মহানাটকীয় ফাইনাল ॥ আনন্দবাজারপত্রিকা

শারজা ক্রিকেটের প্রাণপুরুষ আব্দুল রহমান বুখাতির এখন আর বেশি প্রকাশ্যে আসেন না। না এলেও বুখাতির নিশ্চয়ই দেখছেন, একটা মাঠ থেকে আর একটা মাঠে কী ভাবে কৌলীন্যের ব্যাটন বদল হচ্ছে। এই মহানাটকীয় ফাইনাল সেই ছবিটাই তুলে ধরল।

যে ছেলেটা এ দিন ভারতীয় বোলারদের দিশাহারা করে দিলেন, তাঁর এত দিন সর্বোচ্চ রান ছিল ৪১! লিটন দাসের (১১৭ বলে ১২১) নাম বাংলাদেশের বাইরে ক’টা লোক জানত? এখন জানবে। জানবে এক বাঙালি ছেলে আসল ম্যাচটাই বেছে নিয়েছিলেন নিজেকে প্রমাণ করার জন্য। ছিল, ফেভারিটদের ছাপিয়ে যাওয়ার জন্য আন্ডারডগদের মরিয়া চেষ্টা। যে চেষ্টার আঁচ পাওয়া গিয়েছে ফাইনালের ২৪ ঘণ্টা আগে বাংলাদেশের হোটেলে গিয়ে।

দেখা গিয়েছে, ডান হাতের কড়ে আঙুলে ব্যান্ডেজ বেঁধে ঘুরছেন অধিনায়ক মর্তুজা। আঙুলে প্রচণ্ড যন্ত্রণা। ব্যথা কমানোর ওষুধকে অস্ত্র করে লড়াই চালিয়েছেন। মুশফিকুর রহিমকে টিভি-তে কিপিং করতে দেখছে সবাই। কিন্তু কেউ জানে না, ওই সবুজ শার্টের তলায় তাঁর বুক পুরো স্ট্র্যাপে জড়ানো। পাঁজরে ব্যথা নিয়ে খেলে চলেছেন তিনি।

একটা ম্যাচে কম ঘাত-প্রতিঘাত তো দেখা গেল না। কোথাও যন্ত্রণাকে অগ্রাহ্য করে, জীবনকে বাজি রেখে মাঠে নেমে পড়া। কোথাও প্রতিযোগিতার সেরা ম্যাচেই নিজেকে ছাপিয়ে যাওয়া। কোথাও হ্যামস্ট্রিংয়ের চোট অগ্রাহ্য করে দলের স্বার্থে নিজেকে তুচ্ছ করা। যেমন মাশরফি মর্তুজা, যেমন লিটন দাস, যেমন কেদার যাদব।

এশিয়া কাপ ফাইনালের সাত ঘণ্টা পেন্ডুলামের মতো এ দিক, ও দিক দুলেছে। বাংলাদেশ বিনা উইকেটে ১২০। ভারতীয় দর্শকদের গলার আওয়াজকে ছাপিয়ে শোনা গিয়েছে ‘এগিয়ে চলো বাংলাদেশ।’ আবার দশ ওভারের মধ্যে মর্তুজাদের চার উইকেটের পতন, গ্যালারিতে স্লোগান— ‘জিতেগা ভাই জিতেগা, ইন্ডিয়া জিতেগা।’ রোহিত মেরেছেন, ভারতীয়রা গর্জেছেন। ধোনি আউট, বাংলার বাঘের হুঙ্কার শোনা গিয়েছে। রাতের মরুভূমিতে আবেগের রামধনু খেলা করেছে গ্যালারিতে।

শেষ ওভারে ভারতের দরকার ছিল ছয় রান। হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট পাওয়া কেদার যাদব তখন আবার নেমেছেন। সঙ্গী কুলদীপ যাদব। চাই পাঁচ বলে পাঁচ। তিন বলে দুই। এবং এক বলে এক। আবার একটা টাইয়ের সম্ভাবনা তখন সামনে চলে এসেছে। মাহমুদুল্লার করা ওই শেষ বলটা কেদারের প্যাড ছুঁয়ে চলে গেল ফাইন লেগে। সঙ্গে সঙ্গে মরুশহরে এশিয়া সেরার সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হল ভারতীয় ক্রিকেট। মরুভূমির বুকে প্রায় নতুন এক আরব্যরজনী লিখে ফেলা এগারো বাঙালি তখন বিধ্বস্ত। কারও মুখের হাসিটা টিভি-তে তখন খুবই করুণ দেখাচ্ছিল।

কৌশিক দাশ, দুবাই
Print Friendly

Related Posts