব্যক্তির নির্দেশনা মেনে পর্নোগ্রাফি তৈরি করতেন। ১০ থেকে ১২টি পর্নোগ্রাফি পাঠালে তিনি এক হাজার ডলার পেতেন। ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের মাধ্যমে তিনি টাকা সংগ্রহ করেন।
 
পুলিশ জানায়, গ্রেফতার ফকরুজ্জামান এক সময়কার খুব জনপ্রিয় শিশু সাহিত্যিক। তিনি টিপু কিবরিয়া নামে পরিচিত। ১৯৯১ সালে সেবা প্রকাশনীর মাসিক কিশোর পত্রিকায় সহকারী সম্পাদক পদে যোগদানের মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি ফ্রিল্যান্স আলোকচিত্রী হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি শিশু সাহিত্য রচনা করতেন। তার অর্ধ শতাধিকের উপরে বই রয়েছে যার বেশিরভাগই সেবা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত।

সিটিটিসির প্রধান মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ২০০৫ সাল থেকে শিশু পর্নোগ্রাফি উৎপাদন ও বিতরণে জড়ান টিপু কিবরিয়া। দীর্ঘদিন এই অপরাধে জড়িত থাকার পর ২০১৪ সালে সিআইডির কাছে গ্রেফতার হন এবং তার নামে পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা হয়। ২০২১ সালে জেল থেকে মুক্তি পেয়ে পুনরায় সাহিত্য নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন টিপু কিবরিয়া। কিন্তু সাহিত্য চর্চার আড়ালে পুনরায় শিশু পর্নোগ্রাফির সেই পুরনো পথেই কাজ শুরু করেন টিপু কিবরিয়া।

এই ছিন্নমূল ছেলে শিশুদের সংগ্রহ করার জন্য তার কয়েকজন সহযোগীও রয়েছে। যাদের মধ্যে একজন সহযোগীকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিকভাবে তার ব্যবহৃত ডিভাইসগুলো থেকে প্রায় ২০ জন পথশিশুর ছবি ভিকটিম হিসেবে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়।

এই চক্রে যুক্ত বাকি সদস্যদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে বলেও জানায় সিটিটিসি।
Print Friendly, PDF & Email

Related Posts