বিভীষিকাময় সে রাত ও চার মাসের প্রস্তুতি

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ ঠিক এক বছর আগে, ঢাকার গুলশানে হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলা, নৃশংস হত্যাযজ্ঞ, ১২ ঘণ্টার রুদ্ধশ্বাস জিম্মি সংকটের ঘটনা স্তম্ভিত করেছিল পুরো দেশকে। ২০১৬ সালের ১ জুলাই। রাত ৯টা বাজতে মিনিট দশেক বাকি। একসঙ্গে পাঁচ জঙ্গি অতর্কিত প্রবেশ করে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে। তারা ব্যাগ থেকে দ্রুত আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো অস্ত্র বের করে। কারও হাতে ছিল একে-২২ রাইফেল। কারও হাতে পিস্তল। একজনের হাতে ছিল চাপাতি। অস্ত্র বের করার পর কোনো সময়ক্ষেপণ না করেই এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে থাকে।বৃষ্টির মতো গুলি চালাতে চালাতে একেকজন একেক দিকে এগোতে থাকে। কেউ প্রবেশ করে মূল রেস্তোরাঁয়। কেউ যায় লনের টেবিলের দিকে, যেখানে বিদেশি অতিথিরা বসে খাবার খাচ্ছিলেন। মুহূর্তের মধ্যে নারকীয় তাণ্ডব শুরু হলে বেকারিতে অবস্থানরতরা যে যেভাবে পেরেছেন আত্মগোপনের চেষ্টা করেছেন। কেউ টেবিলের নিচে ঢুকেছেন। কেউ দৌড়ে বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। কেউ আশ্রয় নিয়েছেন দোতলায়। এক জাপানি নাগরিক আশ্রয় নেন কোল্ড রুমে।

বাইরের লনে বসে থাকা অতিথিদের কেউ কেউ গাছের আড়ালে লুকিয়েছেন। ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন বেকারির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাৎক্ষণিকভাবে কেউই বুঝতে পারেননি, কারা আক্রমণ চালিয়েছে। প্রথমে ভেবেছিলেন লুটপাটের উদ্দেশ্যে হামলা চালানো হয়েছে। লুটপাটের পর তারা চলে যাবে। হামলা চালানোর এক ঘণ্টার মধ্যেই তারা কিলিং মিশন শেষ করে।

পুলিশও প্রথমে ভেবেছিল চাঁদাবাজ-সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়েছে। হামলা প্রতিহত করতে গিয়ে শুরুতেই প্রাণ হারান পুলিশের দুই কর্মকর্তা। তারা হলেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার রবিউল ইসলাম ও বনানী থানার ওসি সালাহউদ্দিন আহমেদ খান।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, জঙ্গিদের টার্গেট ছিল মূলত বিদেশি অতিথি। বাঙালি বা মুসলিম অতিথিদের তারা সেহরি খাইয়েছে। অভয় দেয়ার চেষ্টা করেছে। তারপরও ২৫ জিম্মির সবারই প্রতি মুহূর্ত কেটেছে মৃত্যু আতঙ্কের মধ্য দিয়ে। রাতভর খুবই ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে ছিলেন সবাই। অনেকে বন্দি ছিলেন বাথরুমে।

২ জুলাই সকালে সেনা অভিযানে নিহত হয় হামলাকারী পাঁচ জঙ্গি। পাশাপাশি উদ্ধার করা হয় জিম্মিদের। এর আগেই হলি আর্টিজানের ভেতরে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় দেশি-বিদেশি ২০ নাগরিককে। এদের মধ্যে ১৭ জন বিদেশি। তিনজন বাংলাদেশি।

বিদেশিদের মধ্যে নয়জনই ইতালির নাগরিক। তারা হলেন- নাদিয়া বেনেদিত্তি, ভিনসেনজো দ আলেস্ত্রো, ক্লদিও মারিয়া দান্তোনা, সিমোনা মন্তি, মারিয়া রিবোলি, আডেলে পুলিজি, ক্লদিও কাপেল্লি, ক্রিস্টিয়ান রসি ও মার্কো তোন্দাৎ। ভয়াবহ এ হামলায় সাতজন জাপানি নাগরিক নিহত হয়েছেন। তারা হলেন- তানাকা হিরোশি, ওগাসাওয়ারা, সাকাই ইউকু, কুরুসাকি নুবুহিরি, ওকামুরা মাকাতো, শিমুধুইরা রুই ও হাশিমাতো হিদেকো। নিহতদের মধ্যে একজন ভারতীয় নাগরিক। তার নাম তারিশি জৈন। নিহত বাংলাদেশিরা হলেন- ফারাজ আইয়াজ হোসেন, অবিন্তা কবির ও ইশরাত আখন্দ।

