ভাঙ্গা পা নিয়েই রোগীদের সেবা দিচ্ছেন নার্স আয়শা

কাজী দুলাল, দুমকি (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি: নিজের ভাঙ্গা পা নিয়ে যেখানে বিশ্রামে থাকার কথা ছিল সেখানে তিনি রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন অবিরত। তিনি পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সিনিয়র স্টাফ নার্স আয়শা মার্যান প্রমি।

ওই হাসপাতালে মোট ৫ জন সিনিয়র নার্সিং কর্মকর্তা রয়েছেন। তার মধ্যে রাশিদা আক্তার লিমা বর্তমানে হেপাটাইটিস বিষয়ে ট্রেনিংয়ের জন্য ঢাকায় অবস্থান করছেন। ইসরাত জাহান নামের একজন চোখ ওঠা  অসুস্থতার কারণে ছুটিতে রয়েছেন। মরিয়ম আক্তার নামের একজন মটর সাইকেল দূর্ঘটনায় মাথায় সমস্যা নিয়ে ছুটিতে আছেন। এস. এম.আজিজুল হক নামের একজন ওরিয়েন্টেশন ট্রেনিংয়ে বরিশালে অবস্থান করছেন। যার কারণে তিনি আয়শা মার্যান প্রমি একমাত্র সিনিয়র স্টাফ নার্স হিসেবে ভাঙ্গা পা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েও রোগীদের সেবা দিতে হচ্ছে।

সোমবার রাতে দুমকি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, নার্স আয়শা তার মায়ের সাহায্য নিয়ে হুইল চেয়ারে বসে হাসপাতালে ভর্তিকৃত রোগীদের সেবা দিচ্ছেন।

নার্স আয়শা  বলেন,গত ১২ নভেম্বর নিজ বাসার সিঁড়ি থেকে পড়ে আমার বাম পা ভেঙ্গে গেলে কর্মস্হল দুমকি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হই।দুর্ঘটনা পা ভাঙলেও আমি হুইল চেয়ারে বসতে পারি, রোগীদের সাথে কথা বলতে পারি, রোগীদের কাছে যেতে পারি, রোগীদের চিকিৎসা দিতে পারি। এই বিবেচনার দিক থেকে হাসপাতালে ভর্তি থাকার কারণে ২৪ ঘন্টা আমি হাসপাতালে থাকছি, আমার বিশেষ কোন অসুবিধা হচ্ছে না বলে আমি নিজ দায়িত্বে আমার পেশার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে, আমি আমার দেশের মানুষের প্রতি এবং রোগীদের প্রতি আন্তরিক হয়ে সর্বোপরি সরকারের প্রতি দায়বদ্ধতা দিক থেকে আমি এ সেবা দিয়ে যাচ্ছি ।

আয়শা  বলেন,এ কাজের পেছনে আমার মা আমার সাথে আছে, আমার সেবা যত্ন করছেন এবং আমাকে সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করছেন। অন্যান্য রোগীদের লোকজন তারাও আমার প্রতি খুবই সহকর্মী আমার বিভিন্ন কাজে চলাফেরায় খাবারে তারা আমাকে যথেষ্ট সহযোগিতা করছেন। আলহামদুলিল্লাহ আমার কোনো অসুবিধা হচ্ছে না আমি আমার প্রশান্তির দিক থেকে মনের দিক থেকে আমি এ কাজ করছি। এ কাজে আমার আন্তরিকতায় কোনো ঘাটতি নেই।

দুর্ঘটনায় আহত হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগী কামাল হোসেন বলেন, সিস্টার নিজে আহত হয়ে হুইল চেয়ারে করে আমাদের যেভাবে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তাতে আমরা তার প্রতি কৃতজ্ঞ। দুমকি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টিএইচও মীর শহীদুল ইসলাম শাহীন বলেন, তিনি অসুস্থ হয়েও যেভাবে রোগীদের সেবা দিচ্ছেন- সেটি একটি ভাল দিক।

বরিশালের মেয়ে আয়শা সেন্ট আলফ্রেডস হাইস্কুল থেকে ২০০৬ সালে এসএসএসসি ও আখতার হোসাইন চৌধুরী মেমোরিয়াল ডিগ্রি কলেজ থেকে ২০০৮ সালে এইচএসসি কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন। এরপর ভর্তি হন বরিশাল নার্সিং কলেজে। ২০১২ সালে তিনি ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সায়েন্স অ্যান্ড মিডওয়াইফারিতে ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর ২০১৪ সালে রাজশাহী ইউনিভার্সিটির অধীনে নার্সিং কোর্সে পোস্ট বেসিক ডিগ্রি লাভ করেন। ২০১৭ সালে ডেফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে পাবলিক হেলথে ডিগ্রি অর্জন করেন।কর্মজীবনে তিনি এপোলো হাসপাতালের সিনিয়র নার্সিং অফিসার, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে সিনিয়র ফ্যাকাল্টি ও ল্যাবএইড হাসপাতালের মাস্টার ট্রেইনার অব নার্সিং পদে সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন।

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts