ভোলার দানবীর শিক্ষানুরাগী আব্দুল মতিন মিয়ার ২০তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত

এ এইচ এম মাইনউদ্দিন আহমেদ জাহাঙ্গীর

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ ১০ জুন ছিল ভোলা জেলার চরফ্যাশনের অন্যতম দানবীর,বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী,সমাজ সেবক ও ফাতেমা মতিন মহিলা মহাবিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা আলহাজ্ব এ কে এম আব্দুল মতিন মিয়ার ২০ তম মৃত্যুবার্ষিকী।

এ উপলক্ষে মহাবিদ্যালয়ে খতমে কোরআন, দোয়া ও মোনাজাতের আয়োজন করা হয়। এতে অংশগ্রহণ করেন ফাতেমা মতিন মহিলা মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ, শিক্ষকমন্ডলীও কর্মচারীবৃন্দ।

মরহুমের প্রতিষ্ঠিত হাফেজিয়া মাদ্রাসায়ও দিনটি স্মরণে খতমে কোরআন, দোয়া ও মোনাজাতের আয়োজন করা হয়।

মরহুমের পুত্র বিশিষ্ট আইনজ্ঞ এ এইচ এম মাইনউদ্দিন আহমেদ জাহাঙ্গীর এনজিওবিদ ও সোশ্যাল ওয়ার্কে নিবেদিত প্রাণ হিসেবে আন্তর্জাতিক মহলে সুপরিচিত।

আলহাজ্ব এ কে এম আব্দুল মতিন মিয়া ১৯৯২ সালে নারী শিক্ষা প্রসারে চরফ্যাশন থানার পাশে নিজের এক একর জমিতে গড়ে তোলেন ফাতেমা মতিন মহিলা ডিগ্রি কলেজ।এই কলেজে এগারশো ছাত্রী বর্তমানে পড়াশোনা করছে। বরিশাল বিভাগের শ্রেষ্ঠ কলেজ হিসেবে ফাতেমা মতিন মহিলা ডিগ্রি কলেজ স্বীকৃতি পেয়েছে। চরাঞ্চলে নারী শিক্ষার প্রসার ঘটানো ছিল মতিন মিয়ার স্বপ্ন। তার স্বপ্ন সার্থক।

মতিন মিয়া ২০০০ সালের ১০ জুন মৃত্যুবরণ করেন। তাকে বনানী কবরস্থানে কবর দেওয়া হয়। তিনি জন্মগ্রহণ করেন ১৯২২ সালে। তার বাবা ছিলেন স্থানীয় জোতদার। প্রায় পাঁচশ একর জমির মালিক ছিলেন। শিক্ষানুরাগী বাবা হাজী আঃ গণি শিকদার ছেলেকে পার্শ্ববর্তী থানা দৌলত খাঁ স্কুলে পড়তে পাঠান। সেখান থেকে মতিন মিয়া ম্যাট্রিক পাস করেন। পরে ভর্তি হন বরিশাল বিএম কলেজে। সেখান থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে কলকাতা চলে যান। মতিন মিয়া কলকাতা কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েশন করেন। উচ্চশিক্ষা শেষে তিনি চরফ্যাশনে চলে আসেন। পঁয়ত্রিশ বছর বয়সে মহাত্মা গান্ধীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে খদ্দরের পাজামা-পাঞ্জাবি পরেছেন। আমৃত্যু তিনি এই পোশাক এবং সাদাসিধে জীবনযাপন করেছেন।

১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় দশ লাখ লোকের প্রাণহানি ঘটে। উপকূলীয় এলাকায় ভয়াবহ প্রাণহানি বেশি ঘটেছিল। মানুষের ঘরবাড়ি, পশুপাখি, হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল-মহিষ বানের পানিতে ভেসে গিয়েছিল। দরদী মতিন মিয়া দুর্গত এলাকার মানুষদের উদ্ধার কাজে নেতৃত্ব দেন। ঘূর্ণিঝড়ে বাবা-মা হারানো শিশুদের জন্য গড়ে তোলেন চরফ্যাশন এতিমখানা। তিনি এতিমখানাকে ৭ একর ২১ শতক জমি দান করেন। শত শত শিশু এই এতিমখানায় থেকে পড়াশোনা করে আজ সমাজে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছেন।

মতিন মিয়া চরফ্যাসন ডিগ্রি কলেজের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন। চরফ্যাশন পিটি স্কুলের গভর্নিং বডির সেক্রেটারী ছিলেন বহু বছর। তার উদ্যোগে এই স্কুলে ১৯৬৬ সালে বিজ্ঞান বিভাগ চালু হয়। তিনি তাঁর মেধাবী ছেলেকে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি করেন। মতিন মিয়ার সামর্থ্য ছিল ছেলেকে ঢাকার নামকরা স্কুলে পড়ানোর। তিনি তা করেননি বলে অন্যরা উৎসাহিত হলো নিজেদের সন্তানকে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি করাতে। এভাবেই তিনি নিজের সন্তানের জন্য যেটা মঙ্গলজনক মনে করতেন সেটা অন্যের সন্তানের জন্য ব্যবস্থা করতে চাইতেন।

তাঁর বাড়ি ছিল সব অসহায় ছাত্র-ছাত্রীর আশ্রয়কেন্দ্র। চলি্লশ-পঞ্চাশজন ছাত্র তাঁর বাড়িতে থেকে স্কুল-কলেজে পড়াশোনা করতো।

চরফ্যাশন পৌরসভা একটি রাস্তার নামকরণ করেছে ‘মতিন মিয়া সড়ক’। মতিন মিয়ার অবদান মানুষ স্মরণ করবে বহুকাল।

ঢাকা/টিপু

Print Friendly

Related Posts