 

মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত আকাশ :

‘মারা যাব নিশ্চিত। কালেমা পড়ে রেডি (প্রস্তুত)। তওবা-ইস্তেগফার করছিলাম। কান্নাকাটিও করি। এই ভেবে নিজেকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলাম যে, সারাজীবন নামাজ পড়েও কত বড় বড় আলেম ওলামার কলেমা নসিব হয় না। আমি তওবা করে মরতে পারছি। আমার মতো মৃত্যু কয়জনের হয়?’ বলছিলেন হলি আর্টিজান বেকারির সহকারী বাবুর্চি আকাশ খান (২০)।

ওই হামলার প্রত্যক্ষদর্শীদের অন্যতম একজন আকাশ খান জানান, ভয়াবহ সেই জঙ্গি হামলার দিন সারারাত তারা ৯ জন একটি বাথরুমে বন্দি ছিলেন। সেখানে দম বন্ধ হয়ে তারা প্রায় মারা যাচ্ছিলেন। সকালে জঙ্গিদের নির্দেশে রেস্টুরেন্টের একজন স্টাফ ও ওয়েটার এসে তাদের বাথরুম থেকে উদ্ধার করে। জঙ্গিদের হাতে ছিল অত্যাধুনিক অস্ত্র।

শুধু আকাশই নয়, সেদিন হলি আর্টিজান বেকারিতে জিম্মি ২৫ জনেরই এমন অবস্থা হয়েছিল। তাদের মধ্যে বেকারির ১৪ কর্মচারী ও ১১ জন অতিথি ছিলেন। সেদিন হামলা থেকে চার বিদেশিও বেঁচে ফিরেছিলেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন ভারতীয় নাগরিক সাত প্রকাশ। বাংলা বলতে পারায় তিনি বেঁচে যান। জাপানি নাগরিক ওয়াতানাবি তামোকি গুলিবিদ্ধ অবস্থায় একটি পরিত্যক্ত চুলার পেছনে লুকিয়ে ছিলেন সারারাত। শ্রীলঙ্কান দম্পতি হরিকেশা উইজেসেকেরা ও ফেফতা সায়মা উইজেসেকেরা দম্পতিও ওই চুলার পেছনে লুকিয়ে থাকার কারণে জঙ্গিরা তাদের খুঁজে পায়নি।

আকাশ খান সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘ওইদিন সন্ধ্যা ছয়টার দিকে কাজে যাই। রাত ৯টার কিছু আগে একটি অর্ডারের মাল কাটছিলাম। হঠাৎ দেখি শেফ দিয়াগো ও জ্যাকপো পেছনের দিকে দৌড়াচ্ছেন আর বলছেন- গো, গো। আমি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। ঘটনা বুঝতে গেস্টদের টেবিলের সামনে যাই। দেখি, গেস্টরা ছোটাছুটি করছেন। টেবিলের নিচে, দেয়াল ও পিলারের পাশে আশ্রয় নিচ্ছেন। ভাবলাম, হয়তো ভূমিকম্প হচ্ছে। কারণ এর আগে যখন ভূমিকম্প হয়েছিল তখন গেস্টরা এভাবেই আশ্রয় নিয়েছিলেন। আমিও নিরাপদে আশ্রয় নেয়ার চেষ্টা করছিলাম। হঠাৎ দেখি, কাঁধে ব্যাগ ও হাতে অস্ত্র নিয়ে বৃষ্টির মতো গুলি ছুড়ছে এক যুবক। এ দৃশ্য দেখে আমি দ্রুত পালানোর চেষ্টা করি। একটি বাথরুমের সামনে গিয়ে দেখি, অনেকে বাথরুমে আশ্রয় নিয়েছেন। আমিও সেখানে ঢুকে পড়ি। পরে হোটেল কর্তৃপক্ষকে ফোন করে বলি, হোটেলে সন্ত্রাসী ঢুকেছে। তাড়াতাড়ি পুলিশ পাঠান। এরপর বাথরুমে বসে মোবাইলের মাধ্যমে টিভি চ্যানেলের খবর দেখে ঘটনা জানার চেষ্টা করি। তাছাড়া আত্মীয়-স্বজন ও পরিচিতদের সঙ্গে মোবাইলে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখি। হঠাৎ বাথরুমের ওপর দৌড়াদৌড়ির শব্দ শুনে মনে করি, পুলিশ এসেছে। সন্ত্রাসীরা পালাচ্ছে। এ সময় আমরা স্বস্তি অনুভব করি। এর কিছুক্ষণ পরই খবরে দেখি, সন্ত্রাসীদের হামলায় দু’জন পুলিশ নিহত হয়েছেন। এ সময় আতঙ্ক বেড়ে যায়। পাশাপাশি বাথরুমে গরমের তীব্রতাও বেড়ে যায়।’

