মাহাথিরের বিস্ময়কর বিজয়ের নেপথ্যে

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ ৯২ বছরের মাহাথির মোহাম্মদ মালয়েশিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে বিস্ময়কর নির্বাচনী বিজয় পেয়েছেন। কীভাবে তা সম্ভব হল। ১৯৫৭ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন অবসানের পর থেকে বরাবরই বারিসান ন্যাশনাল জোট মালয়েশিয়ার শাসনক্ষমতায় থেকেছে।

এই শাসক জোটের জনপ্রিয়তায় ভাঁটা পড়তে শুরু করলেও, বেশিরভাগ মানুষই কিন্তু ধারণা করেছিল প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক আরেক মেয়াদের জন্য আবার জয়ী হবেন। কিন্তু সরকারি গণনায় দেখা যাচ্ছে এই জোট আসলে জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় যথেষ্ট আসন সংসদে পায়নি, যা পর্যবেক্ষকদের রীতিমত বিস্মিত করেছে।

যেমনটা সচরাচর হয়ে থাকে, এক্ষেত্রেও কারণ মূলত অর্থনীতি। জীবনধারণের ব্যয় মালয়েশিয়ায় অত্যধিক বেড়ে গেছে এবং জিনিসপত্র ও বিভিন্ন সেবার ওপর সরকার নতুন নতুন কর আরোপ করেছে- যা কখনই জনপ্রিয় নয়।

তবে সাম্প্রতিক কয়েক বছরে মালয়েশিয়ার রাজনীতিতে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হল দুর্নীতি। নাজিব রাজাক বিদেশি বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে একটি বিশেষ তহবিল গঠন করেছেন। কিন্তু এই তহবিলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তারা এই তহবিল ব্যবহার করে ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধি করছে।

নাজিব রাজাকের বিরুদ্ধে ৭০ কোটি ডলার পকেটস্থ করার অভিযোগও উঠেছে। তবে সবচেয়ে বড় কথা নাজিব রাজাক এ অভিযোগ বরাবর অস্বীকার করে এসেছেন এবং নিজের দেশে কোনরকম অনিয়মের অভিযোগ থেকে তাকে অব্যাহতিও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অ্যামেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে তার ও এই তহবিলের বিরুদ্ধে অভিযোগে তদন্ত চলছে, যা বাইরে মালয়েশিয়ার ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে।

মাহাথির মোহাম্মদ অতীতেও প্রধানমন্ত্রীর এবং বারিসান ন্যাশানালের প্রধানের দায়িত্ব পালন করেছেন। ২২ বছর তিনি ক্ষমতায় ছিলেন – ১৯৮১ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত। ২০০৩-এ তিনি ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ান।

কিন্তু দু’বছর আগে সবাইকে তিনি হতবাক করে দিয়ে বলেন দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে তিনি এতটাই ”বিব্রত” যে তার পুরনো দল তিনি ছেড়ে দিচ্ছেন এবং বিরোধী জোট পাকাতান হারাপানে তিনি যোগ দিচ্ছেন । পাকাতান হারাপানের অর্থ ”আশার জোট”।

এরপর জানুয়ারি মাসে তিনি জানান তিনি একসময় তারই হাতে গড়া নাজিব রাজাকের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। তিনি আরও বলেন জয়ের ব্যাপারে তিনি আস্থাবান ”যদি না নাজিব কারচুপি করে”।

নির্বাচনের সময় বেশ কিছু কারচুপির অভিযোগও উঠেছে। লোকজন অভিযোগ করেছে তারা ডাকে ভোট দেবার ব্যালট কাগজ বা পোস্টাল ব্যালটের কাগজ পায়নি এবং সমালোচকরা অভিযোগ করেছে কোন কোন নির্বাচনী কেন্দ্রে সরকার এমনভাবে ভোটে কারচুপি করেছে যাতে জয় নিশ্চিত হয়।

বিশ্ব জুড়ে ”ভুয়া খবর” নিয়ে যে হৈচৈ ও আতঙ্ক তৈরি হয়েছে মালয়েশিয়ার সরকার সেই উদ্বেগে সামিল হয়ে দ্রুত নতুন একটি আইন প্রণয়ন করেছে যার আওতায় এধরনের খবর ”শেয়ার” করলে কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

কেউ কেউ মনে করছে সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনা বন্ধের এটা একটা পথ। মাহাথিরের বিরুদ্ধে এই আইনে অভিযোগও দায়ের করা হয়েছে।

নাজিব বলেছেন তিনি ”জনগণের রায়” মেনে নিয়েছেন। কিন্তু একই সঙ্গে তিনি একথাও বলেছেন যে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী যিনি হবেন তাকে সংসদ সদস্যদের আস্থা অর্জন করতে হবে।

মাহাথির অবশ্যই সেই আস্থা অর্জনে সফল হয়েছেন। শপথও নিয়েছেন। তবে তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন দু বছর পর তিনি ক্ষমতা আর কারও হাতে তুলে দেবেন। কারণ? – তার বয়স এখন ৯২!

আর সেটাও মালয়েশিয়ার রাজনীতির ক্ষেত্রে আরেকটা চমক সৃষ্টি করতে পারে, কারণ সেক্ষেত্রে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হবার বড়ধরনের সম্ভাবনা রয়েছে আনোয়ার ইব্রাহিমের- যিনি মাহাথিরের সাবেক ঘনিষ্ঠ ছিলেন এবং যাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়েছিলেন মাহাথির।

সূত্র : বিবিসি

Print Friendly

Related Posts