বিশ্বের মনোযোগ সিঙ্গাপুরে

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ আজ সিঙ্গাপুরে শুরু হচ্ছে ঐতিহাসিক এক সম্মেলন, যেখানে মুখোমুখি হবেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ নেতা কিম জং-উন। দুই নেতার মধ্যে তীব্র বাকযুদ্ধের পর ঐতিহাসিক এ বৈঠক দুদেশের মধ্যে নতুন সম্পর্ক গড়বে না দীর্ঘদিনের বৈরিতা বয়ে নিয়ে যাবে তা দেখতে বিশ্বের মানুষের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু এখন সিঙ্গাপুর।

এরই মধ্যে বৈঠকে অংশ নিতে সিঙ্গাপুরে গেছেন ট্রাম্প ও কিম। রোববার সিঙ্গাপুরে পৌঁছান ট্রাম্প; তার আগেই সিঙ্গাপুরে উড়ে গেছেন কিম। উভয় নেতা সম্মেলন ‌‘ইতিবাচক হবে’ বলে আশা প্রকাশ করেছেন।

এ সম্মেলন ওয়াশিংটনের সঙ্গে পিয়ংইয়ংয়ের ‘নতুন সম্পর্ক’ স্থাপিত হওয়ার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম। সম্মেলনে দীর্ঘদিনের যুদ্ধাবস্থার ইতি টেনে উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে একটি আনুষ্ঠানিক শান্তি চুক্তিও সই হতে পারে। সেইসঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে কোরীয় উপদ্বীপকে পরমাণু অস্ত্রমুক্ত করার পথ অনুসন্ধানের কাজ শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর গত ১৮ মাসে উত্তরের শীর্ষ নেতার সঙ্গে তার সম্পর্কের উত্থান-পতনের সাক্ষী হয়েছে বিশ্ব। প্রথম দিকে একে অপরকে চূড়ান্ত অপমান করে যুদ্ধের হুমকি দিলেও সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দুজনের মধ্যে উষ্ণতার আবহ গড়ে ওঠে। তারই ধারাবাহিকতায় এ সম্মেলন। এতে বৈরিতারর পরিবর্তে জেগে উঠেছে শান্তির আশা। এ আশাকে রূপায়নে অনুষ্ঠিত হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ এ বৈঠক। বৈঠকটি ইতিবাচক, নাকি নেতিবাচক হবে তা নির্ভর করবে দু’পক্ষের সদিচ্ছার ও নমনীয়তার ওপর।

সম্মেলনে অংশ নিতে রোববার দুপুরের দিকে এয়ার চায়নার একটি উড়োজাহাজে করে কিম সিঙ্গাপুর পৌঁছান। আর কানাডায় জি৭ সম্মেলন শেষ করে সেখান থেকে আকাশপথে ২০ ঘণ্টা ভ্রমণ শেষে ওইদিন সন্ধ্যায় ট্রাম্প সিঙ্গাপুরের পৌঁছান। সিঙ্গাপুরে পৌঁছানোর পর উভয় নেতাই দেশটির প্রধানমন্ত্রী লি শিয়েন লুংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।

যুক্তরাষ্ট্র চায় উত্তর কোরিয়া তার পারমাণবিক অস্ত্র ত্যাগ করুক। যুক্তরাষ্ট্রের এ চাপ উত্তর কোরিয়া প্রতিরোধ করবে বলেই ব্যাপকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু বিনিময়ে তারা কী চাইতে পারে তা এখনো পরিষ্কার নয় বলে জানিয়েছে বিবিসি।

সিঙ্গাপুরের বিখ্যাত অর্চাড রোডের সেন্ট রেগিস হোটেলে অবস্থান করছেন কিম। কাছের সাংরি-লা হোটেলে উঠেছেন ট্রাম্প। সিঙ্গাপুরের মূল ভূখণ্ড থেকে কয়েকশ’ মিটার দূরের দ্বীপ সানতোসায় অন্য আরেকটি হোটেলে বৈঠক করবেন তারা।

বিশ্বের সঙ্গে প্রায় বিচ্ছিন্ন উত্তর কোরিয়ার যে অল্প কয়েকটি দেশে দূতাবাস আছে তার একটি সিঙ্গাপুর। নগর রাষ্ট্রটির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক সম্পর্কও অত্যন্ত দৃঢ়। রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ সিঙ্গাপুরে আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থা অত্যন্ত কঠোর। দেশটিতে জনবিক্ষোভও খুব বিরল ঘটনা। যে কারণে সবপক্ষ এরকম একটি সংবেদনশীল সম্মেলনের আয়োজক দেশ হিসেবে সিঙ্গাপুরকে বেছে নিয়েছে বলে ধারণা রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের।

সুইজারল্যান্ডে লেখাপড়া করা কিম ২০১১ সালে উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ নেতা হওয়ার পর এই প্রথম উড়োজাহাজে এতটা পথ পাড়ি দিয়ে কোনো দেশ সফর করছেন। তার বোন কিম ইও জং তার সফর সঙ্গী হয়েছেন।‌ ‘রহস্যমানব’ হিসেবে পরিচিত কিম সম্পর্কে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের হাতে খুব অল্প তথ্যই আছে।

সিঙ্গাপুরে আসার পরপরই তিনি দেশটির প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সম্মেলনের আগে তিনি আর হোটেল থেকে বের হবেন না বলেই ধারণা ছিল অনেকের। কিন্তু সবাইকে অবাক করে সোমবার সন্ধ্যায় তিনি ‘‌মেরিনা বে স্যান্ডস’ হোটেলের বাগানে ঘুরতে বের হয়েছিলেন। বাগানে হাসিমুখের কিমের বেশ কিছু ছবি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। সেই ছবি রহস্যঘেরা এই নেতার ফুরফুরে মেজাজে থাকার প্রমাণ দিচ্ছে।

ট্রাম্প-কিম সম্মেলন কাভার করতে সারা বিশ্ব থেকে প্রায় তিন হাজার সাংবাদিক সিঙ্গাপুরে ভিড় করেছেন। ওদিকে, সিঙ্গাপুরে উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রদূতের বাসভবনে অবৈধভাবে প্রবেশের চেষ্টা করার সময় আটক দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রায়াত্ত্ব সাংবাদ মাধ্যমের দুই কর্মীকে বিতাড়ন করা হয়েছে।

Print Friendly

Related Posts