আকাশ বলেন, ‘রাত ২টার দিকে জঙ্গিরা আমাদের বাথরুমের সামনে আসে। তখন ভাবি, আজরাইল এসে গেছে। এখন জানটা কবজ করবে। তখন যে আমাদের কেমন লেগেছে বলে বোঝাতে পারব না। তারা দরজায় নক করে বলে, ভেতরে কারা আছ? বের হও। আমরা কোনো কথা না বলায় তারা হুমকি দেয়, বের না হলে গ্রেনেড মেরে সব উড়িয়ে দেব। এক পর্যায়ে দরজা খুললাম। অস্ত্রের মুখে তারা জানতে চাইল, কোনো ফরেনার আছে কিনা। আমরা নাসূচক জবাব দেয়ার পর তারা আমাদের সবাইকে চেক করে। পরে তারা বাথরুমের ভেতরে রেখে দরজা বাইরে থেকে আটকিয়ে সেখান থেকে চলে যায়। তখন অক্সিজেনের অভাবে আমাদের জীবন যায়যায়। সবাই বাথরুমের ফ্লোরে শুয়ে দরজার নিচের সামান্য ফাঁকে নাক ঠেকিয়ে শ্বাস নিচ্ছিলাম। এক পর্যায়ে আমাদের মনে হল- এভাবে মৃত্যুর চেয়ে সন্ত্রাসীদের গুলিতে মরাই ভালো। তাই দরজায় ধাক্কাধাক্কি করছিলাম আর বলছিলাম, আমাদের বাঁচান। সকাল ৬টা-৭টার দিকে জঙ্গিদের নির্দেশেই একজন স্টাফ ও একজন ওয়েটার এসে দরজা খুলে দেয়। তখন ভেবেছিলাম পুলিশ প্রশাসনের লোক ভেতরে ঢুকেছে। সন্ত্রাসীরা চলে গেছে। তাই রেস্টুরেন্ট থেকে বের হওয়ার আগে আমি গেস্টদের অবস্থা দেখতে চারপাশ ঘুরছিলাম। দেখলাম চারপাশে লাশ আর জমাটবাঁধা রক্ত। হোটেলের অবস্থা একেবারে তছনছ। ধারণা হচ্ছিল, সন্ত্রাসীরা ভেতরে ঢোকার এক ঘণ্টার মধ্যেই হত্যাযজ্ঞ শেষ করেছে।

আকাশ বলেন, ‘সকালে আমরা দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষে আশ্রয় নিই। সেখানে আরও কয়েকজন আশ্রয় নিয়েছিল। কিছুক্ষণ পর সেনাবাহিনীর গুলি শুরু হয়। আমরা বাঁচাও, বাঁচাও বলে চিৎকার করি। সেনা সদস্যরা আমাদের কাছে গিয়ে অস্ত্র তাক করে সবাইকে নিচে আসতে বলে। এ সময় মুহূর্তে আমি একজন সেনা সদস্যের কাছে জানতে চাই, সন্ত্রাসীদের কী হয়েছে? তিনি জানান, গুলিতে সব সন্ত্রাসী মারা গেছে। পরে নিচে নেমে এসে দেখি একসঙ্গে পাঁচ জঙ্গির লাশ পড়ে আছে। সেনা সদস্যরা আমাদের উদ্ধারের পর হলি আর্টিজানের পাশের একটি বাড়িতে নিয়ে যান। পরে সেখান থেকে নেয়া হয় ডিবি কার্যালয়ে।’

ভারতীয় নাগরিক সাত প্রকাশ :

ভারতীয় নাগরিক সাত প্রকাশ গুলশান হামলার ২৬ দিন পর আদালতে ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি জবানবন্দিতে বলেছেন, সেদিন বাংলা বলতে পারায় বেঁচে ফিরেছিলেন তিনি। তিনি বাঙালি কিনা জঙ্গিরা তার কাছে জানতে চেয়েছিল। তিনি তাদের বলেছেন, ইয়েস, আমি বাঙালি। তার ভাষ্য, জঙ্গিরা ভেতরে ঢুকে বিদেশি নাগরিকদের নির্বিচারে কুপিয়ে ও গুলি চালিয়ে হত্যা করেছে। প্রথমদিকে জঙ্গিরা গুলি করে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে। পরে তারা চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে। রাত ১২টা পর্যন্ত জঙ্গিরা হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে।

