আইপিএলকে ঘিরে কক্সবাজারে জুয়া জমজমাট

জুয়ায় অংশগ্রহণ করে কেউ রাতারাতি পকেট ভারি করছেন। আবার কেউ হচ্ছেন সর্বশান্ত। চলমান ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগকে  (আইপিএল) ঘিরে কক্সবাজার শহরের অলিতে গলিতে সকাল—সন্ধ্যা চলছে জমজমাট জুয়া।

‘এই ওভারে ৮ রানের বেশি নিতে পারবে না ব্যাটসম্যান। বাজি ১ হাজার টাকা! স্ট্রাইকে থাকা ব্যাটসম্যান ওই ওভারে ৮ রানের বেশি নিতে পারলে ১ হাজার টাকা চলে যাবে অন্যের পকেটে।’  শুধু ১ হাজার নয়, খেলার বিভিন্ন অংশ নিয়ে এরকম হাজার ও লাখ টাকার বাজির নামে জুয়া চলছে কক্সবাজারে।

জুয়ায় জড়িয়ে পড়ছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। তরকারি বিক্রেতা, নাপিত, হোটেল কর্মচারী, রিকশাচালক, দোকানি, বেকার, ফল বিক্রেতা, বিভিন্ন পরিবহনের শ্রমিক (হেলপার ও কন্ডাক্টর) নির্মাণ শ্রমিক, স্কুল—কলেজ পড়ুয়া যুবকসহ জড়াচ্ছেন জুয়ায়। এমনকি যারা নিরক্ষর তারাও বাজি ধরছেন আইপিএল ক্রিকেট খেলায়। ফলে মাদকের পাশাপাশি জুয়ার টাকা জোগাতেও শহরে চুরি—ছিনতাই বেড়ে গেছে।

পরিচয় গোপন করে শহরের পাহাড়তলী হালিমাপাড়া এলাকার কয়েকজন জুয়াড়িদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জুয়ার টাকা জোগাড় করতে তারা অপকর্মে না জড়ালেও  কিছু জুয়াড়ি জুয়ার টাকা জোগাতে গিয়ে চুরি ও ছিনতাইয়ের মতো বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে। সার্কিট হাউস সড়ক দিয়ে সন্ধ্যা বেলায় চলাচল করা পথচারীদের জিম্মি করে টাকা ও মূল্যবান জিনিসপত্র কেড়ে নেয় অনেকে।

শহরের রুমালিয়ারছড়ার বাঁচামিয়া ঘোনা এলাকার কয়েকজন যুবকের সাথে কথা বলে জানা যায়, আইপিএল ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র প্রতিদিন জুয়ার আসর হয় ওই এলাকায়। পুলিশের টহলকে ফাঁকি দিয়ে প্রতিনিয়ত জুয়ার আড্ডায় মেতে ওঠে জুয়াড়িরা।

এসব এলাকা ছাড়াও কক্সবাজার শহরের বাস টার্মিনাল, আলীর জাঁহাল, টেকপাড়া, বার্মিজ মার্কেট, বাজারঘাটা, পাহাড়তলী, বউ বাজার, বাহারছড়া, মোহাজেরপাড়া,  সার্কিটহাউস, কলাতলী, সুগন্ধা, সমিতিপাড়া, কুতুবদিয়াপাড়া এবং নুনিয়ারছরা এই অঞ্চলগুলোতে  আইপিএল নিয়ে প্রতিদিন জুয়ার আসর বসে।

এদিকে ক্রিকেট জুয়ার হার—জিতকে কেন্দ্র করে পারিবারিক ও সামাজিক অস্থিরতা বাড়ছে। ক্রিকেট প্রেমিক যুব সমাজের মাঝে বিরাজ করছে এক ধরনের ক্রিকেট উন্মাদনা। সেলুন, ক্লাব, পাড়া—মহল্লা ও খোলা জায়গাসহ বিভিন্ন স্থানে এই ক্রিকেট জুয়া এখন চলছে বেপরোয়াভাবে। জুয়াড়িরা উড়াচ্ছেন লাখ লাখ টাকা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক টেকপাড়ার এক যুবক জানান, গত ৩—৪ বছর ধরে তিনি ক্রিকেট খেলা নিয়ে বাজি ধরে আসছেন। এটি ঘরোয়াভাবে বা সরাসির লেনদেনের মাধ্যমে করতেন তিনি। কিন্তু এখন ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বাজি ধরেন তিনি। চলমান আইপিএলেও মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ও ওয়েবসাইটে বাজি ধরে যাচ্ছেন তিনি। তবে ভবিষ্যতে বিরাট ক্ষতির কথা চিন্তা করে তিনি আস্তে আস্তে জুয়া খেলা ছেড়ে দিবেন বলে জানান।

মোহাজের পাড়ার একজন অভিভাবক জানান, তার অনার্স পড়ুয়া ছেলে আইপিএলে বাজি নিয়ে অনেক টাকা খরচ করে ফেলেছে।  মা—বাবার কাছ থেকে প্রতিনিয়ত টাকা নিয়ে বাজি ধরে। টাকা দিতে না পারলে বাড়িতে মেজাজ হারায় সে।

কক্সবাজার জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন জানান, খেলাধুলা মনে প্রশান্তি জোগায়। খেলা উপভোগকে জুয়া কিংবা বাজিতে নিয়ে গেলে তখন প্রশান্তিটা থাকে না।  সব সময় দুশ্চিন্তা থাকে বাজির টাকার জন্য। এছাড়া জুয়া মানুষকে পথে নামিয়ে দেয়। এরকম অনেক প্রমাণ আছে। জুয়াড়িরা জুয়ার টাকা জোগাড় করতে অন্যের বিরাট ক্ষতি করতেও চিন্তা করে না।  জুয়ার টাকার জন্য চুরি—ছিনতাই ও খুনখারাবির মতো জঘন্য কাজ করতে পারে তারা। কাজেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর তৎপরতা এসব অসামাজিক কার্যকলাপ বন্ধ করতে পারে।

কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুনীর উল গীয়াস বলেন, ‘অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। জুয়া বা চুরি—ছিনতাই করে কেউ পার পাবে না। জুয়া কিংবা যেকোন অপরাধ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সমাজে বিশৃঙ্খলাকারীদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে’।

জুয়া বন্ধে বিভিন্ন স্থানে নিয়মিত অভিযান চালানো হবে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts