অলোক আচার্য : রবীন্দ্রনাথ ভালোবেসে সোনা রং এই ফুলটির নাম দিয়েছিলেন ‘অমলতাস’। যদিও নামটা সকলের কাছে সুপরিচিত নয়। কিন্তু যদি বলি আমি সোনালু ফুলের কথা বলছি তাহলে সকলেই চিনবেন।
গ্রীষ্মের প্রচন্ড খরতাপে পরিশ্রান্ত দুপুর। বাইরে বের হওয়াটাও যেন দুঃসাধ্য! বাইরের সুনসান নিরবতার মধ্যে হালকা বাতাসে দোল খায় সোনালু ফুল। তপ্ত রাস্তায় হেঁটে যাওয়া পথিকের দৃষ্টি একটু সময়ের জন্য হলেও কেড়ে নেয় সোনালু ফুলের সৌন্দর্য। কি অপূর্ব রুপ! এ যেন একজন সদ্য যৌবনে পা রাখা বালিকা রাজকন্যা। কার এত সাধ্য আছে তার থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখে। ছুটির দিনের দুপুরে তাই ছুটলাম সেই রাজকন্যাকে মোবাইলের ক্যামেরায় বন্দী করতে! শুধু সোনালু নয় বন বিভাগের হরেক রকমের লাগানো গাছের মধ্যে রয়েছে মায়াবতী জারুলও। তবে স্থানীয়ভাবে পরিচিত সোনালু ফুল শেষে এক ধরনের লম্বা লাঠিতে পরিণত হয়। একে স্থানীরা বাঁদর লাঠি বলে থাকে। সোনাইল গাছের বৈজ্ঞানিক নাম Cassia Fastula। এর ফল লম্বা লাঠির আকৃতির হয়ে থাকে যা বানরের বিশেষ খাবার হিসেবেও পরিচিত। শক্ত ফলের কারণে গাছের নাম হয়েছে বাঁদরলাঠি। তবে যে নামেই ডাকি কাঁচা সোনার মত যার রং তাকে সোনালু নামে ডাকলেই যেন বেশি তৃপ্তি পাওয়া যায়।
এবার আসি জীবনানন্দ দাশের জারুল গাছের কথায়। রাস্তার পাশে আরও একটি গাছের দেখা পেলাম। নাম তার জারুল। এই বৃক্ষের নাম জারুল আর এর ফুল জারুল ফুল নামে পরিচিত। আমরা যখন বসন্তকালের ফুলের রুপে মুগ্ধ হই তখন জারুল তার সমস্ত শোভা নিয়ে গ্রীষ্মের ফোঁটে। জারুল ফুলের মূল বৈশিষ্ট্য হলো বেশিরভাগ ফুল যখন বসন্তে পাঁপড়ি মেলে দেয়, সৌন্দর্য ছড়ায় তখন জারুলের সময় হলো গ্রীষ্মকাল। খটখটে রৌদ্রে জারুল ফুল পাঁপড়ি মেলে। শরৎ পর্যন্ত এই ফুল থাকে।
জারুল গাছ নিম্নাঞ্চলে যেমন জন্ম নেয়, বেড়ে ওঠে সেভাবেই শুকনো এলাকাতেও বেড়ে ওঠে। বসন্ত এলে জারুল গাছ নতুন প্রাণ পায়। নতুন পাতা, শাখা-প্রশাখায় ভরে ওঠে। বেগুনি রঙের থোকা থোকা ফুল ফোটে গাছের শাখার ডগার দিকে। একসাথে অনেকগুলো ফুল থাকে। প্রতিটি ফুলে ছ’টি পাঁপড়ি থাকে। জারুলের পাতাগুলো বেশ লম্বা ধরনের। এর বৈজ্ঞানিক নাম লেজারস্ট্রমিয়া স্পেসিওজা। এই সোনালু-জারুলের দেশে পথিকের বেশে মধ্য দুপুরে একটু ঘুরতে কার না ভালো লাগে!