তার ভাষ্য, তাদের প্রতিটি মুহূর্ত পার হয়েছে আতঙ্কে। তাদের আদৌ বাঁচিয়ে রাখা হবে কিনা তা অনুমান করতে পারছিলেন না। তারা ধরেই নিয়েছিলেন, নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। রাতে বাইরে থেকে জঙ্গিদের কাছে আসা অভিনন্দন বার্তাও তারা পড়ে শোনায়।

সাত প্রকাশ জানান, জিম্মিদের সেদিন সেহরি খেতে বলা হয়েছিল। অনিচ্ছা সত্ত্বেও সন্দেহ এড়াতে সেদিন তিনি অন্যদের সঙ্গে সেহরি খান।

সাত প্রকাশ ঢাকায় একটি মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে পরিচালক হিসেবে কাজ করেন। কয়েক বছর ধরেই তিনি ঢাকায় আছেন। তিনি সেদিন ডিনার করতে হলি আর্টিজানে গিয়েছিলেন। তার সঙ্গে এক বন্ধুর যোগ দেয়ার কথা ছিল। এর আগেই জঙ্গিরা সেখানে হামলা চালায়।

ওয়াতানাবি তামোকি :

জাপানি নাগরিক ওয়াতানাবি তামোকি জাইকার হয়ে বাংলাদেশে কাজ করতেন। তিনি ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের কর্মকর্তাদের কাছে সেদিনের ঘটনা বর্ণনা দিয়েছেন।

তিনি জানিয়েছেন, সেদিন গোলাগুলি শুরু হওয়ার পর তিনি দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন। এ সময় তিনি গুলিবিদ্ধ হন। তারপর তিনি পরিত্যক্ত চুলার পেছনে আশ্রয় নেন। সারারাত তিনি সেখানেই ছিলেন। জঙ্গিরা তাকে খুঁজে পায়নি। পরদিন ভোরে কমান্ডো অভিযান শেষে তাকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। পরে তাকে ঢাকার সম্মিলিত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ১৩ জুলাই তিনি টোকিও ফিরে যান।

 

চার মাস ধরে প্রস্তুতি :

ভয়াবহ ওই হামলার জন্য জঙ্গিরা চার মাস ধরে প্রস্তুতি নিয়েছিল। যদিও হামলার লক্ষ্যবস্তু হিসেবে হোলি আর্টিজান বেকারিকে বেছে নেওয়া হয় হামলার দুই সপ্তাহ আগে। আর হামলাকারী দলটি তাদের লক্ষ্যস্থল সম্পর্কে জানতে পারে হামলার মাত্র তিন-চার দিন আগে।

গ্রেপ্তার জঙ্গিদের আদালতে দেওয়া জবানবন্দি বিশ্লেষণ এবং তদন্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিকবার আলোচনার ভিত্তিতে ওই হামলার যে  চিত্র পাওয়া গেছে তাতে দেখা যায়, নব্য জেএমবি নামে পরিচিতি পাওয়া জঙ্গিগোষ্ঠী গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাজধানীর কূটনৈতিক এলাকায় বিদেশিদের ওপর বড় ধরনের হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়। আইএস মতাদর্শ অনুসরণকারী এই গোষ্ঠীর কথিত শুরা কমিটি ঢাকা থেকে প্রায় ২৩৫ কিলোমিটার দূরে গাইবান্ধার সাঘাটায় বৈঠক করে এই সিদ্ধান্ত নেয়।

হামলার পরিকল্পনা, প্রশিক্ষণ ইত্যাদির সঙ্গে যাঁরা প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন, তাঁদের আটজন পরবর্তী এক বছরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন অভিযানে নিহত হয়েছেন। গ্রেপ্তার হয়েছেন তিনজন। আরও পাঁচজন এখনো অধরা আছেন।

হামলার প্রস্তাব তামিম চৌধুরীর :

২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর থেকে একের পর এক বিদেশি নাগরিক, খ্রিষ্টধর্মাবলম্বী, হিন্দু পুরোহিত, শিয়া অনুসারীকে হত্যা, শিয়া ও আহমদিয়া মসজিদে হামলার মধ্য দিয়ে আলোচনায় আসে নব্য জেএমবি। এরই ধারাবাহিকতায় এই জঙ্গিরা রাজধানীতে বড় ধরনের আক্রমণের পরিকল্পনা করেন। গত বছরের ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার বোনারপাড়া বাজারে কলেজ মোড়-সংলগ্ন এলাকায় একটি বাড়িতে তাঁরা শুরা কমিটির বৈঠক করেন।

বৈঠকে নব্য জেএমবির প্রধান সংগঠক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক তামিম আহমেদ চৌধুরী ঢাকার কূটনৈতিক এলাকায় বড় ধরনের হামলার প্রস্তাব করেন। তিনি জানান, বিদেশিদের ওপর আক্রমণ করতে হবে। বিভিন্ন দেশে জিহাদিরা যেভাবে হামলা করে, সে ধরনের আক্রমণ করতে হবে। অন্যরা এমন হামলার সামর্থ্য ও প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চান। পরে হামলার সিদ্ধান্ত অনুমোদন করে শুরা কমিটি।

শুরা বৈঠকে তামিম ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন শুরা সদস্য সারোয়ার জাহান ওরফে মানিক, মেজর (অব.) জাহিদুল ইসলাম, নুরুল ইসলাম ওরফে মারজান, জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধী, শরিফুল ইসলাম খালেদ, মামুনুর রশিদ ওরফে রিপন, আবু রায়হান ওরফে তারেক প্রমুখ।

বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, হামলার মূল সমন্বয়ক হবেন তামিম চৌধুরী। সহ-সমন্বয়ক নুরুল ইসলাম ওরফে মারজান। মারজান ছিলেন তামিমের ডান হাত। আনুষঙ্গিক সরবরাহের (লজিস্টিক সাপোর্ট) দায়িত্বে ছিলেন সফটওয়্যার প্রকৌশলী বাশারুজ্জামান ওরফে চকলেট।

আত্মঘাতী হামলাকারী নির্বাচন :

শুরা কমিটি হামলার প্রস্তাব অনুমোদন করার পর হামলার জন্য পাঁচজন ইসাবা (যোদ্ধা বা আক্রমণকারী) বাছাই করার জন্য নব্য জেএমবির তখনকার সামরিক কমান্ডার শরিফুল ইসলাম ওরফে খালেদকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। বলা হয়, ঢাকার ছেলে লাগবে, যাঁরা গুলশান এলাকার পরিবেশ ও পথঘাটের সঙ্গে পরিচিত।

তখন নব্য জেএমবির ঢাকার সামরিক কমান্ডার ছিলেন আবু রায়হান ওরফে তারেক (পরে কল্যাণপুরের আস্তানায় পুলিশের অভিযানে নিহত)। আর উত্তরবঙ্গের কমান্ডার ছিলেন জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধী (এখন কারাগারে)। এই দুজনকে বাছাই করা এমন কয়েকজন ইসাবা দিতে বলেন খালেদ, যাঁরা আত্মঘাতী হবেন।

তারেক তিনজনের নাম দেন। তাঁরা হলেন রোহান ইমতিয়াজ, নিবরাস ইসলাম ও সামেহ মোবাশ্বের। তিনজনেরই বাসা ঢাকায়। ইংরেজি মাধ্যমে লেখাপড়া করা উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান। আর রাজীব গান্ধী দুজনের নাম দেন। তাঁরা হলেন শফিকুল ইসলাম ওরফে উজ্জ্বল ওরফে বিকাশ ও খাইরুল ইসলাম পায়েল ওরফে বাঁধন। এই দুজনের বাড়ি বগুড়ায়। একজন কলেজে, অপরজন মাদ্রাসায় লেখাপড়া করেন। দুজনই দরিদ্র পরিবারের সন্তান।

এ ছাড়া রাজীব গান্ধী আরও একজনকে সরবরাহ করেছিলেন। তাঁর নাম শরিফুল ইসলাম ওরফে ডন, বাড়ি দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে। শরিফুল গত বছর শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতে হামলা করতে গিয়ে আহত অবস্থায় গ্রেপ্তার হন এবং পরে র‍্যাবের বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন।

এই ছয়জনসহ বেশ কয়েকজন তরুণ গত বছরের জানুয়ারি থেকে কথিত হিজরতের নামে বাড়ি ছাড়েন। তাঁরা বাড়ি ছেড়েছিলেন সিরিয়ায় যাওয়ার লক্ষ্যে। তাঁদের মধ্যে নিবরাস, রোহান ও সামেহ মোবাশ্বের এবং কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় হামলা করতে গিয়ে নিহত আবিরসহ কয়েকজন বাড়ি ছেড়ে ঝিনাইদহে জঙ্গিদের ভাড়া করা বাড়িতে ওঠেন ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে। তাঁদের সেখানে নিয়ে যান মারজানের ভগ্নিপতি হাদিসুর রহমান ওরফে সাগর। নব্য জেএমবির নেতা সাগর ওই বাড়িটি ভাড়া করেন। আর গুলশান হামলায় সরাসরি জড়িত অপর দুই জঙ্গিসহ ঘরছাড়া অনেকে বগুড়া, গাইবান্ধা, পাবনায় বিভিন্ন জঙ্গি আস্তানায় ছিলেন।

বাড়ি ছাড়ার পর এসব তরুণকে বিভিন্ন জঙ্গি আস্তানায় রেখে জঙ্গিবাদের বিষয়ে তাত্ত্বিক দীক্ষার পাশাপাশি বিভিন্ন হত্যাকাণ্ডে ব্যবহার করা হয়। গুলশান হামলায় জড়িত পাঁচজনকে দিয়েও ওই সময় ঝিনাইদহ, টাঙ্গাইল ও উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় হিন্দু পুরোহিত, ধর্মান্তরিত খ্রিষ্টান, শিয়াসহ বেশ কয়েকজনকে হত্যা করানো হয়। এভাবে তাঁদের মানুষ খুনে অভ্যস্ত করা হয়। পরে তাঁদের বোঝানো হয়, জিহাদ করতে সিরিয়ায় যাওয়ার দরকার নেই। দেশেও অনেক কাজ আছে।

মে মাসের শুরুতে গুলশান হামলার জন্য নির্বাচিত পাঁচজনকে মারজানের কাছে পাঠান কথিত সামরিক কমান্ডার খালিদ। মারজান তাঁদের নিয়ে যান গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার ফুলছড়ি চরে। সেখানে ক্যাম্প করে ২৮ দিনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। মেজর (অব.) জাহিদুল ইসলাম ছিলেন প্রধান প্রশিক্ষক। তিনি একে-২২ রাইফেল ও পিস্তল চালানোর প্রশিক্ষণ দেন। তারেক শেখান বোমার ব্যবহার।

রাজীব গান্ধী জবানবন্দিতে বলেছেন, ওই প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে তিনি নিজে, তামিম চৌধুরী, সরোয়ার জাহান ওরফে মানিক, মারজান, রাকিবুল হাসান ওরফে রিগ্যান, খালেদ ও রিপন বিভিন্ন সময়ে যান। তাঁরা সাংগঠনিক বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেন।

তাঁদের মধ্যে তামিম, মেজর জাহিদ, তারেক ও সারোয়ার পরে র‍্যাব-পুলিশের বিভিন্ন অভিযানে নিহত হন। রিগ্যান কল্যাণপুরের আস্তানা থেকে গ্রেপ্তার হন। পরে রাজীব গান্ধী গ্রেপ্তার হন। বাশারুজ্জামান, খালিদ ও রিপন এখনো ধরা পড়েননি।

হোলি আর্টিজানে হামলার চূড়ান্ত প্রস্তুতি :

মে মাসের মাঝামাঝি বাশারুজ্জামানকে দায়িত্ব দেওয়া হয় কূটনৈতিক এলাকার কাছাকাছি বসুন্ধরা এলাকায় বাসা ভাড়া করার জন্য। তিনি নব্য জেএমবির আরেক গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা তানভীর কাদেরিকে নিয়ে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ৬ নম্বর রোডের ই-ব্লকে পাঁচ কক্ষের একটি ফ্ল্যাট ভাড়া করেন। ওই বাসার ফ্রিজ ও আসবাবও কেনা হয়। ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে দিয়ে আসা তানভীর পরে পুলিশের আজিমপুর অভিযানে নিহত হন।

একই সময় ১ জুন শেওড়াপাড়ায়ও একটি বাসা ভাড়া করা হয়। এটিকে জঙ্গিরা তাঁদের ভাষায় ‘কন্ট্রোল রুম’ বানান। হামলার শুরুর আগ দিয়ে তামিম ও মারজান সেখানে গিয়ে ওঠেন। এ ছাড়া পল্লবীর রূপনগরে ও নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় আরও দুটি বাসা ভাড়া করা হয়।

জুনের ১ তারিখে তানভীর সপরিবারে বসুন্ধরার বাসায় ওঠেন। ৭ জুন ওই বাসায় ওঠেন বাশারুজ্জামান। পরদিন ৮ জুন পাঁচ আক্রমণকারীকে নিয়ে সেখানে ওঠেন মারজান ও তাঁর স্ত্রী। ১১ জুন আসেন তামিম চৌধুরী। তখনো হোলি আর্টিজানকে লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ করা হয়নি।

কয়েক দিন পর মারজান পাঁচটি ব্যাগ (ব্যাকপ্যাক) নিয়ে আসেন। তাতে পিস্তল, একে-২২ রাইফেল, চাপাতি ও বোমা ছিল। ১ জুলাই পর্যন্ত ওই বাসায় তাঁরা সবাই অবস্থান করেছেন। বড় একটি কক্ষে পাঁচজনকে নিয়ে তামিম সারা দিন জিকির করতেন। তাঁরা ওই কক্ষ থেকে কম বের হতেন। নামাজ পড়তেন ও খাবার খেতেন এই কক্ষে। বাকি কক্ষগুলোতে তানভীর, মারজান, বাশারুজ্জামান, রাজীব গান্ধী ও তাঁদের স্ত্রী ও সন্তানেরা থাকতেন।

জঙ্গিদের লক্ষ্য ছিল গুলশান-বনানী এলাকার কোথাও হামলাটা চালানো। সিদ্ধান্ত হয়, হামলার জন্য এমন স্থান বেছে নিতে হবে, যেখানে একসঙ্গে বেশিসংখ্যক বিদেশি নাগরিক সমবেত হন ও সিসি ক্যামেরা নেই। সে অনুযায়ী, জুনের মাঝামাঝি থেকে লক্ষ্যবস্তু চূড়ান্ত করতে গুলশান এলাকার বিভিন্ন হোটেল-রেস্তোরাঁ রেকি (আক্রমণপূর্ব পর্যবেক্ষণ) শুরু করে জঙ্গিরা।

একপর্যায়ে জঙ্গিরা হোলি আর্টিজানকে বাছাই করেন। তাঁরা নিশ্চিত হন, হোলি আর্টিজানে অনেক বিদেশি খেতে আসেন। শুক্রবারে ভিড় আরও বাড়ে। এর নিরাপত্তাব্যবস্থা ঢিলেঢালা। সেখানে সিসি ক্যামেরা আছে, তাতে কে আসা-যাওয়া করছে তা দেখা যায়, কিন্তু রেকর্ড হয় না। হোলি আর্টিজানের পেছনে লেক। হামলার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কেবল সামনের দিক থেকে মোকাবিলা করতে হবে। এসব বিবেচনা করে সবদিক থেকেই উপযুক্ত লক্ষ্যবস্তু হিসেবে জঙ্গিরা হোলি আর্টিজান বেকারিকে বেছে নেয়। ঘটনার তিন-চার দিন আগে হামলাকারী দলটিকে জানিয়ে দেওয়া হয় যে হোলি আর্টিজানই হচ্ছে তাদের টার্গেট।

নিবরাস, রোহান ও মোবাশ্বের আগে থেকে এই বেকারি চিনতেন। তামিমের নির্দেশে ২৭ জুন সন্ধ্যার পর রোহান ও নিবরাসকে নিয়ে মারজান হোলি আর্টিজান রেকি করেন। পরদিন সন্ধ্যায় আবার বাশারুজ্জামান, খায়রুল ও শফিকুল রেকি করেন। রাত আনুমানিক সাড়ে ১০টায় তাঁরা বসুন্ধরার বাসায় ফিরে এসে অন্যদের সঙ্গে আলোচনা করেন। এরপর ২৯ জুন তামিম, রোহান ও মোবাশ্বের সন্ধ্যার পর বের হন এবং হোলি আর্টিজান রেকি করেন। তাঁরা রাত ১১টায় বাসায় ফিরে আসেন। এরপর তামিম হামলাকারী দলের সবাইকে নিয়ে বসেন। রোহান ইমতিয়াজকে হামলার নেতৃত্বের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

rfh

অপারেশন পর্ব:

রাজীব গান্ধীর জবানবন্দির বিবরণ অনুযায়ী, ৩০ জুন সকালে বসুন্ধরার বাসায় আসেন সারোয়ার জাহান। সবাইকে নিয়ে তিনি বৈঠক করেন। তিনি জানান, পরদিন ১ জুলাই হোলি আর্টিজানে হামলা হবে। বিকেলে সারোয়ার জাহানের ইমামতিতে সবাই আসরের নামাজ পড়েন। তারপর সারোয়ার জাহান হামলাকারী পাঁচজনের উদ্দেশে বক্তৃতা করেন। সারোয়ার বলেন, ‘তোমরা হোলি আর্টিজানে হামলার সময় কখনো হতাশ হবে না। একজনের গুলি শেষ হলে আরেকজন ব্যাকআপ দেবে। মনে রাখবে, আমাদের হারানোর কিছু নেই। অপারেশনের সময় তাড়াহুড়োর দরকার নেই। খুব গুরুত্ব দিয়ে কাজগুলো করবে। আর মুশরেকদের ওপর কোনো দয়া দেখাবে না। এমনকি সে যদি সাংবাদিকও হয়। সর্বদা জিকিরের মধ্যে থাকবে। যদি কেউ বন্দী হয়ে যায়, তাহলে নিজেকে নিজে শেষ করে দেবে।’ এরপর সারোয়ার চলে যান। তামিম হামলাকারী পাঁচজনের জন্য পাঁচটি টি-শার্ট ও পাঁচটি জিনসের প্যান্ট কিনতে পাঠান বাশারুজ্জামানকে।

পরদিন ১ জুলাই সকাল ১০টার সময় বাশারুজ্জামান বসুন্ধরার বাসায় এসে হামলাকারীদের প্রত্যেকের ব্যাগে একটি করে একে-২২, একটি পিস্তল, একটি চাপাতিসহ পর্যাপ্ত পরিমাণে গুলি ঢুকিয়ে দেন। চারটি গ্রেনেড (হাতে তৈরি বোমা) নিবরাসদের দুজনের ব্যাগে দুটি করে ঢুকিয়ে দেন। এরপর বসুন্ধরার বাসায় সবাই জোহরের নামাজ পড়েন। বেলা তিনটার দিকে তামিম সিদ্ধান্ত জানান, রাজীব গান্ধী স্ত্রী-সন্তানসহ রূপনগরের নতুন বাসায় চলে যাবেন। তারপর আসরের নামাজের পর রোহান, নিবরাস ও মোবাশ্বের অস্ত্র-গুলির ব্যাগসহ বের হয়ে যাবেন। তার এক ঘণ্টা পর অপর দুজন শফিকুল ও খাইরুল বের হবেন।

নির্দেশ অনুযায়ী দুই ভাগে ভাগ হয়ে আক্রমণকারী পাঁচজন কিছু পথ রিকশায় এবং কিছু পথ হেঁটে ঘটনাস্থলে পৌঁছান। এর পরপর বাশারুজ্জামান সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ে আসেন। এতে চেপে তামিম ও মারজান একসঙ্গে বের হন। তাঁরা শেওড়াপাড়ার বাসায় ওঠেন। যাওয়ার সময় বাকিদের ইফতার সঙ্গে নিয়ে দ্রুত বের হয়ে যেতে বলে যান। এরপর তানভীর কাদেরি ও বাশারুজ্জামান সপরিবারে ওঠেন পল্লবীর রূপনগরের বাসায়। যেখানে আগে থেকে ছিলেন মেজর জাহিদ ও তাঁর পরিবার।

ইফতারের পর জঙ্গিরা হোলি আর্টিজানে আক্রমণ করেন। তাঁরা ভেতরে থাকা সবাইকে জিম্মি করেন। এরপর দেশি-বিদেশি ২০ জনকে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করেন। ওই সময় অভিযানে গিয়ে জঙ্গিদের বোমায় নিহত হন দুই পুলিশ কর্মকর্তা।

তামিম ও মারজান শেওড়াপাড়ার বাসায় উঠে ইন্টারনেটে যোগাযোগের অ্যাপ থ্রিমায় হামলার খবরের অপেক্ষায় থাকেন। জঙ্গিরা হত্যাযজ্ঞ শেষ করে জিম্মিদের ফোন থেকে তামিমকে অ্যাপে মেসেজ পাঠায়। হামলাকারীরা সঙ্গে কোনো ফোন নেয়নি। হামলার পরদিন তামিম শেওড়াপাড়ার বাসা থেকে নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় ভাড়া করা বাসায় চলে যান। সঙ্গে যান নব্য জেএমবির মিডিয়াপ্রধান তাওসিফ। মারজান চলে যান রূপনগরের বাসায়।

তথ্যসূত্র : যুগান্তর ও প্রথম অালো

Print Friendly

Related Posts